Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

ছোট টেস্টে বড় কষ্ট রোগীদের

আফছার আহমদ রূপক॥প্রিন্ট সংস্করণ

সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৭, ০৫:৩৮ এএম


ছোট টেস্টে বড় কষ্ট রোগীদের

সরকারি হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসার জন্য আসে ছোটবড় সব পরীক্ষা করানোর আশায় এবং বেশিরভাগ পরীক্ষা করাতে পারছেও। হোক সেটি বিনামূল্যে কিংবা স্বল্পমূল্যে। কিন্তু বিপত্তি ঘটছে ছোটখাটো কিছু পরীক্ষায়। এই ছোট পরীক্ষার জন্য বড় ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে রোগীদের। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় এসে এত বড় বড় হাসপাতালে যদি এমন হয় তাহলে কেমন লাগে। অথচ তাই হচ্ছে। সামান্য প্রস্রাব পরীক্ষা, ব্লাড কালচার, জন্ডিসের পরীক্ষা, ইকো পরীক্ষারও ব্যবস্থা নেই ঢাকার অনেক বড় হাসপাতালেও।অথচ এসব পরীক্ষা এখন মামুলি ব্যাপার। যে কোনও ছোটখাটো প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে হচ্ছে। বড় হাসপাতালে এসব ছোট পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা গরিব রোগীরা নানা ঝামেলায় পড়ছে এবং প্রাইভেট হাসপাতাল কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে করাতে গিয়ে বাড়তি অর্থও খরচ করতে হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে রোগী নিয়ে অন্য হাসপাতালে যাওয়া কষ্টকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গত সপ্তাহে এমনই একটি বিরাট সমস্যায় পড়েছিলেন সজল মিয়া।

যদিও তার প্রকৃত নাম সিজিল মিয়া। ভুল করে হাসপাতালের রেজিস্টারে সজল লেখা হয়েছিল। এই সজল মিয়া রাজধানীর শেরেবাংলা নগর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগে বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. নরেশ চন্দ্রের অধীনে ভর্তি হয়েছিলেন। সজল মিয়ার অপারেশনের জন্য কয়েকটি টেস্ট দেওয়া হলো। দুয়েকটি এই হাসপাতালে করানোর ব্যবস্থা থাকলেও অন্যগুলো করাতে হবে অন্য প্রাইভেট হাসপাতালে কিংবা পাশের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এসব টেস্টের মধ্যে সামান্য জন্ডিসের পরীক্ষাও ছিল। দেশের একমাত্র হৃদরোগ বিশেষায়িত হাসপাতালে জন্ডিসের পরীক্ষা না থাকায় বিপাকে পড়লেন সজল মিয়া। কারণ তিনি তো ভাসকুলার সার্জারির রোগী। মানে রক্তনালিতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক না থাকায় সজলের পায়ের নিচের অংশ পচে গেছে এবং তাতে তিনি হাঁটতে পারছেন না। হুইল চেয়ারনির্ভর।

আর এজন্য বাইরের হাসপাতালে গিয়ে জন্ডিসের পরীক্ষা করাবেন কেমন করে। অবশেষে অন্য একটি প্রাইভেট হাসপাতালের কর্মী এনে তার শরীর থেকে রক্ত টেনে ওই প্রাইভেট হাসপাতালে করানো হয়েছে অনেক টাকা খরচ করে। অর্থাৎ সরকারি হাসপাতালে একটি জন্ডিসের পরীক্ষা যদি একশ টাকা হয় তাহলে প্রাইভেট হাসপাতালে ৪শ টাকা। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ৫০ টাকা মূল্যের সামান্য প্রস্রাব পরীক্ষারও ব্যবস্থা নেই। কাজেই পরীক্ষাটি করাতে হলে এ হাসপাতালের রোগীরা হয় প্রাইভেট হাসপাতালে নতুবা শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। আবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও কিছু পরীক্ষা হচ্ছে না।

সেগুলোর জন্য কখনও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে, কখনও বাইরের প্রাইভেট হাসপাতালে বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানো হচ্ছে রোগীদের। এতে দেখা যাচ্ছে প্রাইভেট হাসপাতালের কর্মীরা কিংবা সরকারি হাসপাতালগুলোতে অবস্থানরত দালালরা রোগী বাগানোর সুযোগ নিচ্ছে। ছোট পরীক্ষার জন্য এসে বড় পরীক্ষাগুলোও তাদের সেন্টারে করাচ্ছে কয়েকগুণ বেশি টাকায়। তাতে গরিব রোগীরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছে।

কেবল উল্লেখিত সরকারি হাসপাতালই নয়, একই এলাকার পঙ্গু হাসপাতাল ও চক্ষু হাসপাতালেও ছোটবড় কিছু পরীক্ষার জন্য রোগীদের অন্য হাসপাতালে গিয়ে কষ্ট পাওয়া ও অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য হচ্ছে। যেমন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালে উন্নত মান বজায় রাখতে এবং রোগীর স্বার্থের কথা চিন্তা করে অপারেশনের আগে হার্টের ইকো পরীক্ষা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পরীক্ষাটির ব্যবস্থা নেই। চিকিৎসক থাকলেও মেশিন নেই।

তাই ইকোর জন্য যেতে হচ্ছে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে কিংবা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। অথচ এই হাসপাতালে বড় বড় অপারেশন হচ্ছে এবং সুচিকিৎসার জন্য সুনাম রয়েছে। বিনামূল্যে ও স্বল্পমূল্যে হচ্ছে চোখের বড় বড় পরীক্ষাও। এসব হাসপাতাল ছাড়াও ঢাকা এবং বাইরের সরকারি হাসপাতালে এভাবে ছোটখাট পরীক্ষার জন্য রোগীদের বড় ভোগান্তি পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালগুলোর পরিচালকরা দাবি করেছেন সব ধরনের পরীক্ষাই হাসপাতালে হচ্ছে। তবে কখনও রি-এজেন্ট বা কাঁচামালের অভাব, কখনও যন্ত্রপাতির নষ্ট থাকায় দুয়েকটি ছোটখাট পরীক্ষার জন্য বাইরের হাসপাতালে বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীদের যাওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়।