Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

চার মহাসড়কে চালকদের জন্য নির্মিত হচ্ছে বিশ্রামাগার

প্রিন্ট সংস্করণ॥জাহাঙ্গীর আলম

এপ্রিল ১০, ২০১৯, ০৬:২১ পিএম


চার মহাসড়কে চালকদের জন্য নির্মিত হচ্ছে বিশ্রামাগার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের এক বছর পরে চারটি জাতীয় মহাসড়কে আধুনিক বিশ্রামাগার করার উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে একটি প্রকল্প তৈরি করে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। চার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। এটি বাস্তবায়ন করা হলে চালকদের ক্লান্তি ও অবসাদ দূর হবে। এতে দুর্ঘটনা অনেক কমবে। প্রায় ২৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সম্মতি দিয়েছেন। বাকি কাজ শেষ করে খুব শিগগিরই একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, কয়েক বছর থেকে সড়ক-মহাসড়কে প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। চালকদের কারণেই বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে। মালিকদের সীমাহীন লোভের কারণে চালকদের বিশ্রাম ছাড়াই ছুটতে হয় দূরপাল্লার পথে। এ অবস্থা থেকে দূরপাল্লার চালকদের রক্ষা পেতে গত ৯ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দেন, মহাসড়কে বাস এবং ট্রাক চালকদের জন্য বিশ্রামাগার তৈরি করতে হবে। এর কারণ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাশের দেশ ভারতসহ অন্যান্য দেশেও বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা আছে। আমাদের দেশে এটা এখনো চালু হয়নি। দূরপাল্লার বাস ও ট্রাকচালকরা কিছু দূর পরপর যাতে বিশ্রাম নিতে পারেন, সে জন্য বিশ্রামাগার তৈরি করে দিতে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সাসেক-০২ প্রকল্প: জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা সড়কে (এন-৪) চারলেন মহাসড়কে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। এরপরই সড়ক পরিহন ও সেতু মন্ত্রণালয় নড়েচড়ে বসে। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করে সারা দেশে জাতীয় মহাসড়কে টেকসই ও নিরাপদ মহাসড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে এবং সড়কের নিরাপত্তার উন্নয়নে একটি প্রকল্প তৈরি করে। তাতে বলা হয়েছে- ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-রংপুর এবং ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ট্রাকচালকদের জন্য আধুনিক সুবিধা সম্বলিত বিশ্রামাগার স্থাপন করা হবে। কারণ দেশের প্রধান মহাসড়কগুলোতে যাতায়াতকারী যাত্রীবাহী বাসচালক ও যাত্রীদের জন্য অল্প বিরতির ব্যবস্থা থাকলেও দূরপাল্লার ট্রাকচালকদের জন্য কোনো বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা নেই। এর ফলে ট্রাক চালকরা অনেক সময় সড়কের পাশে ট্রাক থামিয়ে বিশ্রাম নেয়। এর ফলে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া তারা দ্রুত বিশ্রাম নেয়ায় বিপজ্জনক গতিতে গাড়ি চালিয়ে গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করে। এটা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে সড়ক বিভাগের কাছে মনে হয়েছে। তাই এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে দেশের প্রধান চারটি মহাসড়কে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটা করা হলে চালকদের রাত্রী যাপনের ব্যবস্থা থাকবে। থাকবে বিনোদনেরও ব্যবস্থা। টিভি, ওয়াশরুম, চা ও কফিরও ব্যবস্থা থাকবে। যাতে চালকদের ভ্রমণজনিত ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করার মাধ্যমে স্বস্তিদায়ক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এতে ট্রাকচালকদের বিরামহীন পরিশ্রমের কারণে সংগঠিত সড়ক ও দুর্ঘটনার হারও কমে। এসব কথা বিবেচনা করে সড়ক মন্ত্রণালয় থেকে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব-ডিপিপি তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পের প্রধান কাজ হবে চারটি বিশ্রামাগারের জন্য প্রায় ৪২ বিঘা জমি অধিগ্রহণ। ২৬ হাজার ২৮০ ঘনমিটার সড়ক বাঁধ নির্মাণ করা হবে। ছয় লাখ পাঁচ হাজার ১৪৪ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন করা হবে। ৯৩ হাজার ১৬৫ বর্গমিটার রিজিড পেভমেন্ট নির্মাণ, আট হাজার ৭৬০ বর্গমিটার ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট, দুই হাজার ৫০৩ মিটার মিডিয়ান নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া তিন হাজার ১২৩ মিটার কভার আরসিসি ড্রেন নির্মাণ, তিন হাজার তিন মিটার ফুটপাথ নির্মাণ, এক হাজার ৮৬৩ বর্গমিটার দ্বিতীয় তলাবিশিষ্ট ভবনও নির্মাণ করা হবে। ২৩৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুনে বাস্তবায়ন করা হবে। সূত্র আরও জানায়, প্রকল্পটি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভূক্ত নেই। তবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রকল্পটি অনুমোদন প্রক্রিয়াকরণের জন্য সম্মতি দিয়েছেন। এরপরই প্রকল্পটি যাচাই-বাচাই করতে সম্প্রতি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি-পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বলা হয়েছে দ্বিতীয় তলা বিশিষ্ট বিশ্রামাগারে ওয়ার্কশপও নির্মাণ করা হবে। এতে খাবারের দোকান ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর দোকান রাখা দরকার। ট্রাকচালকদের পাশাপাশি অন্যান্য যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা যাতে এ সুবিধা পায় সে ব্যবস্থা রাখা দরকার। এ ছাড়া ৪৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে যে ৪০ বিঘা জমি অধিগ্রহণের কথা বলা হয়েছে তার যৌক্তিকতা কতটুকু তা বিবেচনা করা দরকার। এসব বিষয় আমলে নিয়ে সড়ক মন্ত্রণালয়কে প্রকল্পটি সংশোধন করতে বলা হয়েছে। সংশোধিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশন পেলেই বাকি কাজ শেষ করে খুব শিগগিরই একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।