Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

পুলিশের তাড়ায় দিশাহারা জঙ্গিরা

জাহিদুল ইসলাম শিহাব॥ প্রিন্ট সংস্করণ

জুলাই ১৬, ২০১৭, ০৬:৪৩ এএম


পুলিশের তাড়ায় দিশাহারা জঙ্গিরা

কদিন আগেও বাংলাদেশে সকলপর্যায়ে মানুষের মধ্যে জঙ্গি নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় ছিল তুঙ্গে। এখন জঙ্গি আলোচনা কিছুটা কম। কারণ পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে জঙ্গিদের তৎপরতা কমেছে। লেজ গুটিয়ে জঙ্গিরা পালাচ্ছে এদিক-ওদিক। বেশিরভাগই আটকা পড়ছে পুলিশের হাতে। ছোট জঙ্গিদের কেউ কেউ গ্রামে আশ্রয় নিচ্ছে। তবে বড় জঙ্গিদের হদিস পাচ্ছে না খোদ পুলিশও। এসব জঙ্গি দেশে আছে নাকি বিদেশে পালিয়ে গেছে তার সঠিক তথ্য বা ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও পুলিশের অভিযানে জঙ্গিদের মেরুদ- ভেঙে পড়েছে। কিন্তু বড় জঙ্গিরা ধরা না পড়ায় দেশে জঙ্গিদের সংগঠন নব্য জেমবি আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার শঙ্কা রয়েছে। সুখবর হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের কঠোর নজরদারি ও তাড়া খেয়ে জঙ্গিরা রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরে না থাকতে পারায় ছুটে বেড়াচ্ছে দেশের মফস্বল এলাকায়। কিন্তু সোখানেও তারা রেহাই পাচ্ছে না। কোনো না কোনোভাবে পুলিশ তাদের আটক করছে। আটককৃতদের মধ্যে পুলিশের তালিকাভুক্ত জঙ্গি ছাড়াও রয়েছে সাধারণ জঙ্গিরাও। ফলে জঙ্গিরা এখন দিশাহারা। পুলিশের তাড়া খেয়ে পালিয়ে ভেড়াচ্ছে সীমান্তবর্তী এলাকাসহ দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। পুলিশ ও যৌথবাহিনীর আক্রমণে আতঙ্কিত হয়ে গেছে বাংলাদেশের জঙ্গিরা। ভয় পেয়ে এমনকি নারী সেজেও পালানোর মতো পদক্ষেপ নিচ্ছে তারা।

এদিকে জঙ্গিমুক্ত করতে দেশের সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গি ঘাঁটিগুলো খুঁজে ধ্বংস করছে। কিছু নেতিবাচক সমালোচনা থাকলেও জঙ্গি দমনে বিস্ময়কর সাফল্য দেখাচ্ছে পুলিশবাহিনী। বিশেষ করে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) জঙ্গি প্রতিরোধমূলক পরিকল্পনা ও কৌশল অসাধারণ। ইউনিটটি শুধু জঙ্গি আস্তানায় সফল অভিযান চালিয়েই সুনাম কুড়াচ্ছে না, বড় বড় জঙ্গিহামলা প্রতিরোধ এবং জঙ্গিদের আস্তানা দ্রুত খুঁজে বের করতেও কারিশমা দেখাচ্ছে। অবস্থাটা এমন– যেখানে জঙ্গি সেখানেই হাজির কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। অর্থাৎ জঙ্গিরা যতটাই বেপরোয়া তৎপরতা চালাতে চেষ্টা করছে পুলিশের এই ইউনিটটি তার থেকে বেশি শক্তি এবং প্রযুক্তি নিয়ে তা মোকাবিলা করছে। জঙ্গি দমনে এমন দক্ষতা ও নিষ্ঠা দেখাতে পারছে না উন্নত দেশগুলোও। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে কিছুদিনের ব্যবধানে তিনটি জঙ্গিহামলা হয়েছে, অথচ তা প্রতিরোধে ব্যর্থ সেদেশের পুলিশ। কিন্তু বাংলাদেশে এভাবে পরপর এমন হামলা চালাতে সক্ষম হয়নি জঙ্গিরা। পুলিশ তা শক্ত হাতে দমন করেছে। হলি আর্টিজানে হামলার পর থেকে একটি জঙ্গিহামলাও সফল হতে দেয়নি কাউন্টার টেররিজম। এ ঘটনার পর থেকেই বেশ নড়েচড়ে বসে পুলিশ। গতবছর থেকে এ পর্যন্ত দেশে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া সফলভাবে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র‌্যাব।

জঙ্গি দমনে তিনভাবে কাজ করছে ‘কাউন্টার টেররিজম ইউনিট’। ইন্টেলিজেন্স, প্রতিরোধ ও অপারেশন। জঙ্গিদের প্রতিরোধ করার জন্য রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরের বাড়ির ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সংগঠন, মসজিদ-মাদ্রাসার উপরও ছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি। ফলে দেশে জঙ্গি মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম।

এব্যাপারে জানতে চাইলে আইন ও সালিসকেন্দ্রের সাবেক কর্মকর্তা নূর খান বলেন, জঙ্গিরা সশস্ত্র হামলা চালায়, না হয় তারা আত্মঘাতী হয়। এ ক্ষেত্রে মোকাবিলা করা খুবই কঠিন। তারপরও আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শক্ত ভূমিকা পালন করছে। যে কারণে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত ভবিষ্যতে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে যেন নারী ও শিশুর মৃত্যু কম হয়, সেদিকে নজর রাখা।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক তছনছ হলেও প্রথম সারির আরও কয়েকজন বড় জঙ্গির অবস্থান নিশ্চিত করা এখনও সম্ভব হয়নি। ফলে জঙ্গিদের আবারও সংগঠিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তবে আশা করা যাচ্ছে শিগগিরই বড় জঙ্গিদের ধরা সম্ভব হবে।