Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪,

আগে ফখরুলদের শপথ পরে খালেদা জিয়ার মুক্তি!

প্রিন্ট সংস্করণ॥আবদুর রহিম

এপ্রিল ৬, ২০১৯, ০৭:১৪ পিএম


আগে ফখরুলদের শপথ পরে খালেদা জিয়ার মুক্তি!

বিএনপির শীর্ষ কয়েক নেতার আপসে সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, সেনাপ্রধানের স্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আড়াই যুগের রাজনীতিতে পাওয়া ‘আপসহীন নেত্রী, আপসহীন মা’ উপাধি ধ্বংসের পথে। সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে আবেদন করলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি সরকার বিবেচনা করবে- গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের দেয়া এ বক্তব্যের মাধ্যমে এখন প্রায় অনেকটাই ইঙ্গিত বহন করছে- খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি পাচ্ছেন। তবে তার আগে ফখরুলদের সংসদে যাওয়া নিশ্চিত করতে হবে বলে দলের একটি অংশ আমার সংবাদকে নিশ্চিত করেছেন। যদিও খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে গত কয়েকদিন পর্দার আড়ালে সরকারের সঙ্গে বিএনপির আলোচনার বিষয়টি সবার মুখে মুখে থাকলেও এখন তার গভীরতা আরও স্পষ্ট হচ্ছে। আপসে খালেদা জিয়ার মুক্তি হলে রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার প্রতিষ্ঠিত ইমেজ একেবারে নষ্ট হয়ে যাবে বলে ধারণা বিএনপির সংস্কারপন্থিদের। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুরনো কৌশলে উপরের নির্দেশেই হাঁটছে বিএনপির বড় একটি অংশ। যেমন একাদশ সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার অধীনে খালেদা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকলেও এবার খালেদাকে কারাগারে রেখে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচনে যেতে বুঝাতে সফল হয়েছে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যদিও বিএনপিকে বাঁচাতে তখন স্থায়ী কমিটিসহ বড় একটি অংশ ফখরুল সিদ্ধান্তের বিরোধী ছিলেন। তবে ফখরুল ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তারেক জিয়ার নির্দেশেই সব করছেন।আন্দোলন ও আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদাকে মুক্ত করতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় মুক্তির পথ তৈরি করেছেন ফখরুলরা। এ নিয়ে বিএনপির শীর্ষ তিন নেতার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আপসের অংশ হিসেবে সমপ্রতি কূটনৈতিকদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। সবশেষে আপসেই যদি মুক্তি মেলে তাহলে খালেদা জিয়ার প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্ব- অস্তিত্ব রাজমাঠ থেকে বিলীন হয়ে যাবে বলে দাবি করছেন খালেদা জিয়ার অনুসারী নেতাকর্মীরা।বিএনপির আরেকটি সূত্রের দাবি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছে- বিএনপি সুলতান মনসুর-মোকাব্বিরের পথ ধরে সংসদে আসুক। আর খালেদার অনুপস্থিতিতে চলমান বিএনপির নেতারাও চাচ্ছেন কোনো ধরনের ঝামেলায় না পড়তে। সূত্রের মত, ইতোমধ্যে কূটনীতিকরা বিএনপির গণতান্ত্রিক আন্দোলনের দাবি আদায়ে পাশে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে। শর্ত হিসেবে দেয়া হয়েছে বিএনপির প্রার্থীদের সংসদে যাওয়া। এদিকে ফখরুলরা সংসদে গেলে খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তির ইঙ্গিত, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা না দেয়ার ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। আপসের বিষয়টি নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের বুদ্ধিজীবী ড. এমাজউদ্দীন, সহ-আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানার কাছে দৈনিক আমার সংবাদের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে কেউ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে মন্তব্য দিতে রাজি হননি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রয়োজনে এ বিষয়ে পরে গণমাধ্যমকে জানানো হবে। ড. এমাজউদ্দীন বলেন, বাবা! আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। রুমিন ফারহানা বলেন, আপনারা এ বিষয়ে আরও দলের শীর্ষ নেতাদের পক্ষ থেকে বক্তব্য নিলে ভালো হবে। তবে এ বিষয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৮৬ সালে স্বৈরাচারী এরশাদের সঙ্গে আঁতাত করে ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগের কাণ্ডারি শেখ হাসিনা নির্বাচনে অংশ নিলেও নীতির সঙ্গে আপস করেননি খালেদা জিয়া। অটল ছিলেন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়ার অঙ্গীকারে। এই দৃঢ় ভূমিকা প্রশংসিত হয় দেশবাসীর কাছে। ২০১৪ সালে সরকারের সঙ্গে আপসে না গিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। কারাগারে যাওয়ার আগে আপসের প্রশ্ন উঠলেও তিনি সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। কিন্তু সেই নেত্রীকে হঠাৎ আপসে মুক্তির গুঞ্জনে দলের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। দলের বড় একটি অংশ এ চরিত্র ষড়যন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করছেন।বিএনপির বুদ্ধিজীবীদের একটি অংশ এ সমঝোতার মুক্তি ইঙ্গিতকে লন্ডন রাজনীতির ফাঁদ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়ে শীর্ষ নেতাদের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলে দলের বড় নীতিনির্ধারকদের বাদ দিতে আপস প্রক্রিয়াকে কৌশল হিসেবে নিয়ে এসেছেন। অনেকে এও বলছেন এবার খালেদা মুক্তি পেয়ে লন্ডনে গেলে আর দেশে আসবেন না। সেখানেই বাকি জীবন কাটানোর চিন্তা করতে পারেন। এদিকে খালেদার মুক্তির বিষয়ে গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে আবেদন করলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি সরকার বিবেচনা করবে। এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকারের পতন আসন্ন। যে কোনো মুহূর্তে বর্তমান সরকার হুড়মুড় করে পড়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি আপনাকে দিতে হবে। আপনি গায়ের জোরে তাকে বন্দি করে রেখেছেন। সুতরাং বেগম জিয়াকে মুক্তি না দিয়ে আপনার আর কোনো উপায় থাকবে না।