প্রিন্ট সংস্করণ॥আব্দুল লতিফ রানা
এপ্রিল ৬, ২০১৯, ০৭:১৮ পিএম
রাজধানীর বনানীস্থ এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় স্পেক্ট্রা এসএন টেক্সটাইলের মালিক-কর্মচারীসহ ৫ জনকে খুঁজছে পুলিশ। তিন কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও টেক্সটাইলের মালিক এবং তার ছেলেকে আটক করতে গোয়েন্দারা মাঠে নেমেছে। এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি এখনো রহস্যজনক বলে মনে করছে বিভিন্ন মহল। স্পেক্ট্রা এসএন টেক্সটাইলের অফিস এফআর টাওয়ারের ৮তলায় ছিল। আগুনের সূত্রপাতও সেখান থেকেই হয়েছে বলে তদন্ত সংস্থাসহ গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সময় তিন কর্মচারী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে তারা দ্রুত সটকে পড়েছিল বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। তবে ফায়ার সার্ভিসসহ তদন্ত সংস্থাগুলো ঘটনাস্থলে টেক্সটাইলে ব্যবহূত কেমিক্যাল, দাহ্য পদার্থসহ ১০ ধরনের আলামত সংগ্রহ করেছেন। তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (জনসংযোগ) মাসুদুর রহমান জানান, গতকাল পর্যন্ত আগে গ্রেপ্তারকৃত ২ জন ছাড়া আর কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি। এদিকে বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বনানী থানায় দায়ের করা মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি-উত্তর)। এ মামলায় দুজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— এফআর টাওয়ারের জমির মালিক এসএমএইচআই ফারুক (৬৫) ও ভবনের বর্ধিত অংশের মালিক কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সভাপতি তাসভির উল ইসলাম। তিনি কাশেম ড্রাইসেলসের সিইও। বনানী থানায় দায়ের করা মামলায় এ দুজন ছাড়াও ভবনটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুলকে আসামি করা হয়েছে।গোয়েন্দা সূত্র জানায়, স্পেক্ট্রা এসএন টেক্সটাইলের মালিক সেলিম উল্লাহ ও তার ছেলে সাকিবকে ধরতে গোয়েন্দরা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়েছে। তার মধ্যে গত বুধবার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু তাদের গ্রেপ্তার বা আটক করতে পারেনি ডিবি পুলিশ। আর স্পেক্ট্রা এসএন টেক্সটাইলের অফিসের তিনজন কর্মচারীকেও পুলিশ খোঁজ করছে। বনানীর এফআর টাওয়ারের লেভেল-৭ অষ্টম তলার এই স্পেক্ট্রা এসএন টেক্সটাইলের অফিসেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল বলে তদন্ত সংস্থা নিশ্চিত হয়েছেন। কিন্তু সেখানকার গোডাউনের কেমিক্যাল ও পাশের রান্না ঘর এবং বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ ছিল। আর আগুন লাগার প্রায় আধা ঘণ্টার পর ফায়ার সার্ভিসকে সংবাদ দেয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে ওই কোম্পানির কর্মচারীদের হন্যে হয়ে খুঁজছে গোয়েন্দা পুলিশ।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ হিসেবে শর্ট সার্কিট থেকে সূত্রপাত হয়েছে বলে সনাক্ত করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়টি আরও গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ওই তদন্তের রিপোর্ট কাল সোমবার জমা দেওয়া হতে পারে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।ফায়ার সার্ভিসের তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এফআর টাওয়ারের আট তলায় স্পেক্ট্রা টেক্সটাইলের স্টোর রুম রয়েছে। সেখানে কারখানার ব্যবহূত কেমিক্যালের নমুনা ছাড়া স্পেক্ট্রা সোয়েটার ও স্পেক্ট্রা বায়িং হাউজের পোশাকের নমুনা ছিল। ওই স্টোররুমের পাশেই ছিল রান্না ঘর। সেখানে ইলেকটিক কেটলির মাধ্যমে চায়ের পানি গরম করা হতো। শর্ট সার্কিটের কারণে সেখানেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। সেখানে স্পেক্ট্রা এসএন টেক্সটাইলের তিন কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। ওই তিন কর্মচারী আগুন নেভাতে দীর্ঘ প্রায় আধা ঘণ্টার বেশি সময় চেষ্টা চালিয়েছে কিন্তু তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। এরপর ৮ তলার ওই অফিস থেকে তারা তিনজনে নিরাপদে দ্রুত বেরিয়ে পড়েন। এরপর স্টোর রুমের কেমিক্যালের নমুনা ও তৈরী পোশাকের স্যাম্পলে আগুন ধরে ভয়ঙ্কর রূপ নেয় বলে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি এধরনের তথ্য পেয়েছেন বলে সূত্রটি জানিয়েছে। অপর এক সূত্র জানায়, বনানীর এফআর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের পর সিআইডি পুলিশের ক্রাইম সিন বিভাগ ঘটনাস্থল থেকে বৈদ্যুতিক লাইনের বোর্ড, তার, টিন ও প্লাস্টিকের বোতল, জিন্স প্যান্টের পোড়া অংশ, স্পেক্ট্রা এসএন টেক্সটাইলে তৈরি পোশাকের নমুনাসহ দশ ধরনের আলামত সংগ্রহ করেছে। আলামতগুলো তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক সেলিম উল্লাহ সেলিম ও তার ছেলে সাকিব এবং নয় তলার মালিক সৈয়দ আমিনুর রহমান পলাতক রয়েছেন বলে জানা গেছে। টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিস, স্বরাষ্ট্র ও দুদকের পক্ষে থেকে পৃথক গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তদন্ত রিপোর্টের আগে কোনো কিছুই বলা ঠিক না। তবে অগ্নিকাণ্ডের তদন্তে আমরা এফআর টাওয়ারের বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে ছবি সংগ্রহ করেছি। বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছি। আর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ ও জব্ধ করা হয়েছে। সেসব জিনিসগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। দুদকের গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে বলে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত রিপোর্ট আজ রোববার দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে বনানীতে ২৩তলা এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য বাহিনীর প্রায় ৬ ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এ ঘটনায় প্রাণ হারান ২৬ জন। ভবনের জমির মালিকসহ ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।