Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা খালেদা-তারেকের

আবদুর রহিম

মে ১৫, ২০২০, ০১:৫০ পিএম


দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা খালেদা-তারেকের
  • সরকারে যাওয়ার প্ল্যাটফর্ম খুঁজতে জিয়াউর রহমানের পুরনো পরিকল্পনার নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে
  • মা-ছেলের নির্দেশে বাসায় বসে স্থায়ী কমিটি ও সিনিয়র নেতারা মোবাইলে সকল কাজের সমন্বয় করছেন
  • আন্দোলনে নয়, করোনা ইস্যুর পর খালেদা জিয়ার কৌশলি পথেই সরকার পতনে কাজ করবে বিএনপি
  • এ পর্যন্ত ১৫ লাখ মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে বিএনপি, ডাক্তারদের দেয়া হয়েছে সুরক্ষাসামগ্রী
  • এখনো খালেদা জিয়ার মূল চিকিৎসা শুরু হয়নি, তবে তিনি মানসিকভাবে আগের চেয়ে স্বস্তিতে আছেন

১৩ বছর ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। নির্বাচনেও বারবার ভরাডুবি। দুই বছর এক মাস ১৬ দিন কারাভোগ করে এখন বাসায় চিকিৎসাধীন সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। এমন পরিস্থিতিতেও হারিয়ে যায়নি দলটি। দুঃসময়ে জনগণ ও দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে রয়েছেন বলে দাবি করেছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। করোনা ভাইরাস ইস্যুতে দেশের কঠিন মুহূর্তে প্রতিদিনই ত্রাণ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। শুরু থেকেই জনগণকে করেছেন সচেতনতা। ডাক্তার ও নার্সদের দিয়েছেন সুরক্ষা সামগ্রী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও শর্ত নিয়ে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার নির্দেশেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা ত্রাণসামগ্রী নিয়ে মাঠে রয়েছেন। মিটিং-মিছিল না থাকলেও জনগণের পাশে থাকার সহযোগিতাকেই সাংগঠনিক কাজ হিসেবে নেয়া হয়েছে। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য করোনা ইস্যুতে সেলও গঠন করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের সক্রিয় কাজের মাধ্যমে করা হবে মূল্যায়ন— দেয়া হয়েছে এমন ইঙ্গিত।

দলের নীতিনির্ধারণী সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না থাকায় খালেদা জিয়াকে দীর্ঘ সময় আটক থাকতে হয়েছে। তাই এবার কারাগার থেকে বের হয়েই খালেদা জিয়া সরকারে যাওয়ার প্ল্যাটফর্ম খুঁজতে জিয়াউর রহমানের পুরনো পরিকল্পনার নীতি অনুসরণ করছেন। মা-ছেলের নির্দেশে বাসায় বসে স্থায়ী কমিটি ও সিনিয়র নেতারা মোবাইলে সব কাজের সমন্বয় করছেন। সাংগঠনিক কাজে আগের চেয়ে বেশি তৎপর রয়েছেন। আন্দোলনে সরকার পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না, করোনা ভাইরাস ইস্যুর পর খালেদা জিয়ার দেখানো কৌশলী পথেই সরকার পতনে কাজ করবে বিএনপি— এমন বার্তাই দলের হাইকমান্ডকে দেয়া হয়েছে। যদিও খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য শর্ত নিয়ে মুক্তি পেলেও এখনো শুরু হয়নি মূল চিকিৎসা, তবে তিনি মানসিকভাবে আগের চেয়ে স্বস্তিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। 

এদিকে মুক্তির ৪৮ দিন পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বাসায় ডেকে রাজনৈতিকসহ সার্বিক খোঁজ-খবর নিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সোমবার রাত ৯টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের বাসায় সোয়া এক ঘণ্টা বৈঠক হয়। গত ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে মুক্তি পাওয়ার পর প্রথম এই একান্ত সাক্ষাৎ পান মির্জা ফখরুল। এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ওনার (খালেদা জিয়া) স্বাস্থ্য, দলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ম্যাডামের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।

জানা গেছে, ইতোমধ্যে তারেক রহমানের নির্দেশে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য বিএনপির ১০ সাংগঠনিক বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদককে প্রধান করে বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে। গত ১০ মে দলটির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষণ সেলের আহ্বায়ক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এই কমিটিগুলো গঠন করেন। এর আগে ৮ মে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে করোনা সেল গঠন করে বিএনপি। জেলা বিএনপির সভাপতি বা আহ্বায়ক এবং বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের প্রধান করে এই সেল গঠন করা হয়। ইতোমধ্যে ১৫ লাখ মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে বিএনপি। সমপ্রতি দেশের পরিস্থিতি এবং দলের কার্যক্রম বিষয়ে খালেদা জিয়াকে অবহিত করে আসেন দলের মহাসচিব।

এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ আমার সংবাদকে বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের চাইতে বিএনপি এখন অসহায়দের ত্রাণ বিতরণ, পিপিই বিতরণ এগুলো নিয়ে কাজ করছে। আমাদের নির্দেশনাও দেয়া আছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এবং আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে। সারা দেশের নেতাকর্মীরা যে যেখানে আছেন যে অবস্থানে আছেন সে অবস্থান থেকে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। সেই কাজই বিএনপি করে যাচ্ছে। সে লক্ষ্যেই জাতীয় সেল তৈরি করা হয়েছে দেশের করোনা পরিস্থিতি, ত্রাণের পরিস্থিতি, আমরা কী পরিমাণ দিতে পেরেছি পর্যবেক্ষণ করার জন্য। সব মিলিয়ে আমাদের একটা পর্যবেক্ষণ কমিটি হয়েছে। সাংগঠনিক পর্যায় থেকে আমরা তৃণমূল  পর্যায় পর্যন্ত আরও কিভাবে সাহায্যের পরিধি বাড়ানো যায় তা চিন্তা করা হচ্ছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নিয়েই বিএনপি এখন বেশি ভাবছে। জনগণের কল্যাণ নিয়েই আমরা এখন নতুনভাবে প্ল্যান করছি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, করোনায় পাশে থাকার বিষয়টা তো আমরাই প্রথমে শুরু করলাম। বাংলাদেশে যখন কোনো ধরনের কার্যক্রম ছিলো না, তখন বিএনপি সচেতনতায় লিফলেট বিতরণ করে। প্রথম আমরা মাস্ক বিতরণ করি, প্রথম আমরা করোনার গুরুত্ব নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছি। নির্বাচন বন্ধ করার জন্য দাবি করেছি। সচেতনতামূলক কাজ করেছি। তারপর করোনার যখন সংক্রমণ শুরু হয়ে গেলো লকডাউনের দাবি তুলেছি। পিপিইর অভাবে যখন ডাক্তাররা ঝুঁকিতে পড়লো তখন তাদের সুরক্ষার জন্যও কথা বলেছি।

বিএনপির পক্ষ থেকে, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের পক্ষ, ড্যাবের পক্ষ থেকে ডাক্তারদের পিপিই ও মাস্ক বিতরণ করেছি। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমাণ স্যানিটাইজার বসানোর ব্যাবস্থা করেছি। তারপর যখন কর্মহীন হয়ে জনগণ খাবারের জন্য হাহাকার করছে, দিন এনে দিন খায় লোকজন যখন অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখন আমাদের পক্ষ থেকে গ্রামে-গঞ্জে দলের নির্দেশনায় নেতাকর্মীরা পাশে দাঁড়িয়েছেন। বিএনপির নেতাকর্মীরা অর্থনৈতিকভাবে খুবই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে, তারপরও বিএনপি কিন্তু মানুষের বাড়িতে বাড়িতে সীমিত সাধ্যের মধ্যে থেকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ মানুষকে ত্রাণ সহায়তা ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে। এ কাজগুলো যেমন অব্যাহতভাবে চলছে তেমনি অনলাইনে আমাদের ডাক্তাররা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের পক্ষ থেকে অসাধ্য সাধ্যর মতো কাজ হয়েছে। আমি এজন্য গর্বিত মনে করছি এ দলের সঙ্গে থাকতে পেরে। নির্যাতিত দল বিএনপি মানুষের রাজনীতি করে বলেই দাঁড়াতে পেরেছে।