Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

চলছে আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি

আসাদুজ্জামান আজম

আগস্ট ২২, ২০২০, ০৬:১৫ পিএম


চলছে আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি

আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সরকারি সুবিধা ছাড়াই অবসরে গেছেন সাড়ে চার হাজার শিক্ষক-কর্মচারী। যার কারণে সরকারি সুবিধাবঞ্চিত এসব শিক্ষক-কর্মচারী আন্দোলনে যাওয়ার  প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

তথ্য মতে, সরকারি আদেশ জারির পর থেকে গত জুলাই পর্যন্ত চার হাজার ৫৭৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী অবসরে গেছেন। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ৬৭ জন শিক্ষক ও ৩৮ জন কর্মচারী অবসরে যাবেন। তারাও সরকারি-বেসরকারি কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না।

সুবিধা আদায়ে আগামী বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতি (সকশিস)। সংগঠনের নেতারা আত্তীকৃতের দাবিতে সরকারকে আল্টিমেটাম দিতে যাচ্ছেন। সেখানে যারা অবসরে গেছেন তাদের অবসরোত্তর সরকারি সুবিধা দেয়ার দাবি জানাবেন।

সুনামগঞ্জের সরকারি ছাতক কলেজের অধ্যক্ষ মঈনউদ্দিন আহমেদ। দুই বছর আগে কলেজটি সরকারি করা হলেও আমলাতান্ত্রিক ফাঁদে পড়ে তার চাকরি আত্তীকৃত হয়নি। ৫৯ বছর হওয়ায় সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী গত ১১ জুন তিনি অবসরে গেছেন। অধ্যক্ষ মঈনউদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করেন, ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট কলেজ সরকারি হওয়ার জিও জারির সময় আমার চাকরির বয়স ছিলো।

আমলতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এখন পর্যন্ত কলেজে কোনো পদ সৃজন হয়নি। ফলে কলেজ সরকারি হলেও আমি বেসরকারি শিক্ষক হিসেবে অবসরে গেলাম। এই ক্ষতির দায়-দায়িত্ব কে নেবে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আমলাদের কারণে প্রধানমন্ত্রীর যুগান্তকারী সিদ্বান্তের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছি আমরা।

জানা গেছে, সরকারি কলেজবিহীন উপজেলায় একটি করে কলেজ সরকারি করার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার পর সারা দেশে ৩০২টি বেসরকারি কলেজকে সরকারি করে বিগত ২০১৬ সালের ১৭ মে আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তার মধ্যে ২০১৬ সালের মে মাস থেকে ২০১৮ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত শিক্ষক দুই হাজার ২৩৪ ও কর্মচারী এক হাজার ১০৮ জন অবসরে গেছেন। প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের আদেশ জারির পর থেকে অর্থাৎ ২০১৮ সালের আগস্ট মাস থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৩৮ জন শিক্ষক ও ২৬৯ জন কর্মচারী অবসরে গেছেন।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ৩৫৮ জন শিক্ষক ও ১০২ জন কর্মচারী অবসরে গেছেন এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ৬৭ জন শিক্ষক ও ৩৮ জন কর্মচারী অবসরে যাবেন। বর্তমানে ১৩৪ জন অধ্যক্ষ ও ১০৮ জন উপাধ্যক্ষ  কর্মরত আছেন।

সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জহুরুল ইসলাম বলেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের নামে অযথা সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। এ সময় অনেকেই অবসরে চলে গেছেন বা মারা গেছেন।

তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের ত্রুটির কারণে শিক্ষকরা বঞ্চিত হবে কেন? আমাদের দাবি, কলেজ সরকারিকরণের দিন থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীকৃত করতে হবে। সেজন্য আন্দোলনের কর্মসূচি দেবো।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারিকরণে নির্বাচিত কলেজে ২০১৬ সালের ৩০ জুন নিয়োগ ও অর্থব্যয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এরপর শুরু হয় কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগ-সংক্রান্ত কাগজপত্র যাচাই-বাছাই।

প্রথম দফায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) আটটি আঞ্চলিক পরিচালকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম সরেজমিন কলেজ পরিদর্শন করে প্রতিবেদন পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশিতে।

শিক্ষকদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে শুরু থেকেই বাধা দিচ্ছেন বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষকদের নন-ক্যাডার ঘোষণার দাবিতে দীর্ঘদিন ক্লাস বন্ধ রেখে আন্দোলন করে। আদালতে মামলা পর্যন্ত করে। যে কারণে কলেজ সরকারিকরণ বিলম্বিত হয়।

তাদের চাপেই সরকার কলেজ সরকারিকরণে শিক্ষকদের নন-ক্যাডার মর্যাদা দিয়ে ২০১৮ সালে আত্তীকরণ বিধিমালা জারি করে। ২৯৮টি কলেজের পদ সৃজন নতুন বিধিমালা অনুযায়ী হলেও তিনটি কলেজ প্রভাব খাটিয়ে ২০০০ সালের বিধিমালা অনুযায়ী পদ সৃজন করে নিয়েছে।

কলেজগুলো হলো— নেত্রকোনার সুসং মহাবিদ্যালয়, সাতক্ষীরার আশাশুনি কলেজ ও সুনামগঞ্জের পাগলা মডেল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ। এই তিনটি কলেজের শিক্ষকরা বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতো সুবিধা পাবেন।

শিক্ষকরা আরও জানান, শিক্ষক-কর্মচারীদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেই এমপিওভুক্ত করেছেন। বিভিন্ন সময়ে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা হয়েছে। তারপরও মাউশির কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাইয়ের নামে ইচ্ছা করে প্রতিবেদনে নিয়োগের রেজুলেশনের ভাষা ঠিক নেই— এ ধরনের অযাচিত মন্তব্য করেছেন।

মাউশির বর্তমান ডিজি চট্টগ্রাম আঞ্চলের পরিচালক পদে কর্মরত থাকাকালীন তিনি ৩৫টি কলেজ সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিয়েছেন মাউশিতে। সেই কলেজগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের কাগজপত্র ডিজি আবার তার জুনিয়র কর্মকর্তাদের যাচাই করার আদেশ দিয়েছেন। পদসৃজনের জটিলতা সৃষ্টি করতে বর্তমানে সপ্তম গ্রেডে বেতন পাওয়া শিক্ষকদের ৯ম গ্রেডে পদসৃজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সমন্বিত পদ সৃজনের বদলে ব্যক্তির নামে পদ সৃজনের প্রস্তাব করা হচ্ছে।  দফায় দফায় একই কাগজপত্র একই কর্মকর্তাদের দিয়ে যাচাই-বাছাইয়ের নামে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। যাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি সরকারি হওয়ার আগেই অবসরে চলে যান।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত মাত্র ৪৪টি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের কাগজপত্র কয়েক দফায় দফায় যাচাই-বাছাই করে চাকরি আত্তীকরণ করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদ সৃজনের প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে সম্মতি দিলে প্রস্তাব যাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পেলে ফাইল যাবে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে। এই কমিটিতে মাত্র একটি কলেজের শিক্ষকদের চাকরি আত্তীকরণ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আর বাকি কলেজের তথ্য যাচাই-বাছাই পর্যায়ে রয়েছে।
 
এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, আমি সচিব হিসেবে আসার পর দেখলাম, যেভাবে কাজ হচ্ছিল তাতে বছরের পর বছর লেগে যাবে।

আত্তীকৃত কাজের গতি আনতে আমি পাঁচটি কমিটি করে দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশ দেই। মাঝখানে করোনার কারণে তা আটকে যায়। পুনরায় কমিটি কাজ শুরু করেছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সব কলেজের আত্তীকৃতের কাজটি শেষ করে জনপ্রশাসনে পাঠাতে পারবে।

তিনি বলেন, পুরো কাজটিতে শিক্ষা ছাড়াও জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ও যুক্ত। তাই শিক্ষকদের আন্দোলন না করে আরেকটু ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেন তিনি।

আমারসংবাদ/এসটি