Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

উপনির্বাচনে প্রার্থীর হিড়িক

রফিকুল ইসলাম

আগস্ট ২৭, ২০২০, ০৬:০৭ পিএম


উপনির্বাচনে প্রার্থীর হিড়িক

এমপি। লোভনীয় পদ। নির্বাচিত হলেই হয়ে যাবেন স্থানীয় রাজনীতির ত্রাণকর্তা। এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন পুরো নির্বাচনি এলাকা। শক্ত করবেন বলয়ভিত্তিক রাজনীতি। আর দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এমপি হতে দরকার নৌকার টিকিট। নৌকা পেলেই যেকোনো পরিস্থিতিতে বিজয় নিশ্চিত।

তাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও চান এমপি হতে। জাতীয় সংসদে শূন্য হওয়া পাঁচটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনকে সামনে রেখে এমন ধারণা থেকেই আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ১৪১ জন প্রার্থী।

এদের অনেকেই যুক্ত বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে! নেই তেমন কোনো দলীয় পরিচয়। তবুও নৌকা পেতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন তারা। কেউ কেউ দলীয় মনোনয়ন না পেলেও সমস্যা নেই।

তাদের টার্গেট আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দর্শন পাওয়া এবং বড় বড় বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন টাঙানোর মাধ্যমে আত্মপ্রাচার এবং জনপ্রিয়তা অর্জন।

জাতীয় সংসদে শূন্য হওয়া পাঁচটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হতে মনোনয়ন সংগ্রহ  এবং জমা দিয়েছেন ১৪১ জন প্রার্থী। আসনগুলোতে হেভিওয়েট প্রার্থী আছেন দুই থেকে তিনজন।

বাকিরা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিজের প্রভাব এবং আসনের রাজনীতিতে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে জাহির করতেই মূলত প্রার্থী হচ্ছেন। সংসদীয় তো দূরের কথা, ওয়ার্ড নির্বাচনে জামানত বাজেয়াপ্ত হবে, এমন অনেকেই প্রার্থী হচ্ছেন। যা অধিকাংশ আসনজুড়েই বইছে সমালোচনা।
 
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে এক পরিবারের মধ্য একাধিক নৌকা প্রত্যাশী দেখা গেছে সিরাজগঞ্জ-১ ও পাবনা-৪ আসনে প্রয়াত এমপির পরিবারের সদস্য এবং স্বজনদের মধ্যে।

পাবনা-৪ আসনে প্রয়াত এমপি শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর স্ত্রী কামরুন্নাহার শরীফ, ছেলে গালিবুর রহমান শরীফ, মেয়ে মাহজেবিন শিরিন পিয়া, জামাতা আবুল কালাম আজাদ মিন্টু ছাড়াও তার ব্যক্তিগত সহকারী মনোনয়নপ্রত্যাশী।

সিরাজগঞ্জ-১ আসনে প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয় ও নাসিমের ভাতিজা ড. আবদুস সেলিমের ছেলে শেহরিন সেলিম রিপনসহ মোট তিনজন মনোনয়ন চান।

ঢাকা-৫ আসনে মনোনয়ন পেতে ২০ জন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। এ আসনে প্রয়াত এমপির ছেলেসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রার্থী রয়েছেন। দলে পদ নেই— এমন দুই মনোনয়নপ্রত্যাশীও রয়েছেন।

নওগাঁ-৬ আসনে ৩৪ জন মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন, সেখানে হেভিওয়েট প্রার্থীর সংখ্যা কম। ৫৬ জন মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন ঢাকা-১৮ আসনে। ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের নেতারাও ফরম নিয়েছেন। ফরম নিয়েছেন দলের বাইরে থাকা ব্যবসায়ীরাও।

অথচ চলতি বছরের শুরুতে ঢাকা-১০, বগুড়া-১, বাগেরহাট-৪, যশোর-৬ ও গাইবান্ধা-৩ আসনের উপনির্বাচন হয়েছে। এ পাঁচ আসনের উপনির্বাচনে সব মিলিয়ে দলীয় ফরম বিক্রি হয় ৭৮টি। যদিও বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই দেখছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।

তারা বলছে, আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। এই দলের নেতাকর্মীও সব থেকে বেশি। তাই নেতৃত্বে প্রতিযোগিতা দিন দিন বাড়ছে।

যদিও রাজনৈতিক বিশ্লষকরা বলছে, যেকোনো দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকা স্বাভাবিক। তবে আসন্ন উপনির্বাচন ক্ষমতাসীন দল থেকে যেভাবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে তা অস্বাভাবিক। এতে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের আভাস পাওয়া যায়।  

ব্যক্তি পরিচিতি বৃদ্ধির জন্য অনেকেই এখন মনোনয়ন চায় জানিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ আমার সংবাদকে বলেন, ‘উপনির্বাচনের জন্য নৌকা পেতে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন নিয়েছেন। কিন্তু সবাইকে তো দেয়া সম্ভব নয়। কাকে দেয়া হবে সেটি নেত্রী ও মনোনয়ন বোর্ড ঠিক করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেকেই আছেন, যারা ভাবেন বিরোধী দল নির্বাচনে না এলে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হয়ে যাবো। এমন মনোভাবের কারণেই অনেকেই মনোনয়ন নিয়েছেন। আবার অনেকেই নিজের পরিচিতি বাড়াতে মনোনয়ন নিয়েছেন। তাবে তার নিজের প্রচারণাটা হয়। তবে অধিক মনোনয়ন নিলেও দলীয় কোন্দলের সৃষ্টি হবে না বলেও দাবি করেন আওয়ামী লীগের এই নেতারা।    

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরষ্কুশ বিজয় অর্জনের মধ্যদিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। ক্ষমতার এই দীর্ঘ সময়ে জাতীয় কিংবা স্থানীয় সরকারের যেকোনো নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের বেশি গুরুত্ব দিয়েছে দলটি। বিশেষ করে দলীয় প্রতীক নিয়ে অনেকেই এমপি-মন্ত্রী, মেয়র ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় আসন্ন উপনির্বাচনের নৌকা প্রতীকের নির্বাচন করতে চায় ব্যবসায়ীরা।

সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আফসান চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, ‘অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মালিক মনে করেন, আমার অনেক টাকা। আমার এমপি হওয়া দরকার। ক্ষমতাসীন দলের সাথে থাকা দরকার। তাই নির্বাচন এলেই তারাও রাজনৈতিক দলগুলোর মতো মনোনয়ন চান। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের প্রতি মানুষের আর আগ্রহ নেই।’  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ সেবামূলক মনোভাব নিয়ে রাজনীতি করেন। কিন্তু কিছু মানুষ আছে যারা আত্মপ্রচার বা ব্যবসা হিসাবে রাজনীতি করে থাকেন  এবং এমপি-মন্ত্রী হতে চান। তারা কখনো মানুষের উপকারে আসেন না। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করা। তাহলে যে কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন হয়।’

নির্বাচন কমিশন সূত্রে, পাবনা-৪, ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ সংসদীয় আসনে উপনির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে পাবনা-৪ আসনে এবং ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ ভোট গ্রহণ হবে ১৭ অক্টোবর।

বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস ও বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় পেছানো হয়েছে ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনের তারখি। তিনটি উপনির্বাচনের ভোটের তারিখ নির্ধারিত হলেও তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে শুধু পাবনা-৪ আসনের। বাকি দুটি আসনের তফসিল যথাসময়ে ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে ইসি।

তফসিল অনুযায়ী, পাবনা-৪ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ২ সেপ্টেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই ৩ সেপ্টেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৮ সেপ্টেম্বর আর ভোট নেয়া হবে ২৬ সেপ্টেম্বর।

আমারসংবাদ/এসটিএম