Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ স্বস্তিতে ঢাকার বস্তিবাসী

আফছার আহমদ রূপক॥প্রিন্ট সংস্করণ

জুলাই ১৫, ২০১৭, ০৬:১২ এএম


চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ স্বস্তিতে ঢাকার বস্তিবাসী

রাজধানীর এমন কোনো বাসাবাড়ি নেই যেখানে চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে উদ্বিগ্ন নয় মানুষ। চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জ্বর, শরীরের গিরায় গিরায় প্রচ- ব্যথার যন্ত্রণায় যখন নগরীর বাসিন্দারা কাতরাচ্ছে তখন বস্তির মানুষের দিব্যি আরামে সময় কাটছে। মহাস্বস্তিতে আছে ঢাকার বস্তিবাসীরা। বস্তিতে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ নেই বললেই চলে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চিকুনগুনিয়া থেকে গ্রামের মানুষও রক্ষা পেয়েছে। এডিস মশা গ্রামে নেই। শুধু ঢাকায়। গ্রামে কিছু চিকুনগুনিয়ার রোগী পাওয়া গেলেও তারা ঢাকায় বেড়াতে এসে বা কাজে এসে এডিস মশার কামড় খেয়েছিলেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকুনগুনিয়া ভাইরাস বহন করে এডিস মশা। এ মশা সবথেকে বেশি বংশ বৃদ্ধি করে ফুলের টব ও এসির নিচে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে। বস্তিতে গরিব মানুষ এগুলোর কোনোটাই ব্যবহার করে না। বলা যায় তাদের এসি কেনার টাকা নেই এবং ফুলের টবে গাছ লাগিয়ে তাতে পানি দিয়ে পরিচর্যা করার সময় কোথায়। আর এগুলোর খরচই বা যোগাবে কী করে। তাই এডিস মশার কামড় থেকে তারা রক্ষা পাচ্ছে। চিকুনগুনিয়ায়ও আক্রান্ত কম হচ্ছে। তাছাড়া বেশিরভাগ বস্তির অবস্থান থাকে খালের পাড়ে বা নোংরা স্থানের পাশে। এসব স্থানে এডিস মশা প্রজনন করে না।

তবে শুধু যে এসির নিচে এবং ফুলের টবে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে তা নয়। অনেক সময় পরিত্যক্ত টায়ার, পরিত্যক্ত পাত্র, নির্মাণাধীন ভবনের জমে থাকা পানিতেও এরা মশা বংশ বৃদ্ধি করতে পারে। কিন্তু সেগুলোতে থাকা এডিস মশার কামড় খেয়ে বস্তির মানুষ চিকুনগুনিয়া বা ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হতেও পারে। কিন্তু হাসপাতালগুলোতে আসা চিকুনগুনিয়া রোগীদের পরিসংখ্যান দেখলে তা খুঁজে পাওয়া ভার। বেশিরভাগ রোগীই আসছে অভিজাত এলাকাসহ মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত বসবাস করছে এমন এলাকা থেকে।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের রেকর্ডরুমের তথ্যে দেখা গেছে ২৭ মে থেকে এ পর্যন্ত ৮৯ জন শিশু এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অন্যান্যসহ ৯ জন প্রাপ্তবয়স্কও চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত হয়ে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। কিন্তু তাদের একজনও বস্তির বাসিন্দা নয়। চিকুনগুনিয়াপ্রবণ এ এলাকাগুলো হচ্ছে পূর্ব ধনিয়া নয়ারহাট, গ্রিনরোড, বড় ভাওয়াল কেরানিগঞ্জ, মিরপুর পূর্ব কাজীপাড়া, আগারগাঁও চওতলা গার্মেন্ট, মনিপুরিপাড়া ৬ নম্বর গেট, শেওরাপাড়া, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট গ্রিন সুপার মার্কেট, স্বর্ণাভিলা মিরপুর, সাভার নিউমার্কেট, মিরপুর সাংবাদিক কলোনি, ১৪৯ নম্বর রাজাবাজার, গাজীপুর, পশ্চিম আগারগাঁও, কল্যাণপুর, সোবহানবাগ, তালতলা, আগারগাঁও গভর্নমেন্ট কোয়ার্টার, মিরপুর ১৪, ইব্রাহিমপুর, পূর্ব রাজাবাজার ফার্মগেট, পীরেরবাগ. নবোদয় হাউজিং মোহাম্মদপুর, পশ্চিম কাফরুল, শ্যামলি, আমিনবাজার, সেগুনবাগিচা, মিটফোর্ড, নবাবগঞ্জ, মহাখালী, মধ্য পাইকপাড়া, খিলগাঁও, দক্ষিণ পীরেরবাগ, শেখেরটেক, সবুজবাগ, কচুয়া চাঁদপুর, পশ্চিম নাখালপাড়া, লালমাটিয়া, কাজীপাড়া, দয়াগঞ্জ, মিরপুর দারুসসালাম, উত্তরা, মিরপুর, শ্যামলি মোহনপুর, মধ্য বাড্ডা, শ্যামলি আদাবর ও ময়মনসিংহ।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ও সহকারী অধ্যাপক ডা. রিজওয়ানুল আহসান জানান, কেবল শিশুই নয়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ডাক্তার, সাংবাদিক, উকিল, শিশু-বৃদ্ধসহ সব বয়সের মানুষেরই পিছু ছাড়ছে না এই চিকুনগুনিয়া। তবে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে দেখা গেছে যাদের অন্যরোগ আছে, তাদেরই চিকুনগুনিয়া বেশি কাবু করছে। যেমন ডায়াবেটিস, হার্ট, ফুসফুসসহ অন্যান্য সমস্যার রোগীদের এডিস মশা কামড় দিলে চিকুনগুনিয়া বা ডেঙ্গুজ্বর বেশি অসুস্থ করছে। তবে চিকুনগুনিয়ার কবল থেকে মুক্ত বস্তিবাসী। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ঢাকা শিশু হাসপাতালে যেসব শিশু চিকিৎসা নিতে আসছে, তাদের মধ্যে একজনও বস্তির বাসিন্দা নয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, আবহাওয়ার তারতম্যে হঠাৎ বৃষ্টি এবং রোধ হচ্ছে। বৃষ্টি হলেই পরিত্যক্ত পাত্রে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে এবং বংশ বৃদ্ধি করে। তাই পরিত্যক্ত পাত্র, ফুলের টব, টায়ার, ডাবের খোসা, এসির নিচসহ যেসব স্থানে এডিস মশা বাসা বাঁধে সেগুলোর দিকে নজর রাখতে হবে, যাতে এডিস মশা ডিম না পাড়ে। এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, চিকুনগুনিয়া নিয়ে আতঙ্কের কিছুই নেই। রোগটি এমনিতেই সেরে যায়। চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুজ্বরের তেমন চিকিৎসা নেই। নেই প্রতিষেধকও। জ্বর ও শরীর ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে। তবে সবথেকে বেশি খাওয়া প্রয়োজন পানিসহ তরল খাবার। বিশ্রামও খুবই দরকার। চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধই উত্তম। একটু সচেতন হলেই এই দুইটি রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। অর্থাৎ কোনো পাত্রেই যেন তিন-চারদিন স্বচ্ছপানি জমে না থাকে। শিশুদের দিনে মশারি টানিয়ে ঘুমাতে দিতে হবে।

জানা গেছে, রাজধানীতে বেশ কমাস ধরে শিশুসহ কয়েকশ মানুষ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। অনেক মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে চিকুনগুনিয়া নিয়ে। চিকিৎসকরা বলছেন, চিকুনগুনিয়া ভাইরাসটি ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণুবাহক এডিস মশা বহন করে। এডিস মশা ভোরে ও সন্ধ্যায় কামড়ায়। এডিস মশার কামড়ে এ রোগের প্রকোপ কেবল রাজধানীতেই বেড়েছে। চিকুনগুনিয়া আক্রান্তদের জ্বর, মুখে অরুচি, মাথাসহ শরীরের গিরায় গিরায় অনেকদিন প্রচ- ব্যথা হওয়ায় ভয় বেশি পাচ্ছে রোগীরা। কারণ এ রোগ সম্পর্কে মানুষের ধারণা কম। বেশি প্রচার হয়েছে ডেঙ্গুজ্বর সম্পর্কে। যদিও ডেঙ্গুজ্বর ও চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ ও চিকিৎসা অনেকটা একই রকম। পার্থক্য কেবল ডেঙ্গুজ্বরে গিরায় গিরায় ব্যথা করে না।