Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী ‘জাহাজবাড়ি’ ভাঙা বন্ধ

প্রিন্ট সংস্করণ॥এনায়েত উল্লাহ

এপ্রিল ৪, ২০১৯, ০৬:১৪ পিএম


চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী ‘জাহাজবাড়ি’ ভাঙা বন্ধ

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলো বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অবহেলা অযত্নের কারণে অধিকাংশ ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবার কিছু কিছু স্থাপনায় শকুনের চোখ পড়েছে। কারণে অকারণেই ভাঙা হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলো। এমনটি একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা হচ্ছে পুরান ঢাকার চকবাজারের ‘জাহাজবাড়ি’। এটি ভাঙতে একটি মহল সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। অন্যদিকে এটিকে টিকিয়ে রাখতেও চেষ্টা করে যাচ্ছেন একটি মহল। তাদের মধ্যে অন্যতম আরবান স্ট্যাডি গ্রুপ। এটিকে টিকিয়ে রাখতে ইতোমধ্যেই জিডিও করেছেন তারা। জিডি করেছেন আরবান স্ট্যাডি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম। তিনি গত শুক্রবার সন্ধ্যায় চকবাজার থানায় জিডিটি করেন। যার নম্বর ১৩২৫। জিডিতে বলা হয়েছে, গত বছর ১৩ আগস্ট (রিট নম্বর-৪৬৫৬ অব ২০১৮) সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আরবান স্ট্যাডি গ্রুপ কর্তৃক প্রণীত দুই হাজার দুইশ ঐতিহ্যবাহী ভবনের যে তালিকা রয়েছে, সেগুলো ভাঙার, পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। ৩ চকসার্কুলার রোডে অবস্থিত শতবর্ষ পুরাতন ঐতিহ্যবাহী ভবনটি ভাঙার কাজ চলছে। এই ভবনটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার (গ্রেড নম্বর ১) এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ভবনটি ভাঙার কাজ তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয় ওই জিডিতে। জিডি অনুযায়ী সরেজমিন চকবাজার থানার উপ-পরিদর্শক জাকির হোসেনের নেতৃত্বে এটি ভাঙতে নিষেধ করেন। তাদের নিষেধের প্রেক্ষিতে আপাতত ভাঙা বন্ধ রয়েছে। তিনি আমার সংবাদকে জানান, আমরা গিয়ে দেখি এটি ভাঙা হচ্ছে। ছাদের পিছনের অংশ ভাঙা শেষ এবং ছাদ ছিদ্র করা হয়ে গেছে। আমরা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কথা জানিয়ে তাদের কাজ বন্ধ করতে বলি। কারা ভাঙছিল— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিম ভাঙছেন। জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট আরবান স্টাডি গ্রুপের (ইউএসজি) করা এক রিট আবেদনের রায়ে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ২২শ ভবন না ভাঙতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই সময় বিচারপতি তারিক-উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, ঢাকা শহরে অনেক ভবন রয়েছে, যা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ও মোঘল আমলের তৈরি। এসব স্থাপনা আমাদের ইতিহাসের সাক্ষী। জাতীয় স্বার্থেই এসব ঐতিহ্য রক্ষা করা প্রয়োজন। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘জাহাজ বাড়ি’ ভবনটি তৈরি করা হয়েছে আনুমানিক ১৮৭০ সালে। ভবনের মালিক ১৯২০ সালে বদু হাজির নামে ওয়াকফ সম্পত্তি করে দিয়ে যান। তার মৃত্যুর পর তার বড় সন্তান ফেকু হাজি ভবনটির দায়িত্বে ছিলেন। তার মৃত্যুর পর ফেকু হাজির বড় ছেলে হাজি আব্দুল হক ভবনটির তত্ত্বাবধান করছেন। এবিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক (ঢাকা বিভাগ) রাখী রায় আমার সংবাদকে বলেন, আমরা গতকাল ভবনটি পরিদর্শন করেছি। এবং আপাতত ভাঙাও বন্ধ রয়েছে। পরিদর্শন প্রতিবেদন আগামী রোববার প্রকাশ করব। স্থাপনাটি সংরক্ষণে পদক্ষেপ গ্রহণ করব। অন্যদিকে আরবান স্ট্যাডি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, তিনতলা ‘জাহাজ বাড়ি’র দোতলায় রয়েছে নকশা করা রেলিং, ছাদওয়ালা টানা বারান্দা। আর পুরো অবয়বজুড়ে নানা রকম কারুকাজ। কোণাকৃতির আর্চের সারি, কারুকাজ করা কার্নিশ। কলামে ব্যবহার করা হয়েছে আয়নিক ও করিন্থিয়ান ক্যাপিটাল। তিনি আরও বলেন, পশ্চিম প্রান্তে আর্চ ও কলামের সাথেও নানারকম অলঙ্করণের ব্যবহার দেখা যায়। সব মিলিয়ে এই ভবনটিতে যে ধরনের অলঙ্করণের ব্যবহার রয়েছে, তা একে এক অনন্য মাত্রা দিয়েছে। এ ধরনের অলঙ্করণ পুরান ঢাকায় আর কোনো ভবনে দেখা যায় না। সেদিক থেকে এর নান্দনিক গুরুত্বের জন্যই ভবনটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।তাইমুর ইসলাম বলেন, ভবনটির কারুকার্জের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এটি একটি বাণিজ্যিক ভবন ছিল। সে হিসেবে ভবনটি ঢাকার সবচে পুরান বাণিজ্যিক ভবন। এর স্থাপত্য বিন্যাসই বলে দেয় ট্রেডিং হাউস হিসাবেই নির্মাণ করা হয়েছিল। সেদিক থেকেও তা সংরক্ষণের দাবি রাখে। তবে পশ্চিম মাথার দোতলার ছাদে যে নকশা ছিল, তা ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ ব্যাপারে রাজউকের তৎকালীন উন্নয়ন নিয়ন্ত্রক নূর আলম বলেন, আমি রায় হাতে পাওয়ার পরপরই উপরস্থ কর্মকর্তাকে জানিয়েছিলাম এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন আমি পরিকল্পনা বিভাগে, যে কারণে বর্তমানে কি হচ্ছে তা জানি না। চকবাজার থানার ওসি তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, এ ব্যাপারে থানায় জিডি করা হয়েছে।