Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

পরিকল্পিত নাশকতা না দুর্ঘটনা

প্রিন্ট সংস্করণ॥আব্দুল লতিফ রানা

মার্চ ২৯, ২০১৯, ০৭:৪৯ পিএম


পরিকল্পিত নাশকতা না দুর্ঘটনা

রাজধানীর নিমতলী, চুরিহাট্টা, সাভারের ইস্পাকট্রামহ ও বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শক্তিশালী তদন্ত কমিটি করা হলেও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফলে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুর মিছিল কেবল বাড়ছেই। বনানীর এফআর টাওয়ারের জমির মালিক ও ডেভেলপার কোম্পানির দ্বন্দ্বের কারণেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত বা নাশকতা কি না— সে বিষয়ে একাধিক তদন্ত কমিটি তদন্তে নেমেছে। তবে ভবনের মালিক আগে থেকেই এই টাওয়ারে নাশকতার আশঙ্কা করেছিলেন। এমনি আশঙ্কার কথাসহ ভবন নির্মাণের নানা ত্রুটি ও অবৈধ দখলদারদের তথ্য উল্লেখ করে ভবনটির নিচ তলায় একটি ‘জরুরি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি’ লাগিয়েছিলেন তিনি। ওই বিজ্ঞপ্তিতে ভূমি মালিকের বিস্তারিত পরিচয় উল্লেখ না করা হলেও ভবনটি নির্মাণের বিভিন্ন অনিয়মসহ ভূমিদাতা ও ডেভেলপার কোম্পানির মধ্যে বিরোধের বিষয়টি উঠে আসে। বিজ্ঞপ্তিতে বিশৃঙ্খলা, নাশকতা, ভবনের ক্ষতিসাধন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ নানা আশঙ্কার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।ওই বিজ্ঞপ্তিটিতে ভবন নির্মাণের নানা অনিয়মের কথা বর্ণনা করে বলা হয়েছে— রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) থেকে সমপ্রতি পাঠানো চিঠি অনুযায়ী রাজউকের নির্মাণসংক্রান্ত বিধিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে তার জমির ওপর এফআর টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। এর ওপর অবৈধভাবে অধিক উচ্চতায় ভবন নির্মাণ করার ফলে রাজউক থেকে সমপ্রতি একটি নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে অবৈধ উচ্চতা সংশ্লিষ্ট অংশটি অপসারণ করে ভবনটিকে বৈধ উচ্চতায় ফিরিয়ে আনার জন্য রাজউকের নোটিসে নির্দেশনা দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, রাজউকের নির্দেশনা মোতাবেক উল্লিখিত অবৈধ নির্মিত উচ্চতা অপসারণ কার্যক্রমের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু অতীব দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, আইনগত দখলদার এবং প্রকৃত ল্যান্ড ডোনারের অনুমতি ছাড়া ছাদে অবৈধ স্থাপনা (কথিত ব্যারাক) নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনের নিত চলায় টানানো বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘রাজউকের চিঠির ব্যত্যয় ঘটিয়ে জনৈক তাসভীর উল ইসলাম (কাশেম ড্রাইসেলের মালিক) এফআর টাওয়ারের ২১, ২২ ও ২৩ তলাসহ অবৈধভাবে দখল করে আছেন। এজন্য তিনি একজন অবৈধ দখলদারও বটে।’ আর রাজউকের নির্দেশনা অনুসারে ভবনের উচ্চতাসংশ্লিষ্ট অবৈধ স্থাপনা অপসারণের কাজে যাতে কোনো ধরনের বিঘ্ন না ঘটে, সে জন্য ছাদের অবৈধ স্থাপনা বা কথিত ব্যারাক ভবনের ২১, ২২ ও ২৩ তলার অবৈধ দখলদার তাসভীর উল ইসলামকে তার সব আসবাবপত্র ও মালামাল আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খালি করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ওই নোটিসে শঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, ‘উপরোল্লিখিত সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যেকোনো পদক্ষেপ থেকে কোনোরূপ বাধা-বিপত্তি বা কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হলে অথবা অত্র ভবনের অন্য কোনো অংশের ক্ষতিসাধন বা কোনোরূপ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ধ্বংস করা হলে, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনের আশ্রয় নেওয়া হবে।’রাজউক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভবনটি নির্মাণে ডেভেলপার কোম্পানি ও ভূমি মালিকের সঙ্গে বিরোধ ছিল। ডেভেলপার কোম্পানি মালিকের কথা না মেনে অবৈধভাবে বাকি ফ্লোরগুলো নির্মাণ করে। এর মধ্যে কাশেম ড্রাইসেলস লিমিডেট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাসভীর উল ইসলাম কোম্পানির নামে ফ্লোরগুলো দখল করে রেখেছেন। একাধিকবার তাদের নোটিস করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।এবিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আব্দুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘রাজউকের পক্ষ থেকে ভবন সংশ্লিষ্টদের একাধিকবার নোটিস দেওয়া হয়েছে। আর অবৈধ অংশ ভেঙে ফেলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা এর সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের বের করে আইনের আওতায় আনবো। প্রয়োজনে অবৈধ অংশ ভেঙে ফেলা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।গতকাল সকালে বনানীর কামাল আতার্তুক এভিনিউয়ের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থলে সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভবনটির ২১, ২২ ?ও ২৩ তলা কাশেম ড্রাইসেলস নামে একটি কোম্পানি দখল করে রেখেছে। ওই তলাগুলোতে তাদের নিরাপত্তা কর্মীদের জন্য ব্যারাক তৈরি করা হয়েছে। এই কোম্পানিটি কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। এ কোম্পানির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম। আর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছেন তাসভীর উল ইসলাম। আর কোম্পানির পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন ড. রেয়ান আনিস ইসলাম, নাফিসা কাশেম, সামিদ কাশেম ও তারিক আবুল আলা। কাশেম ড্রাইসেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।ভবনে কর্মরত একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভবনের নিচের বিজ্ঞপ্তিটি পড়ে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট বোঝা যায়। সেটা হচ্ছে— ভবনটি অবৈধ উচ্চতায় নির্মাণ করা হয়েছিল। রাজউক কয়েক বছর ধরে তাদের অবৈধ অংশ অপসারণ করে বৈধ উচ্চতায় নিয়ে আসার নোটিস দিয়েছিল। কিন্তু তা মানা হয়নি। তবে নোটিস উপেক্ষা করা সত্ত্বেও রাজউক তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এই ভবনের জমির মালিক এবং ডেভেলপার কোম্পানির মধ্যে বিরোধ ছিল। মালিকের কথা না মেনে ২১, ২২ ও ২৩ তলা অবৈধভাবে নির্মাণ করে অন্য কেউ দখল করেছিল। বিজ্ঞপ্তিতে যে আশঙ্কার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে প্রশ্ন হচ্ছে অগ্নিকাণ্ডের দুর্ঘটনা পরিকল্পিত ঘটনা নয় তো?’

রাজউক চেয়ারম্যানকে খুঁজছেন পূর্তমন্ত্রী
এদিকে এফআর টাওয়ারের নকশা ও ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া রাজউক চেয়ারম্যান এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শম রেজাউল করিম জানিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি একথা বলেন।মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তথ্য পেয়েছি ১৯৯৬ সালে এ ভবনটি ১৮তলা নির্মাণের জন্য প্ল্যান করা হয়। কিন্তু ২০০৫ সালে এসে ভবন মালিক কর্তৃপক্ষ একটা কপি দাখিল করেন যে, ভবনটি ২৩ তলা হয়েছে। আর সেটাকে সন্দেহ হওয়ার কারণে তদন্ত করা হয়। সেই তদন্তে জানা যায়, যে কপি তারা দাখিল করেছেন সে সম্পর্কে রাজউকের রেজিস্ট্রারে কোনো তথ্য নেই। কাজেই পরে তারা যে নকশা দাখিল করেছেন সেটা সঠিক নয়, মূল অনুমোদিত নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে তারা এ ভবন নির্মাণ করেছেন। এসব কারণে সেই সময়ের রাজউক চেয়ারম্যান ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। এই নকশা অনুমোদনের সময় কোনো ব্যত্যয় ঘটেছে কিনা ও মূল নকশা ছাড়া এটা তৈরি হয়েছে কিনা, হয়ে থাকলে এর সঙ্গে কারা জড়িত, সবার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা এ ঘটনায় জড়িত সেই নরপিশাচদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ভবনটির মালিক একজন প্রকৌশলী। তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেসব প্রকৌশলী এই ভবন নির্মাণের সঙ্গে জড়িত তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। আর তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হবে এবং প্রয়োজনে এই ইমারত ভেঙে ফেলা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।ডিএনসিসি মেয়র আতিক : দুর্ঘটনার দায়িত্ব ভবন মালিককে নিতে হবেএফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে অবশ্যই নিরাপত্তার দায়িত্ব ভবন মালিককে নিতে হবে।গতকাল শুক্রবার বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিয়ে এফআর টাওয়ার পরিদর্শনে এসে মেয়র এসব কথা বলেন। মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, সিটি কর্পোরেশন ও রাজউকের কাজের মধ্যে সমন্বয় নেই। আর এ সমন্বয়হীনতার কারণে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এখন থেকে আমরা অ্যাকশনে নামব। সিটি কর্পোরেশন বহুতল ভবনের আনুষঙ্গিক কাগজপত্র রাজউকের কাছে চেয়ে পাঠিয়েছে। ১০ দিনের মধ্যে সব ভবনকে কাগজপত্র দিতে হবে। এসব হাতে পেলে ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান শুরু করবে। অবশ্যই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অফিসগুলোকে জানতে হবে তারা যেখানে অফিস নিচ্ছে সেখানে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা আছে কি না। আর এখন থেকে নিজের নিরাপত্তা নিজেরা বিবেচনা করে দেখবেন। অফিসে ঢোকার আগে দেখে নিন, আগুন লাগলে বের হওয়ার বিকল্প পথ আছে কি না।’

ভবনে প্রচুর দাহ্য পদার্থ রয়েছে : ফায়ার সার্ভিস
অপরদিকে এফআর টাওয়ারে প্রচুর দাহ্য পদার্থ ছিল বলে ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (ডিডি) দেবাশীষ বর্ধন জানিয়েছেন। ঘটনার দিন বিকালে ভবনটিতে আগুন পরিস্থিতি সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করতে গিয়ে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এ ভবনে প্রচুর দাহ্য পদার্থ রয়েছে। ভবনের ভেতরে ডেকোরেশনগুলো বেশিরভাগই ফোম ও সিনথেটিক ফাইবার উপাদানের, যে কারণে খুব ধোঁয়া হয়েছে। ফলে কাজ করতে আমাদের বেগ পেতে হয়েছে।’

এফআর টাওয়ারে নিহতদের পরিচয়
বনানীর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ২৫ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। নিহতদের নাম-পরিচয় জানা গেছে। তাদের একজনের লাশ ছাড়া বাকি সবার লাশ স্বজন বা পরিচিতদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।নিহতরা হলেন— মো. মাকসুদুর রহমান (৩২), বাবা-মৃত মিজানুর রহমান। রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানার ১১নং আলমগঞ্জে তাদের বাসা। মো. আবদুল্লা আল মামুন (৪০), বাবা-মৃত আলহাজ আবুল কাশেম, দিনাজপুর জেলার কোতোয়ালির বালুয়াডাঙ্গা গ্রামে তাদের বাড়ি। রাজধানীর কল্যাণপুরের ১ নম্বর রোডের ১৫/৬/২ নম্বর বাসায় তারা থাকেন। মো. মোস্তাফিজুর রহমান (৩৬), বাবা-মৃত আব্দুর রশিদ মুন্সি, গ্রাম-চতরা, থানা-পীরগঞ্জ, জেলা- রংপুর। রাজধানীর মিরপুর-২-এর ২/এ/২/১৬ নম্বর বাড়িতে তিনি থাকতেন। সিএমএইচ হাসপাতালে লাশ রাখা ছিল। সৈয়দা আমিনা ইয়াসমিন (৪৮), বাবা সৈয়দ মহিউদ্দিন আহমেদ, গ্রাম-রামপাশা, পো-কেরামতনগর, থানা-কোমলগঞ্জ, জেলা-মৌলভীবাজার। বর্তমান রাজধানীর ২০৬ নম্বর কাফরুলে তিনি থাকতেন। অ্যাপোলো হাসপাতালে ছিল তার লাশ। মো. মনির হোসেন সর্দার (৫২), পিতা-মৃত মোতাহার হোসেন সর্দার, বরিশাল জেলার বিমানবন্দর থানার উত্তর কড়াপুর (সর্দারবাড়ি) তাদের বাড়ি। তিনি -৬৮৫/২ মোল্লার রোড, পূর্ব মনিপুর, মিরপুর, ঢাকা। এদের লাশ রাখা ছিল ইউনাইটেড হাসপাতালে।মো. মিজানুর রহমান, গ্রাম-কোদলা, থানা-তেরখাদা, জেলা-খুলনা। বনানীর ১৭ নম্বর রোডের হরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেস, এফআর টাওয়ারে (১০ তলা) তিনি থাকতেন। ফ্লোরিডা খানম ওরফে পলি (৪৫), স্বামী- ইউসুফ ওসমান, বাবা- আফজাল হোসেন, রূপনগর থানার ৪ নম্বর রোডের বাসা নং-২, রূপনগর হাউজিংয়ে থাকতেন। আতাউর রহমান (৬২), পিতা- মৃত হাবিবুর রহমান। মোহাম্মদপুর থানার তাজমহল রোডের বাসা-১৭/২, ব্লক-সি, বাসায় থাকতেন। এদের লাশ সিএমএইচ হাসপাতালে রাখা হয়েছিল।আর মো. রেজাউল করিম (৪০), পিতা-নাজমুল হাসান, মাতা-তহুরা বেগম, গ্রাম-দক্ষিণ নাগদা, থানা- মতলব (দক্ষিণ), জেলা-চাঁদপুর। রাজধানীর বনানীর ২৩ নম্বর রোডের ১৬ নম্বর, ফ্ল্যাট বি/টু, থাকতেন। তার লাশ কুর্মিটোলা হাসপাতালে ছিল। আহাম্মেদ জাফর (৫৯)। পিতা মৃত হাজি হেলাল উদ্দিন। নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়া তাদের বাড়ি। তার লাশ ছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। আর জেবুন্নেছা (৩০)। পিতা-আবদুল ওয়াহাব, নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ লক্ষ্মীনারায়ণপুরে তাদের বাড়ি। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের ৬৬/৩, পশ্চিম রাজাবাজারে তিনি থাকতেন। কুর্মিটোলা হাসপাতালে তার লাশ ছিল। মো. সালাউদ্দিন মিঠু (২৫)- পিতা: মো. সামসুদ্দিন, রাজধানীর রমনা থানার মগবাজার মধুবাগের ৩৪৯ নম্বর বাসায় তিনি থাকতেন। বিনা ময়নাতদন্তে নিহতের বাবাকে কুর্মিটোলা থেকে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। নোহিদুল ইসলাম তুষার (৩৫)- পিতা: মো. ইছাহাক আলী, টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর ভানুয়াবহ গ্রামে তাদের বাড়ি। বিনা ময়নাতদন্তে কুর্মিটোলা থেকে লাশ হস্তান্তর করা হয়।তাছাড়া, তানজিলা মৌলি (২৫)- স্বামী: রায়হানুল ইসলাম, বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহার বলিপুরে তাদের বাড়ি। রাজধানীর মিতালী হাউজিং, দক্ষিণ কাফরুলের ই/৩, বাড়িতে তিনি থাকতেন। কুর্মিটোলা থেকে তার লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। মো. পারভেজ সাজ্জাদ (৪৬)- পিতা: মৃত নজরুল ইসলাম মৃধা, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর বালুগ্রামে তাদের বাড়ি। কুর্মিটোলা থেকে তার লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। হীরস (৩৫)- বিগনাবাজার, শ্রীলঙ্কা। বর্তমানে রাজধানীর বনানীর বাসা নং-৭৬, রোড- ১৮, ব্লক-এ, থাকতেন। ঢাকা মেডিক্যাল থেকে লাশ হস্তান্তর করা হয়। মো. ইফতিয়ার হোসেন মিঠু (৩৭), পিতা-ইসহাক আলী। কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বানিয়াপাড়ায় তাদের বাড়ি।রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারের সিনিয়র হিসাব রক্ষক ফ্লোগাল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে তার লাশ রাখা ছিল। শেখ জারিন তাসনিম বৃষ্টি (২৫), পিতা-শেখ মোজাহিদুল ইসলাম, মা-নীনা ইসলাম, ৭৪ নম্বর বেজপাড়া, মেনরোড, যশোরে তাদের বাড়ি। তিনি খিলক্ষেত বটতলা এলাকায় থাকতেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার লাশ রাখা ছিল। মো. ফজলে রাব্বি (৩০), বাবা পিতা- মো. জহিরুল হক, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার উত্তর ভূঁইগড়ে তাদের বাড়ি। লাশ রাখা ছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। আতিকুর রহমান (৪২), পিতা-মৃত আবদুল কাদির মির্জা। শরিয়তপুর পালংয়ের পূর্ব সারেনগাঁ, শৈলপাড়ায় তাদের বাড়ি। আমতলী, মানিকদী ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকায় তিনি থাকতেন। তার লাশ রাখা ছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। আনজির সিদ্দিক আবির (২৭), বাবা- আবু বক্কর সিদ্দিক, লালমনিরহাটে তাদের বাড়ি। রাজধানীর মিরপুর পাইকপাড়ায় তিনি থাকতেন। লাশ রাখা ছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। আব্দুল্লাহ আল ফরুক (৬২), পিতা- মকবুল আহমেদ, রাজধানীর ডেমরা থানার পূর্ব বগাইব তাদের বাড়ি। তার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে হস্তান্তর করা হয়েছে।রুমকি আক্তার (৩০), স্বামী- মাকসুদুর রহমান, নীলফামারীর জলঢাকায় তাদের বাড়ি। তার লাশ রাখা ছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মো. মঞ্জুর হাসান (৪৯), পিতা-মৃত মনসুর রহমান, নওগাঁ জেলার বোয়ালিয়ায় তাদের বাড়ি। কাফরুল থানার ২৬২/২, ছাপড়া মসজিদ, ইব্রাহিমপুরে তারা থাকতেন। মো. আমির হোসেন রাব্বি (২৯)- পিতা: আউয়ুব আলী, পাবনা জেলার গাঙ্গাহাটিতে বাড়ি। খিলক্ষেত থানার ৯ নম্বর রোডের ২৩, ব্লক-এ, নিকুঞ্জ-২, থাকতেন তিনি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে তার লাশ ছিল।

অগ্নিকাণ্ডে আহত ও দগ্ধ ৫৯ জন আট হাসপাতালে ভর্তি
বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ৫৯ জন আহত ও অসুস্থ ব্যক্তি রাজধানীর আটটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোলরুম এ তথ্য জানিয়েছে। সেখানকার কর্তব্যরত কর্মকর্তারা বলেন, আহতদের উদ্ধারের পর ৯৫ জনকে রাজধানীর আটটি হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে ৫৯ জন এখনো চিকিৎসাধীন। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ঢাকা কলেজ হাসপাতালে ৩ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১২ জন, সিএমএইচ-এ ৬ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩ জন, ইউনাইটেড হাসপাতালে ২৩ জন, অ্যাপোলো হাসপাতালে ৬ জন, বনানী ক্লিনিকে ১ জন, শাহাবুদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৫ জন ভর্তি রয়েছেন।

আগেও এই টাওয়ারে আগুন লেগেছিল
গতকাল সকালে ঘটনাস্থলে ভবনের কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, এই ভবনে এর আগেও অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল। গত ২০০৮ সালের সেই আগুনের ঘটনার পর এফআর টাওয়ারের অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এবারও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড প্ল্যানিং) সিদ্দিক মো. জুলফিকার আহমেদ স্পষ্ট করেই বলেছেন, এফআর টাওয়ারে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নেই।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৮ সালের ৩১ আগস্ট এফআর টাওয়ারের বেজমেন্টে পার্কিং করা একটি গাড়িতে আগুন ধরে। এতে পুরো বিল্ডিং কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় যায়। ২৪তলা এ ভবনে আটকেপড়া অন্তত ২০ জন আতঙ্কিত হয়ে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে আহত হন। ভবনের ভেতর আটকা পড়েন প্রায় ১০০ জন। দুই ঘণ্টার চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।

অপরাধ অনুযায়ী মামলা হবে : ডিএমপি কমিশনার
আগুনের ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে অপরাধের ধরন অনুযায়ী মামলা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। এ ঘটনায় যে ব্যক্তি যে জন্য দায়ী, তার বিরুদ্ধে সেই সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা করা হবে।’ গতকাল শুক্রবার দুপুরে এফআর টাওয়ার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ভবনের মালিককে আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। এ ঘটনায় আরও লোকের দায়িত্বে অবহেলা থাকতে পারে। বেশ কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর, জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনের যথাযথ ধারায় মামলা করা হবে।’ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ১৯টি মরদেহের কথা ফায়ার সার্ভিস থেকে জানতে পারি। পরে ভবন সার্চ করে আরও ছয়টি মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। যেহেতু ফায়ারম্যান ছাড়া ভবনে আর কারো যাওয়ার অনুমতি নেই, তাই ফায়ার সার্ভিসের তথ্যের ওপরই আমাদের নির্ভর করতে হচ্ছে। এখন নিহতের মোট সংখ্যা ২৫ জন।’

রাজউক এতদিন কী করছে : আইজিপি
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, গত ১৪ বছরে রাজউক কী করেছে? ভবনটি ১৮তলা হওয়ার কথা। অথচ হয়েছে ২৩তলা। সেটাও ১৪ বছর আগে। তাহলে রাজউক এতদিন কী করেছে।গতকাল শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে এফআর টাওয়ারের কাছে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পুলিশপ্রধান একথা বলেন। এফআর টাওয়াের অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানির ঘটনায় ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ভবনের ব্যাপারগুলো দেখার কথা রাজউকের। এই ঘটনায় মামলা হবে। যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা বাদি হলে ভালো হয়। তারা রাজি না হলে পুলিশ বাদি হয়ে মামলা করবে।উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার বনানীর এফআর ২৩তলাবিশিষ্ট টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ২৪ জনকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজসহ রাজধানীর আটটি হাসপাতালে ৫৯ জন ভর্তি রয়েছেন।