Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

ভোটের পর আওয়ামী লীগে কাউন্সিল উত্তাপ

প্রিন্ট সংস্করণ॥আসাদুজ্জামান আজম

এপ্রিল ৪, ২০১৯, ০৬:০৯ পিএম


ভোটের পর আওয়ামী লীগে কাউন্সিল উত্তাপ

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঘরে ও মাঠে জাতীয় কাউন্সিল নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ক্রমশই ডালা মেলছে। দলটির তৃণমূল থেকে কেন্দ্র সর্বত্র চলছে নানা গুঞ্জন। তবে এখনই কাউন্সিল নিয়ে তোড়জোর করবে না কেন্দ্রীয় নেতারা। চলমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর জাতীয় কাউন্সিল নিয়ে কাজ শুরু হবে। অর্থাৎ আসন্ন রমজানের ঈদের পর আ.লীগের কাউন্সিল উত্তাপ মাঠে ছড়াবে।তথ্য মতে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিল আগামী অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলন করার ইচ্ছা পোষণ করে প্রস্তুতি নিতে সিনিয়র নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। দলীয় প্রধানের নির্দেশনার পর কাউন্সিল নিয়ে তৎপরতা শুরু করেছেন নেতারা। যার আমেজ তৃণমূল পর্যায়েও পড়েছে। গত ২৯ মার্চ দলের প্রেসিডিয়াম সভায় জাতীয় কাউন্সিল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় কাউন্সিল সফল করতে ৮ বিভাগে ৮টি টিম গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। টিমের সদস্য কারা থাকবেন, তাও আলোচনা হয়েছে। আজ দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সভায় ৮টি টিমের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। চলমান উপজেলা নির্বাচনের পাঁচ ধাপের মধ্যে চারটি ধাপ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ঈদের পর অনুষ্ঠিত হবে পঞ্চমধাপের ভোটগ্রহণ। তাই এখনই জাতীয় কাউন্সিল নিয়ে তোড়জোর করা হবে। পঞ্চম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের পর পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিয়ে কাউন্সিল সফল করতে মাঠে নামার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, দলের সভাপতি শেখ হাসিনা সম্মেলনের ব্যাপারে তার সম্মতির কথা জানিয়েছেন। তিনি (শেখ হাসিনা) যথাসময়েই সম্মেলন চান। নেতাকর্মীরাও সম্মেলনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। উপজেলা নির্বাচনের পর সম্মেলনের জন্য পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করা হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো নিশ্চুপ থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাজনীতির মাঠ চাঙ্গা করে রাখছেন। একের পর এক ইস্যুর কারণে গোটাদেশ ক্ষমতাসীনদের দিকে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের তৃণমূল রাজনীতি এখন তুঙ্গে। প্রধান বিরোধী পক্ষ বিএনপি নির্বাচনে না আসার সিদ্ধান্তে নিজ দলের মধ্যে অনেকটা উন্মুক্ত নির্বাচনি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এমন সময়ে জাতীয় কাউন্সিলের ঘোষণা দলটির রাজনীতিতে নতুন উত্তাপ এনেছে। সূত্র মতে, জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণা আসার পরপরই কর্মপরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিভাগীয় টিম গঠনের পর সম্মেলন সফল করতে বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছেন। তবে তার আনুষ্ঠানিতা শুরু হবে উপজেলা নির্বাচনের পর। উদ্যোগ নেয়া হবে মেয়াদ উত্তীর্ণ জেলা ও উপজেলা কমিটির সম্মেলনের। বিশেষ করে যেসব জেলারয় কমিটির নেতৃত্ব নিয়ে মতবিরোধ আছে, সেসব জেলার সম্মেলন শেষ করতে সভাপতি শেখ হাসিনা কড়াকড়ি নির্দেশনা দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাচনের পরপরই ওই জেলা সম্মেলনের উদ্যোগ নেয়া হবে। এরপর শুরু হবে জাতীয় সম্মেলনের মূল কাজ। জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিসহ বিভিন্ন উপ-কমিটি গঠনের মাধ্যমে গোটা দেশ কাউন্সিল উত্তাপে আনা হবে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, জাতীয় কাউন্সিল কেন্দ্র করে টিমের খসড়া প্রস্তুত করেছি। কালকের (আজ) দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সংযোজন- বিয়োজন শেষে টিম চূড়ান্ত করা হতে পারে। তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনের পর মেয়াদ উত্তীর্ণ জেলা ও উপজেলা কমিটির সম্মেলনের উদ্যোগ নেয়া হবে। এরপর জাতীয় সম্মেলনের মূল প্রস্তুতি শুরু হবে। এদিকে, দলের কাউন্সিল ঘিরে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। কারা আসছেন নেতৃত্বে, কোন কোন পদে পরিবর্তন আসতে পারে, তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন চলছে। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত মাসে হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি বর্তমানে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থা অনেকটা নাজুক হয়ে পড়েছে। সেক্ষেত্রে সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা তার পক্ষে কঠিন হবে বলে মনে করছেন একাধিক নেতা। আর এসব বিবেচনায় সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন তারা। তবে সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী হওয়া নিয়ে কেউ মুখ না খুললেও নানা ধরনের গুঞ্জন চলছে। অসমর্থিত সূত্র মতে, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, মাহবুবউল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানকের নাম সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে গুঞ্জন বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক ও আফম বাহাউদ্দিন নাছিমকে ঘিরে।দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, হালের রাজনীতি সামনে রেখে সম্মেলন কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দলীয় গঠনতন্ত্র সংশোধন-সংযোজনসহ ঘোষণাপত্রে পরিবর্তন আসতে পারে। উন্নত বাংলাদেশ গঠন ও বিশ্ব পরিমণ্ডলে নিজেদের জানান দিতে আগামী কাউন্সিলে ঢেলে সাজাতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন কমিটিকে ঢেলে সাজাতে কেন্দ্রীয় কমিটি স্থান দেয়া হবে, দলের জন্য নিবেদিত, পরীক্ষিত ত্যাগী নেতাদের। একই সঙ্গে এগিয়ে আনা হতে পারে, মেধাবী, সৎ, একঝাঁক তরুণ নেতাকে। সূত্র জানায়, টানা দশ বছর ক্ষমতায় থাকার কারণে অনেক এলাকায় নেতাকর্মীদের কোন্দল ও রেষারেষিতে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই তৃণমূলসহ কেন্দ্র শক্তিশালী করতে জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে সরকার ও দলের মধ্যে ভারসাম্য আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনেক নেতা সরকার ও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকায় তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা কম গেছে। এ জন্য দল ও সরকারের মধ্যে স্পষ্ট সীমারেখা টানতে দলের গুরুত্বপূর্ণদের সরকারে না রাখার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হতে পারে কাউন্সিলে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের মাধ্যমে অষ্টমবারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। আর প্রথমবারের মতো সাধারণ সম্পাদক হন ওবায়দুল কাদের।