বাস সংকটে ভোগান্তিতে কর্মজীবী নারীরা
প্রিন্ট সংস্করণ॥ফারুক আলম
নভেম্বর ১৮, ২০১৯, ০৭:৩০ পিএম

রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বিআরটিসির মহিলা বাস সার্ভিস চালু হলেও নারী পরিবহনে সামান্যই অবদান রাখতে পারছে। একে তো চাহিদার তুলনায় বাসের সংখ্যা কম, অন্যদিকে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা বিদ্যমান। ফলে এ সার্ভিসের কার্যত কোনো সুফল পাচ্ছেন না মহিলারা। রাস্তায় বিআরটিসির মহিলা বাসের দেখা মেলে কালেভদ্রে।
জানা গেছে, রাজধানীজুড়ে বিআরটিসির মহিলা বাস মাত্র ১৯টি চলাচল করে। রুটগুলো হলো- মোহাম্মদপুর থেকে একটি এসি ও একটি নন-এসি বাস চলাচল করে। মিরপুরে এক, গাবতলী দুই, আব্দুল্লাপুর এক, মতিঝিল চার, বনশ্রী এক, তালতলা দুটি, গুলশান নতুন বাজার এক, নারায়ণগঞ্জ-গাজীপুরে একটিসহ আরও দুটি রোডে চারটি মহিলা বাস চালু আছে। যা মহিলা যাত্রীদের তুলনায় অপ্রতুল। ফার্মগেটে বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন আফরোজা বেগম। তিনি রামপুরার বাসা থেকে প্রতিদিন ফার্মগেটে অফিসে যান।
তার দাবি, অফিস ছুটি পাঁচটায়, তাই মহিলা বাস যেন ঠিক পাঁচটায় ছাড়ে। সেই বাসে যেন শুধু নারীদের তোলা হয়। যাত্রীর লোভে বাসে পুরুষ যাত্রী তোলা হয়, এমন অভিযোগ করলেন মিরপুরের আকলিমা আক্তার ও মতিঝিলের লায়লা বেগমসহ অনেকেই। তাদের অভিযোগ, সাধারণ বাসে চালকরা নারী যাত্রীদের তুলতে অনীহা দেখান। কিন্তু বর্তমানে মহিলা বাস ঠিকমত চলে না। আরও মহিলা বাসের দাবি জানান তারা।
অন্যদিকে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ বলছে, যে বাসগুলো চালু আছে তাতেই যাত্রী সংকট রয়েছে। ফলে বিআরটিসির মহিলা বাসে লোকসান গুণতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, মহিলা বাসে লোকসান কমছে না। যদি নারী যাত্রী বাড়ে তবেই আরও বাস দেয়া হবে নগরীতে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান মো. এহছানে এলাহী আমার সংবাদকে বলেন, মহিলা যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করতে দায়িত্ব নেয়ার পরপরই রাস্তায় দুটি নতুন বাস চালু করেছি। মহিলা-শিশুদের অগ্রাধিকার আগে দিতে হবে। একটি বাস রুটে চালানোর পর অন্তত ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ লাভ থাকতে হবে। কিন্তু লাভ তো দূরের কথা শুধু চালানই উঠছে কিছু কিছু রুটে। কর্মজীবী মহিলা বাসে লাভের চিন্তা করলে চলবে না। এটিকে সেবামূলক উদ্যোগ হিসেবে নিতে হবে।
বিআরটিসির মতিঝিল বাস ডিপোর ম্যানেজার মো. নায়েব আলী আমার সংবাদকে বলেন, মহিলা যাত্রীদের জন্য আলাদা বাস সার্ভিস করায় কর্মজীবীদের সুবিধা হয়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় বাসের সংখ্যা কম। আর অন্যান্য বিআরটিসির বাসগুলোর চেয়ে মহিলা বাসে লোকসানের পরিমাণ বেশি হয়ে থাকে।
মতিঝিল থেকে মহাখালীর ভাড়া ১৫ টাকা হলে ১০ টাকা দেন। কোনো রকম ডিজিলের ভাড়া উঠে। মোহাম্মপুর থেকে বিআরটিসির মহিলা বাসে উঠার জন্য লাইন ধরে আছেন ১০ থেকে ১২ জন মহিলা যাত্রী। তাদের প্রত্যেকের অভিযোগ, নির্দিষ্ট সময় মেনে না চলা, পুরুষ যাত্রীদের ওঠানামা করানো, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ইত্যাদি অভিযোগ রয়েছে এসব বাসের যাত্রীদের। বিষয়টি উদ্বেগজনক। পরিবহন সংকট রাজধানীবাসীর একটি অন্যতম সমস্যা। জনসংখ্যার তুলনায় গণপরিবহনের তীব্র সংকট এর কারণ। যারা প্রতিদিন বাসে চলাচল করেন, কেবল তারাই জানেন কী পরিমাণ ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের। রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো থেকে রিকশা তুলে দেয়ায় মহিলাদের বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের নারীদের যাতায়াত রীতিমতো কষ্টসাধ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরিবহন সমস্যার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী ছাত্রী ও কর্মজীবী নারী— যাদের প্রতিদিন রাজধানীর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করতে হয়। নগরবাসীর এ ভয়াবহ দুর্ভোগ লাঘবে গণপরিবহনের আওতা জরুরি ভিত্তিতে বাড়ানোর দরকার। সরকার মেট্রোরেলের কাজ ধরলেও এ প্রকল্প বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সেজন্য দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য পদক্ষেপ হাতে নেয়া দরকার।
প্রসঙ্গত, নারী যাত্রীদের পরিবহন সমস্যার কথা বিবেচনা করে বিআরটিসি ১৯৯৮ সালে রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোয় প্রথমবারের মতো মহিলাদের জন্য আলাদা বাস সার্ভিস চালু করে। কিন্তু এ খাতে অতিরিক্ত লোকসান হতে থাকলে মহিলা বাস সার্ভিস বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে ২০০১ সাল থেকে আবার চালু করা হয় এ সার্ভিস। বিআরটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, মহিলা বাস সার্ভিস চালাতে গিয়ে সরকারের লাখ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে। তবে বিআরটিসির লোকসানের জন্য আরও নানা কারণ দায়ী বলে অভিযোগ রয়েছে।
এসটিএমএ