Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বাঁচিয়ে তুলুন মূল্যবান জীবন

প্রিন্ট সংস্করণ॥বেলাল হোসেন

মার্চ ৩০, ২০১৯, ০৬:৪৯ পিএম


বাঁচিয়ে তুলুন মূল্যবান জীবন

আমাদের আশপাশে প্রায়ই আগুন লাগতে শোনা যায়। গত কয়েকদিনে রাজধানীতে বেশ কয়েকটি বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ঝরে যাচ্ছে বহু মূল্যবান জীবন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে এমন ঘটনা তো প্রতিনিয়তই ঘটছে। আগুন যেমন মানবজাতির অত্যাবশ্যকীয় উপাদান, ঠিক তেমনিভাবে আগুন মানুষের ধ্বংসের কারণও হতে পারে। সামান্যতম অসাবধানতায় ঘটতে পারে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা। তাই আগুন নেভাতে প্রাথমিকভাবে আমাদের কী করণীয় তা জানতে হবে। এতে নিজেকে বাঁচানোর পাশাপাশি অনেক মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব। আগুন কেন লাগতে পারে, আগুন লাগলে করণীয় এবং কিভাবে আগুন থেকে নিজেকে ও পরিবারকে নিরাপদে রাখতে হবে সে বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হলো-
আগুন বিভিন্ন কারণে লাগতে পারে। মূলত আগুন হচ্ছে নিয়ন্ত্রণের জিনিস। পর্যাপ্ত আগুন আমাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। কিন্তু আগুনের মাত্রা যখন সীমা ছাড়িয়ে যায়, যখন আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়- তখন তা আমাদের ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আগুন থেকে বাঁচতে হলে কিছু জিনিস জানা জরুরি।
আগুন কেন লাগে : আগুন বিভিন্ন কারণে লাগতে পারে, আগুন লাগার মূল কারণ দুটি। প্রাকৃতিক এবং মানব সৃষ্ট।
প্রাকৃতিক কারণ:
১) দাবানল, ২) আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, ৩) বজ্রপাত, ৪) প্রাকৃতিক জ্বালানির খনি।

মানব সৃষ্ট কারণ:
১) অসাবধানতায় জলন্ত চুলার আগুন
২) বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট
৩) জ্বলন্ত সিগারেট যত্রতত্র ফেলা
৪) বিভিন্ন দাহ্য বস্তুর সংমিশ্রণ এবং নিভে যাওয়া আগুনের কয়লা
৫) শিশুদের আগুন নিয়ে খেলা
আগুন লাগার আগে আমরা কীভাবে সচেতন হতে পারি
আগুন লাগার আগে আমাদের সচেতন হওয়া জরুরি। কারণ আগুন লেগে গেলে কিছু না কিছু ক্ষয়ক্ষতি তো হবেই। কিন্তু আমাদের সামান্য সচেতনতাই পারে আগুন লাগা প্রতিরোধ করতে। বিভিন্নভাবে সচেতন থেকে আপনি আগুন থেকে নিরাপদে থাকতে পারেন। যেমন:
১) রান্নার পর চুলা নিভিয়ে রাখুন, পর্যাপ্ত গ্যাস, জ্বালানি সীমিত ব্যবহার করুন।
২) শহর এলাকায় বেশিরভাগ আগুন লাগার ঘটনা ঘটে বৈদ্যুতিক শট সার্কিট থেকে। সুতরাং নিজ নিজ বাসার বিদ্যুৎলাইন ঠিক আছে কিনা মাসে একবার পরীক্ষা করুন।
৩) চুলার আশপাশে পাতিল ধরার কাপড় রাখবেন না।
৪) চুলার উপড়ে কাপড় শুকাতে দেয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন।
৫) কেরোসিনের বাতি ব্যবহার পরিহার করুন, প্রয়োজনে চিমনি ব্যবহার করুন।
৬) শীতকালে বিশেষ করে আগুন লাগার সম্ভাবনা বেশি। ফলে এ সময় ফায়ার সার্ভিসের নাম্বার মুখস্ত রাখুন কিংবা কোথাও লিখে রাখুন।
৭) আগুন যদি লাগে তবে অবশ্যই ফায়ার সার্ভিসে খবর দিবেন। তবে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়ার পর তারা আসতে লাগলে এ সময় অবশ্যই নিজেরা হাতের কাছে যা আছে তাই নিয়ে আগুন নেভাতে চেষ্টা করুন।
৮) আগুন লাগলে সমন্বয়ের মাধ্যমে তা নিভিয়ে আনার চেষ্টা করুন, কখনোই হুড়োহুড়ি করবেন না। সবার মাথা ঠাণ্ডা রাখার মাধ্যমে আগুন নিভিয়ে আনার চেষ্টা করুন।
৯) বাসায় সব সময় এক বালতি পানি রাখুন।
১০) বিদ্যুতের কারণে আগুন লাগলে সেখানে হুট করে পানি দিবেন না একই সাথে চুলার তেলে আগুন লাগলেও পানি দিবেন না এতে ক্ষতির সম্ভাবনা অনেক গুণ বেড়ে যাবে। এসব ক্ষেত্রে বালির প্রয়োগ করুন। বিদ্যুৎলাইন, গ্যাসলাইন বন্ধ করার ব্যবস্থা করুন।
১১) এতকিছুর পরও যদি শরীরে আগুন লেগে যায় তবে ছুটাছুটি এবং না দৌড়িয়ে মাটিতে কিংবা ফ্লোরে গড়াগড়ি দিন এতে আগুন নিভে যাবে। আগুন নিয়ে দৌড় দিলে তা আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের পরামর্শ
দেরি না করে নিকটস্থ ফায়ার স্টেশনে সংবাদ দিন অথবা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে (০২-৯৫৫৫৫৫৫/০১৭৩০৩৩৬৬৯৯) জানান।
শুরুতেই আগুন নেভানোর চেষ্টা করুন। বহনযোগ্য অগ্নিনির্বাপণী যন্ত্র ব্যবহার করুন। বৈদ্যুতিক লাইনে বা যন্ত্রপাতিতে আগুন ধরলে পানি ব্যবহার করবেন না। বহনযোগ্য কার্বন ডাই-অক্সাইড বা ড্রাইকেমিক্যাল পাউডার এক্সটিংগুইসার ব্যবহার করুন। এগুলো না থাকলে শুকনো বালি ব্যবহার করুন। তেল জাতীয় পদার্থের আগুনে পানি ব্যবহার বিপজ্জনক। এক্ষেত্রে বহনযোগ্য ফোমটাইপ ফায়ার এক্সটিংগুইসার বা শুকনো বালি বা ভেজা মোটা কাপড় কিংবা চটের বস্তা দ্বারা চাপা দিন। গায়ে বা পড়নের কাপড়ে আগুন ধরলে মাটিতে গড়াগড়ি করুন।
সব শেষে আগুন যদি লেগে যায় তবে পরিবারের সবাইকে নিয়ে মাথা ঠাণ্ডা রেখে আগে নিরাপদে দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করুন। আশপাশের মানুষের সহায়তা চান। আগুন লাগলে হুড়োহুড়ি না করে শান্ত থেকে সিদ্ধান্ত নিন, উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগান।