Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

রেকর্ড ব্যয়ে রেলের প্রকল্প

প্রিন্ট সংস্করণ॥জাহাঙ্গীর আলম

এপ্রিল ৭, ২০১৯, ০৬:১৪ পিএম


রেকর্ড ব্যয়ে রেলের প্রকল্প

*সমজাতীয় প্রকল্পের তুলনায় বহুগুণ বেশি
*ভোটের আগে ফেরত দেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী
*কাল অনুমোদন পাচ্ছে একনেক সভায়

বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ খরচে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজ করা হচ্ছে। এটা সমজাতীয় প্রকল্পের তুলনায় বহুগুণ বেশি। রেলপথ মন্ত্রণালয়ে রেকর্ড। তাই সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রীও একনেক সভায় উপস্থাপনের আগে অনুমোদন না দিয়ে ভোটের আগে প্রকল্পটি ফেরত দেন। কিন্তু ভোটের পরে আবারো রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। তাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ১০৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীনের ঋণ হচ্ছে ১০ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা। বাকি প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় করা হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি- একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য ১নং তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এটি হচ্ছে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের আখাউড়া-সিলেট সেকশনের মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজ রেললাইনে রূপান্তর’ নামক প্রকল্প। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
রেলওয়ে মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, কুলাউড়া-সিলেট রেলওয়ে সেকশনটি ১৯১৫ সালে স্থাপন করা হয়। এরপরই আখাউড়ার সঙ্গে দ্রুত ও নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে রেলপথ মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ বিশেষ আখাউড়া-লাকসাম ডুয়েলগেজ ডাবললাইন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। আর ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর চায়না রেলওয়ে ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। যাতে আখাউড়া-সিলেট সেকশনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা যায়। এ জন্য নন-বাইন্ডিং সমঝোতা স্মারক সইও করা হয়। তা বাস্তবায়ন করতে প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (পিডিপিপি) ২০১৬ সালের ২১ মার্চ অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের সবকিছু কেনাকাটার জন্য সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অবলম্বন করতে অর্থনৈতিক বিষয় সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা কমিটি ওই বছরের ১৯ অক্টোবর নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয়। এরপরই রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার জন্য তৈরি করে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়। প্রকল্পটির প্রধান কাজ ধরা হয়েছে ২৩৯ দশমিক ১৪ কিলোমিটার ট্র্যাক (রেললাইন) নির্মাণ। এর মধ্যে ১৭৬ দশমিক ২৪ কিলোমিটার মেইন লাইন নির্মাণ এবং ৬২ দশমিক ৯০ কিলোমিটার লুপ লাইন নির্মাণ করা হবে। দীর্ঘ এই রেলপথ নির্মাণে ৪৯টি মেজর এবং ২৩৭টি মাইনর ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। ২২টি স্টেশনে সিগন্যালিং কাজ করা হবে। ২০০ দশমিক ৩০ একর জমি অধিগ্রহণের কথা বলা হয়েছে। তাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭৩ কোটি টাকা। প্রকল্পটি শেষ করতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ১৬ হাজার ৬৯০ বর্গমিটারের আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্প কর্মকর্তাদের যাতায়াতের জন্য সাড়ে ৫ কোটি টাকা খরচে জিপ গাড়ি, পিক-আপ ও মোটরসাইকেলও কেনা হবে। সুপারভিশন ও পরামর্শক খরচ প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৩৬ কোটি টাকা। এছাড়া অন্যান্য কাজও করা হবে। সব মিলে প্রকল্পটির খরচ ধরা হয় ১৬ হাজার ১০৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে চীনের ঋণ ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৬৫৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আর বাকি ৫ হাজার ৪০৫ কোটি ৮ লাখ টাকা সরকারি কোষাগার থেকে খরচ করা হবে। বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত। যাচাই-বাছাই করতে পরিকল্পনা কমিশনে গত ১৯ আগস্ট প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি-পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিভিন্ন অংশের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। বিশেষ করে পরামর্শক খাতের খরচ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় সভায়। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ খাতেও ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠে। তা সংশোধন করতে বলা হয়। সংশোধিত ডিপিপিতে তেমন কিছু পরিবর্তন করা হয়নি। একনেক সভায় অনুমোদনের আগে পরিকল্পনামন্ত্রীর অনুমোদন লাগে। তাই সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামালের কাছে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হলে ভোটের আগে তিনি ফেরত দেন।সূত্র আরও জানায়, ভোটের পরে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটি আবারো অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। তাতে খরচ সামান্য কমিয়ে ১৫ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। তবে বাস্তবায়নকাল ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুন ধরা হয়। তাই আবারো যাচাই করার জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ হাজার ১০৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। প্রতি কিলোমিটারে ৬৭ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে বিদেশি ঋণ ১০ হাজার ৬৫৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা এবং সরকারি কোষাগার থেকে ৫ হাজার ৪০৫ কোটি ৮ লাখ টাকা খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এত বেশি খরচের প্রকল্পটি বাংলাদেশে এটাই প্রথম। কারণ সমজাতীয় চলমান বিভিন্ন প্রকল্পে ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়নি। আখাউড়া-লাকসাম বিদ্যমান মিটারগেজকে ডুয়েলগেজে রূপান্তরে খরচ পড়েছে ২৫ কোটি টাকা। অন্যান্য চলমান প্রকল্পের খরচও ৩০ কোটি টাকার বেশি নয়। তারা আরও বলছেন, প্রকল্পটি সপ্তম পঞ্চবার্ষিকীর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কারণ জিইডি থেকে যা প্রাক্কলন করা হয়েছে তাতে এ প্রকল্পটি আওতাভুক্ত হতে পারে না। সার্বিক ব্যাপারে জানতে গতকাল রেল সচিব মোফাজ্জেল হোসেনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।