Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

১০ টাকার চাল নিয়ে উদ্বেগ

ওমর ফারুক॥প্রিন্ট সংস্করণ

জুলাই ১১, ২০১৭, ০৫:৪৩ এএম


১০ টাকার চাল নিয়ে উদ্বেগ

‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় গত বছর ২০১৬ সালে গ্রামীণ হতদরিদ্র মানুষকে ১০ টাকা দরে চাল দিতে ‘পল্লী রেশন’ চালু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খাদ্যবান্ধব এমন কর্মসূচির আওতায় রেশনিং ব্যবস্থায় বিধবা ও প্রতিবন্ধী নারীদের অগ্রাধিকার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে দেশের ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবারকে। ১০ টাকা কেজি দরে প্রতি পরিবার মাসে পাবে ৩০ কেজি চাল।

সম্প্রতি সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বেশ কয়েকটি হাওর অঞ্চলের বেশিরভাগ ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বাজারে চালের দাম বেড়ে যায় এবং দেশে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দেয়। এ অবস্থায় ১০ টাকা দরে চাল পাবেন কিনা সে নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে হতদরিদ্র মানুষের মধ্যে। তারা ভাবছে সরকার খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলা করতে হিমশিম খাবে এবং ১০ টাকা দরে চাল দেবে না। কিন্তু খাদ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বলছেন, প্রতিটি বিভাগের জেলা ও উপজেলাভিত্তিক দারিদ্র্য সূচক ও জনসংখ্যার ঘনত্ব অনুযায়ী বছরে পাঁচ মাস হতদরিদ্রের মাঝে ১০ টাকা দরের চাল বিতরণ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র আরও জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে সাত জেলায় সরকারের চাল সংগ্রহ অভিযানে প্রায় ৮১ হাজার মেট্রিকটন চাল সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে হাওর তলিয়ে যাওয়ার আগে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় দেড় লাখ টন। হাওর তলিয়ে যাওয়ার পর তা কমিয়ে আনা হয়। খাদ্য অধিদপ্তর জানায়, প্রথম দফায় মার্চ, এপ্রিল এবং দ্বিতীয় দফায় সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হবে প্রতি হতদরিদ্র পরিবারকে। হতদরিদ্র সুবিধাভোগীদের লিস্ট অনুযায়ী নির্ধারিত ১০ টাকার চাল দেবে মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রয়েছে ৭৫ শতাংশ দারিদ্র্য এবং ২৫ শতাংশ ঘনত্ব কোটা। সূত্র জানায়, পল্লী রেশনিংয়ের জন্য বাজার থেকে ৩২ টাকা দরে চাল কেনা হলেও প্যাকেজিং ও গুদামজাতকরণের পর কেজি প্রতি দাম পড়ছে সাড়ে ৩৬ টাকা। প্রতি টন চালের বাজারমূল্য ৩৬ হাজার ৩৩৫ টাকা হলেও প্রস্তাবিত রেশন মূল্য ধরা হয়েছে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা। ফলে প্রতি টন চালে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে ২২ হাজার ৮৩৫ টাকা।

১০ টাকায় সরকারি চালের ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, সরকারের বাজেটের আকার দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই সাথে হতদরিদ্রের চাহিদার কথাও ভাবছে। হাওর অঞ্চলে প্রচুর ফসলহানি হয়েছে, তারপরও সরকারের পরিকল্পনামাফিক হতদরিদ্রের ১০ টাকা চালের চাহিদা পূরণ করবে এমন আশ্বাস দেয়া হচ্ছে। সরকারের এ পরিকল্পনা এবং উদ্যোগ প্রশংসা করার মতো। এতে করে দেশের দরিদ্র মানুষগুলো খেয়ে বাঁচতে পারবে। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ বিষয়ে বলেন, আমরা গত বছর থেকেই ধানের বাজার বেশ অস্থির দেখছি। যার প্রভাব এখনও বাজারে আছে। চালের দাম এখনও অনেক চড়া। অতিদরিদ্র পরিবারকে মাসে ৩০ কেজি করে
চাল ১০ টাকায় দেওয়ায় মানুষের খাদ্য মজুদ কমে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, দেশ থেকে দরিদ্রদের অভাব বিলুপ্তি হচ্ছে ঠিক কিন্তু এর প্রভাবে ধানের বাজার অস্থির। তবে এবার হাওর অঞ্চলে ফসলহানি হওয়ায় সরকার ১০ টাকা চাল বিক্রি করে হতদরিদ্রদের চাহিদা পূরণ করতে পারবে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। খাদ্য অধিদপ্তরের সরবরাহ, বণ্টন ও বিপণন বিভাগের উপ-পরিচালক হেদায়েতুল ইসলাম আমার সংবাদকে জানান, সারাদেশে ৭টি বিভাগে খাদ্য অধিদপ্তরের অধীনে সাড়ে ৭ লাখ মেট্রিকটন ১০ টাকা দরে সরকারি চাল হতদরিদ্রের মাঝে বিতরণ করা হয়। এক বছরে ২ দফায় এ চাল বিক্রি করা হয়। সদ্য শেষ হওয়া ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে সরকার পরিকল্পনা নেয় হতদরিদ্রের মাঝে চাল বিতরণ করার এবং এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নও করা হচ্ছে। তবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে তৈরি করা রেশন কার্ডের মাধ্যমে হতদরিদ্ররা ডিলারের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করতে পারবে বলে জানান তিনি।

এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব নূরুল ইসলাম খান আমার সংবাদকে জানান, সরকারি ১০ টাকা দরের হতদরিদ্রের চাল মার্চ-এপ্রিলে দেয়ার পর আবার আগামী সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর থেকে দেয়া হবে। তবে ১ জন হতদরিদ্র মানুষ একসাথে ৩০ কেজি সংগ্রহ করতে পারবে। এদিকে কুড়িগ্রাম জেলার নয় উপজেলার এক লাখ ২৫ হাজার ২৭৯ পরিবার এবং অন্যান্য জেলায় হতদরিদ্র পরিবারকে এ সুবিধার আওতায় আনা হচ্ছে বলে জানা যায়।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার তথ্যমতে, ৭ জেলায় হাওরের পাঁচ লাখ হেক্টরের বেশি জমির বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় ২০ লাখ টন ধান উৎপাদন কম হবে। এদিকে সম্প্রতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, হাওরে দুর্যোগ দেখা দেওয়ায় সেখানে ধানের উৎপাদন অনেক কমে যাবে। বহু ফসল পানির নিচে চলে গেছে। আমরা কিছুদিন আগে ১০ টাকা দামে ৩০ কেজি করে চাল বিক্রি করেছি। আগামী তিন মাস (ভাদ্র, আশ্বিন ও কার্তিক) আবারও একই দামে চাল দেওয়া হবে। আমরা আউশ উৎপাদনের ওপর জোর দিয়েছি। জিটুজি (সরকার টু সরকার) পদ্ধতিতে চাল আমদানির কথা ভাবছি।