Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

তিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে নামছে আ.লীগ

প্রিন্ট সংস্করণ॥রফিকুল ইসলাম

এপ্রিল ৮, ২০১৯, ০৬:০৮ পিএম


তিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে নামছে আ.লীগ

তিনটি চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিয়েছে ক্ষমতাসীন আ.লীগ। চ্যালেঞ্জগুলো হলো— বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন, জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে দক্ষ ও মেধাবী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং চলমান উপজেলা নির্বাচনে সৃষ্ট কোন্দল নিরসন করে দলকে তৃণমূলে শক্তিশালী করা। ইতোমধ্যে এসব লক্ষ্য বা চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নে দলের সিনিয়র নেতাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন আ.লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্দেশনা অনুযায়ী কাজও শুরু করেছেন দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতারা।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ২০২০-২০২১ সালকে মুজিববর্ষ হিসেবে উদযাপন করবে ক্ষমতাসীন দলটি। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিন থেকে মুজিববর্ষ শুরু হয়ে শেষ হবে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে। ইতোমধ্যে মুজিববর্ষ উদযাপনে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আ.লীগের বছরব্যাপী কর্মসূচি পালনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে সদস্য সচিব করে দলীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর জাতীয় অধ্যাপক ও নজরুল গবেষক রফিকুল ইসলামকে প্রধান করে উচ্চপর্যায়ের নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়। সদস্য সচিব করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্যসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীকে। দুটি কমিটির নেতৃত্বে গঠন করা হবে উপকমিটি।তথ্য মতে, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল বয়সের শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে মুজিববর্ষ উদযাপিত হবে। এ অনুষ্ঠানের সঙ্গে আ.লীগের সকল সহযোগী সংগঠনগুলোকেও যেমন সম্পৃক্ত করা হবে। দেশের জ্ঞানী-গুণী-বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে থাকবে আলাদা আয়োজন। শুধু আ.লীগ নয়, পাশাপাশি সরকারিভাবেও এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জন্মশতবার্ষিকী শিশু-কিশোরদের জন্য ঢাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কুলভিত্তিক খেলাধুলা, চিত্রাঙ্কন, নাটক, কবিতা আবৃত্তি, রচনা প্রতিযোগিতা থাকবে। কামার, কুমার, জেলেসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যাদের জন্য বঙ্গবন্ধু সারাজীবন কাজ করেছেন তাদেরও জন্য কর্মসূচি রাখবে আ.লীগ। জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতির পিতার জীবন এবং কর্ম নিয়ে বেশকিছু বইও প্রকাশের বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জাতির পিতার স্বাধিকার আন্দোলন এবং দেশের ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবে। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নে ক্ষমতাসীন আ.লীগের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দলকে নির্দেশনা দিয়েছেন। মুজিব বর্ষ উদযানের গঠিত নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্যসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করার জন্য ইতোমধ্যে দেশব্যাপি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ওই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে অনেক চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে রয়েছে। আশা করি সেসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেই জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করা হবে। এদিকে, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর আগেই দলকে নতুনভাবে সাজানোর জোর প্রস্তুতি শুরু করেছে আ.লীগ। আগামী ষ রেপর অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হতে পারে কেন্দ্রীয় আ.লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। দলের সম্মেলনের মাধ্যমে এবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে বেশকিছু নতুন মুখ উপহার দিয়ে চমক রাখতে পারেন দলটির সভানেত্রী। যেহেতু এই দলের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী। তাই এ সম্মেলনকে সফল করতে এবং ইমেজসম্পন্ন নেতৃত্ব উপহার দিতে চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছেন টানা তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা দলটি। শুধু তাই নয়, ২১তম জাতীয় সম্মেলনের আগে তৃণমূলকে সুসংহত করার অংশ হিসেবে শুরুতে বিভিন্ন জেলা উপজেলাগুলোতে শিগগিরই সম্মেলনের কাজ শুরু হবে। গত ২৯ মার্চ গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সভায় জাতীয় সম্মেলন সফলে ৮টি পৃথক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। সভা থেকে কমিটিগুলোতে কার কী ভূমিকা থাকবে, তা নির্ধারণের জন্য কয়েকজন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই বৈঠকের একদিন বাদে রোববার দলের কার্যনিবাহী কমিটির বৈঠকে কমিটিগুলোর খসড়া চূড়ান্ত করে সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা। এদিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে ক্ষমতান আ.লীগের এমপি ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের কোন্দল প্রকাশ্য রুপ নিয়েছিলো। বিশেষ করে ভোটের মাঠে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি না থাকায় ঘরের রাজনীতিতে প্রভাবশালী নেতাদের কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়ে ক্ষমতাসীন দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তবে আগামীতে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করতে ওইসব বিরোধিতাকারী এমপি ও রাজনীতিকদের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব মেটাতে নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। শুধু দ্বন্দ্ব নয়, উপজেলা নির্বাচনে আ.লীগের যেসব মন্ত্রী-এমপি এবং স্থানীয় নেতা নৌকার বিরোধিতা করেছেন তাদের শোকজের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার আ.লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাস ভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।বৈঠক সূত্র জানায়, প্রত্যেক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা স্ব স্ব বিভাগে যারা দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করেছেন তাদের তালিকা তৈরি করবেন। এ তালিকা তারা আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের হাতে দেবেন। এর মাধ্যমে তৃণমূলপর্যায়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরসন করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে সাংগঠনিক অবস্থা শক্তিশালী করতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। দলটির দলীয় সভানেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান কেন্দ্রীয় আ.লীগ থেকে শুরু করে তৃণমূল আ.লীগের সব নেতাকর্মী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী একত্রে পালন করুক। জানতে চাইলে আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালনের জন্য ইতোমধ্যে আমরা সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। জন্মশতবার্ষিকী সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পালনে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলে দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরোধিতা করেছে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট মতবিরোধ দূর করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, আ.লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে ৮টি টিম গঠন করা হয়েছে। এ টিমের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠনের সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে। তিনি বলেন, এ সম্মেলন মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মধ্য থেকে দক্ষ নেতৃত্ব ও দলকে শক্তিশালী করে আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করা হবে। সেই লক্ষে আ.লীগের সব নেতাকর্মী মাঠে কাজ শুরু করবে। প্রসঙ্গত, আ.লীগের সর্বশেষ সম্মেলন ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের মাধ্যমেই অস্টমবারের মতো সভাপতি হন শেখ হাসিনা। প্রথমবারের মতো দলের সাধারণ সম্পাদক হন ওবায়দুল কাদের।