Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বড় লড়াইয়ের নির্বাচনি প্রস্তুতি আওয়ামী লীগে

আফছার আহমদ রুপক॥প্রিন্ট সংস্করণ

জুন ২৪, ২০১৭, ১০:৪০ এএম


বড় লড়াইয়ের নির্বাচনি প্রস্তুতি আওয়ামী লীগে

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে এমনটি ধরেই বড় লড়াইয়ের নির্বাচনি প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতাকর্মীদের ধারণা একাদশ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে। যদি তাই হয় তাহলে বিএনপির সঙ্গে একটি বড় ধরনের নির্বাচনি লড়াই হবে। এই লড়াইয়ে জিততে হলে চলতি বছরের মধ্যেই দল গোছানোসহ শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন নিয়ে বোঝাপড়া শেষ করতে হবে। অবশ্য এই দুটো বিষয়কে সামনে রেখে ইতোমধ্যে দেশের আনাচে-কানাচে দলের ভিত শক্তিশালী করার কার্যক্রম পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি জাপাসহ শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগি ও কীভাবে নির্বাচনি বৈতরণী পার হওয়া যায়, সেব্যাপারেও আলোচনা চলছে।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপিবিহীন জাতীয় নির্বাচনের জয় নিয়ে গর্ববোধ করেন না। তারা মনে করেন বিনাযুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার চেয়ে যুদ্ধ করে পরাজিত হওয়াও অনেক সম্মানের। আগামী নির্বাচনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বা বিনাভোটে বিজয়ী হয়ে এ লজ্জার গ্লানি বয়ে বেড়াতে চান না তারা। তাদের এ মনোভাবের প্রতিফলন দেখা গেছে গত ৩০ মার্চ কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন দিয়ে। দুয়েকটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের কর্মীরা জোর করে তাদের প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেওয়ার চেষ্টা করার ঘটনায় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা সায় দেননি। উল্টো কেন্দ্রগুলোর ভোট স্থগিতের সিদ্ধান্ত এবং নিরপেক্ষভাবে ফল প্রকাশের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনকে।

ফলে ফল পাল্টে যায়নি কিংবা সুক্ষ্ম বা স্থুল কারচুপি হয়নি। জনগণের ভোট পেয়েই বিজয়ী হয়েছেন বিএনপির প্রার্থী। আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে পরবর্তী সবগুলো জাতীয় নির্বাচনেও একই প্রক্রিয়া ও নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা কামনা করছেন তারা। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ অনেকই নেতারই প্রত্যাশা ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ক্ষমতাসীন দলের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করা এবং এই ধারা যেন অব্যাহত থাকে, প্রতিষ্ঠা পায় যুগযুগ। আর এটি খুব সহজেই করা যাবে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মতো জাতীয় নির্বাচনেও নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে মাঠে ছেড়ে দেওয়া হলে। এটি তারা করতে চান মনেপ্রাণে।

কিন্তু তা সম্ভব হবে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলো সহায়তা করলে। বিশেষ করে অন্যতম বড় দল বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে। গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনেই গণতান্ত্রিক পথে সুষ্ঠু নির্বাচনের যাত্রা শুরু করতে চেয়েছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা পূর্ণতা পায়নি বিএনপির অংশগ্রহণ না থাকায়। অনেকটা কম ভোটারেই তবে নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়। আওয়ামী লীগের ১৫৩ জন এমপি হয়েছেন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এ অপ্রত্যাশিত ঘটনা ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ আর কোনো নির্বাচনে যেন না হয় এবং দেশে আর কোনো তত্ত্বাবধায়ক বা অন্য পন্থার সরকারের প্রয়োজন দেখা না দেয় সেই চেষ্টাই করছে আওয়ামী লীগ।

সূত্রটি বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে একাদশ জাতীয় নির্বাচন যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেজন্য নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দলের হাইকমান্ড নিরপেক্ষতা দেখিয়েছে। এর উদাহরণ নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা। তাকে আওয়ামী লীগ প্রস্তাব দেয়নি। আওয়ামী লীগ প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে প্রস্তাব দিয়েছিল বর্তমান ইসির নারী কমিশনার কবিতা খানমকে। পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হয়েছেন অন্য দুয়েকটি ছোট রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবে। আওয়ামী লীগ যদি একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করে ক্ষমতায় আসতে চাইত তাহলে সিইসি নির্বাচন করত তাদের ইচ্ছাতেই। সেটি করা হয়নি। এর কারণ আওয়ামী লীগ চায় ইসি এবং সিইসি হবে ভারতের ইসি এবং সিইসির মতো কিংবা অন্যকোনো দেশের গণতান্ত্রিক সরকারের ইসি ও সিইসির মতো স্বাধীন এবং শক্ত মেরুদণ্ডের।

নির্বাচনকালীন সময়ে কাউকে পরোয়া করবে না, নিরপেক্ষ নির্বাচনে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সঠিকভাবে কাজে লাগাবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সাহায্য নিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারের আমলেও যে বাংলাদেশে স্বচ্ছ ভোট হয় তার দৃষ্টান্ত দেখাতে। তাছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করিয়ে ইতিহাস হয়ে থাকতে চাচ্ছে দলটি। এর আরো একটি প্রমাণ- নির্বাচনের দেড় বছর বাকি থাকতেই আগাম ভোট চেয়ে এবং নেতাকর্মীদের কোমর বেঁধে মাঠে নামার কথা বারবার বলছেন দলের সভানেত্রী ও হাইকমান্ড। নেতাদের মতে, সক্রিয়ভাবে কাজ করলে একাদশ নির্বাচনের ফলও আওয়ামী লীগের ঘরে আসবে। অর্থাৎ সরকার গঠন করা সম্ভব। এর কারণ সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি, রেকর্ড পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন, পদ্মা সেতু নির্মাণসহ ব্যাপক উন্নয়ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জয়ের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

সূত্র আরো জানায়, ভোট কারচুপি বা একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে জোর করে ক্ষমতায় আসার চিন্তা থাকলে এত উন্নয়ন বা দলের নেতাকর্মীদের সিরিয়াস হতে বলার প্রয়োজন ছিল না। বরং সবচেয়ে বড় এই রাজনৈতিক দলটি পথ চেয়ে বসে থাকত আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণ যেন না হয় এবং ফাঁকে মাঠে ২০১৪ সালের মতো গোল দিতে পারে। এমন আশা করা হচ্ছে না। তবে বিএনপি যদি একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিয়ে সেই সুযোগ করে দেয় তাহলে সেটি হাতছাড়া করার উপায়ও তো নেই। সূত্র মতে, বিএনপির হুমকি ধামকিও গায়ে মাখবে না আওয়ামী লীগ। বিএনপির সহায়ক সরকার বা নিরপেক্ষ সরকার কোনো দাবিই আমলে নেবেন না। এ ব্যাপারে কোনো আলোচনারও সুযোগ দেবে না। বিষয়টি নিয়ে সংলাপ বা আলোচনারও উদ্যোগী হবে না আওয়ামী লীগ।

এ অবস্থায় বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত একাদশ নির্বাচনে না আসে তাহলে গত নির্বাচনের মতোই বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করবে আওয়ামী লীগ এবং এ ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদাকে রকিবউদ্দীন কমিশনের মতোই কাজে লাগাবে বলে বিএনপি নেতারা যে বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছেন তা কেবল বক্তৃতাই থেকে যাবে। নির্বাচনে না গেলে আমও যাবে ছালাও যাবে। অর্থাৎ অর্ধমৃত দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে না পারবে নির্বাচন ঠেকাতে, না পারবে আন্দোলন করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে। কারণ শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগ নেতারা আন্দোলন বা জীবনের ভয় করেন না। আর যারা জীবনের ভয় করেন না, তাদের দমিয়ে রাখা যায় না। যেমনটি দমিয়ে রাখা যায়নি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

এদিকে অপর একটি সূত্র বলছে বিএনপি যদি এ বিষয়টি উপলব্ধি না করে একাদশ নির্বাচন বর্জন করে তাহলে শুধু ক্ষমতায় আসার জন্য ‘অপেক্ষার গাড়িতে’ চড়তেই থাকবে। আর যদি অংশগ্রহণ করে তাহলে কুমিল্লার বিএনপির মেয়রপ্রার্থী সাক্কুর মতো কপাল খুলতেও তো পারে! এ ধরনের যুক্তির পক্ষে সূত্রটি বলছে এখন বিএনপি নেতাকর্মীরা মামলা-হামলা ও গ্রেপ্তারের ভয়ে মাঠে না থাকলেও ভোটের আগে মাঠে থাকবে। কারণ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কুমিল্লার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দিতে পারেন। তাছাড়া এ মুহূর্তে বিএনপির আন্দোলনে জনগণ অংশ না নিলেও একাদশ নির্বাচনে কোনো কারণে তারা তাদের মূল্যবান ভোট প্রয়োগ করতে না পারলে বিএনপির পাশে দাঁড়াবে আর তখন আন্দোলনের প্রয়োজন হলে সেটি চাঙা হতে পারে।