Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ০৩ জুন, ২০২৫,

আরও রমণীয় হচ্ছে রমনা পার্ক

প্রিন্ট সংস্করণ॥ফারুক আলম

জুলাই ২১, ২০১৯, ০১:০২ এএম


আরও রমণীয় হচ্ছে রমনা পার্ক

 মোগল আমল এবং ঢাকার নবাবদের নৈসর্গিক পরিকল্পনার প্রত্যক্ষ ফল হচ্ছে রমনা পার্ক। রমনা শব্দটি ফার্সি থেকে এসেছে। যার অর্থ ‘সবুজ ঘাসে ঢাকা চত্বর’। এই সবুজ ঘেরা পার্কটির সঠিক পরিকল্পনা ও পরিচ্ছন্নতায় এখনো ঢাকা শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে। অপরূপ সৌর্ন্দযে ভরা পার্কের প্রতিটি স্থানেই রয়েছে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য। সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

জানা যায়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে থাকা রমনা পার্কের সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি করতে গণপূর্ত অধিদপ্তর বেশকিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সম্ভাব্য ৪৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকার দুই বছর মেয়াদি প্রকল্পে পার্কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সৌন্দর্য বর্ধনে কাজ করবে। এই প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, রমনার লেক পুনঃখনন করে এর দৈর্ঘ্য বাড়ানো ছাড়াও দর্শনার্থীদের বসার আধুনিক বেঞ্চ নির্মাণ, লেকের ওপর ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। বছরজুড়ে পানি রাখার ব্যবস্থা করা হবে। পর্যাপ্ত আলোকসজ্জা এবং ল্যান্ড স্কেপিং বনায়ন করা হবে। উন্নত দেশের মতো লেক পাড়ে নির্মাণ করা হবে উডেন ডেক।

চারপাশে সবুজের হাতছানি ও স্বচ্ছ জলের শোভা উপভোগ করা যাবে কাঠের ডেকে দাঁড়িয়ে। থাকবে পানির ফোয়ারা, লেক আইল্যান্ড। এছাড়া অত্যাধুনিক তিনটি গণশৌচাগার, ১১টি উন্মুক্ত কফি কর্নার, শিশু কর্নারে খেলার আধুনিক সরঞ্জাম ও রাইড বসানো হবে। পুরাতন ৩ দশমিক ৬ কিলোমিটার ফুটপাতের পরিবর্তে সিরামিক ইটের রাস্তা নির্মাণ করা হবে।

নগরীতে তীব্র যানজটে বাস চলছে না। ফুটপাত দখল হওয়ায় চলাচলও কঠিন হয়ে পড়ছে। ঠিক সে সময়ে সুপ্রিম কোর্টের গেটের কাছে বাস থেকে নেমে রমনা পার্কের ভেতর দিয়ে বাংলা মোটর হেঁটে যাচ্ছেন আহসান হাবিব নাহিদ নামে এক পথচারী।

তিনি বলেন, অতিরিক্ত গরম আর রোদে উত্তপ্ত ঢাকার সড়ক লোকে লোকারণ্য। শান্তিতে হাঁটা তো দূরে থাক, এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়াবারও উপায় নেই। ফুটপাত ছেড়ে রাস্তায় নেমে হাঁটতে গেলেও বিপদ। গাড়ি নয়তো মোটরসাইকেল গায়ের ওপর উঠিয়ে দেবে চালকরা।

এ অবস্থায় রমনা পার্কের ভেতর দিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। রমনার ফটকের ভেতরে পা রাখলাম পুরো দৃশ্যপট যেন পাল্টে গেল। ঠাণ্ডা হাওয়া এসে শরীরটাকে কোনো এক জাদুর বলে সতেজ করে দিয়ে গেল। এই পার্কের ভেতর দিয়ে হেঁটে যেতে যে কেউ একবার বসে শরীরটাকে স্বস্তি দেবেন।

রমনা পার্কের উন্নয়নের বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেন বলেন, সৌন্দর্য বৃদ্ধি, ঐতিহ্য সুরক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে রমনা পার্কের উন্নয়ন কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের অবসর যাপনের মুক্ত জায়গা রমনা পার্ক নতুন সাজে সাজবে। পুরো কাজ শেষ হলে সত্যিকার অর্থেই রমনার নয়নাভিরাম দৃশ্যে মুগ্ধ হবেন দর্শনার্থীরা।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ঢাকা সার্কেল-১) ও রমনা লেক উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক কেএম সোহরাওয়ার্দী আমার সংবাদকে বলেন, বছরজুড়ে রমনা পার্কে পানি রাখার ব্যবস্থাসহ পর্যাপ্ত আলোকসজ্জা ও ল্যান্ড স্কেপিংও করা হবে।

এখানে কৃত্রিম লেকের নান্দনিকতার সঙ্গে মিল রেখে ১৫ ফুট প্রস্থ মাইক্রো পাইল আর সিসি ফেয়ার ফেস ফ্রেম, স্টিল জয়েন্ট দিয়ে এমএস পাইপের মাধ্যমে দুটি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। লেকের মাঝামাঝিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সৃষ্টির লক্ষ্য পানিতে ডুবন্ত একশ ফুট ডায়াগ্রামের ৮ ইঞ্চি পুরু রিটেইনিং ওয়ালের ভেতর মাটি ভরাট ও বনায়ন করা হবে।

পার্কের ইতিহাস : রমনা পার্ক ১৬১০ সালে মোঘল আমলে প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই সময়ে রমনার পরিসীমা ছিল বিশাল এলাকাজুড়ে। মোঘলরাই রমনার নামকরণ করেন। পুরনো হাইকোর্ট ভবন থেকে পূর্বের সড়ক ভবন পর্যন্ত মোঘলরা বাগান তৈরি করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে কোম্পানি আমলে এ এলাকা জঙ্গলে পরিণত হয়।

১৯ শতকে ব্রিটিশ শাসক এবং ঢাকার নবাবদের সহায়তায় এটির উন্নয়ন সাধন করা হয়। ঢাকা শহরের নৈসর্গিক পরিকল্পনার কাজ শুরু হয়েছিল ১৯০৮ সালে লন্ডনের কিউই গার্ডেনের অন্যতম কর্মী আর. এল প্রাউডলকের তত্ত্বাবধানে। শহরের সেই নৈসর্গিক পরিকল্পনার ফল ছিল রমনা পার্কের উন্নয়ন। বর্তমানে পার্কের আয়তন ৬৮ দশমিক ৫ একর। এর লেকের আয়তন ৮ দশমিক ৭৬ একর।