Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

চালের বাজারে ফের অস্থিরতা

প্রিন্ট সংস্করণ॥ আহমেদ ফেরদাউন খান

সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৭, ০৬:২৪ এএম


চালের বাজারে ফের অস্থিরতা

আমদানি শুল্ক দুই দফা কমানোর পরও চালের বাজারে অস্থিরতা কমেনি। বরং ধীরে ধীরে বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে কেজিতে দাম বেড়েছে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ টাকা। আমদানি শুল্ক কমানোর পর সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি বেড়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই দাম কমেনি। নানা অজুহাতে চালের দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা জানান, গত মাসে চালের শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়। এর আগে জুনে শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। প্রথম দফায় শুল্ক কমানোর পর দুই টাকা কমেছিল। দ্বিতীয় দফায় শুল্ক কমালেও দাম কমেনি বরং বেড়েছে। মার্চ-এপ্রিল মাসে দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছিলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা হওয়ায় চাল আসছে না। তাই দাম বেড়েছে। অপরদিকে, পাইকারি চাল বিক্রেতারা মিল মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলছিলেন, মিল মালিকরা দাম বাড়ায় চাল গুদামজাত করেছে। তারা চাল বাজারে ছাড়ছেন না। দীর্ঘ ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও একই অভিযোগ রয়েছে ব্যবসায়ীদের। দেশে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও দাম কমেনি বরং বেড়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা চালের দাম তেমন কমেনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় মিলগুলো চালের দাম বাড়িয়েছে। এছাড়া পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে। ঈদের আগে রাজধানীর বাজারে যে দামে চাল বিক্রি হয়েছে, ঈদের পর তা থেকে কেজিপ্রতি পাইকারিতে ২ টাকা এবং খুচরায় ৩ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-র গতকাল দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতি কেজি সরু চালের দাম ৫২-৫৮, মিনিকেট ৫২-৫৫, নাজিরশাইল ৫৫-৫৮ টাকা। মাঝারি চাল ৪৭-৫০, পাইজাম/লতা (সাধারণ মানের) ৪৭-৪৮, পাইজাম/লতা (উন্নত মানের) ৪৭-৫০ এবং মোটা চাল ৪৩-৪৫ টাকা। তবে, টিসিবি সরবরাহকৃত দামের তালিকা থেকে বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি মিনিকেট ৫৬-৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে ছিল ৫৪-৫৬ টাকা। নাজিরশাইল আগে ৫৮-৬৪ টাকা, এখন ৬২-৬৬ টাকা। মাঝারি মানের চাল বিআর-২৮ ও লতা কেজিতে ২ টাকা বেড়ে ৫০-৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি ও আমদানি করা মোটা চাল ৪৩-৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বছর ঈদুল আজহার আগে পরিবহন সংকটের কারণে ভাড়া বেড়ে যায়। এ কারণে ব্যবসায়ীরা আগেই প্রস্তুতি নিয়ে বেশিরভাগ চাল মোকাম থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। জানা গেছে, এবারও বেশিরভাগ ব্যবসায়ী আগেই চাল এনেছেন। দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে বাড়তি পরিবহন ব্যয়ের অজুহাতও দেখাচ্ছেন।

মায়া টেডিং এজেন্সির স্বত্বাধিকারী আব্দুল হান্নান আমার সংবাদকে বলেন, দেশে বন্যা পরিস্থিতির কারণে চালের দাম বেড়েছে। এখন তা বস্তা প্রতি ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ঈদের আগে থেকে কেজি প্রতি ১ থেকে ২ টাকা বেড়েছে জানিয়ে বলেন, সামনের দিনে আরও বাড়তে পারে। বাবুবাজারের চাল ব্যবসায়ী জামান আমার সংবাদকে বলেন, চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। যে পরিমাণ প্রয়োজন সে পরিমাণ পাচ্ছি না। এছাড়া উত্তরাঞ্চলের বন্যা ও হাওর বিপর্যয়ের কারণে সরবরাহ কমেছে বলে তিনি জানান। বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বলেন, আগামী নভেম্বরের আগে নতুন ধান আসবে না। এ কারণে ধানের দাম বাড়ছে। বন্যায় উত্তরাঞ্চলের চালকলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এসব কারণে দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, আমদানিকৃত চালে শুল্ক কমালেও অন্যান্য বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তাহলে দাম স্বাভাবিক হবে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারি চালের মজুদ এক মাসে আড়াইগুণের বেশি হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারি গুদামে চালের মজুত ৬ লাখ টনের নিচে নামলে বাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অথচ খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকি বা অনিশ্চয়তা দূর করতে সরকার উদ্যোগী হয়েছে বেশ দেরিতে। উদ্যোগী হওয়ার পরও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাজকর্ম অত্যন্ত ধীর গতিতে চলছে। ১৫ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তিন মাসে আমদানি করে সরকারি গুদামে তুলতে পেরেছে মাত্র ১ লাখ ২৭ হাজার টন। এছাড়া দেশের ভেতরে ধান-চাল সংগ্রহের কাজে খাদ্য মন্ত্রণালয় ভয়ানক ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, ব্যর্থতার ফলে সরকারি খাদ্যগুদামে চালের মজুত বাড়ছে না। এত কাঠখড় পোড়ানোর পর এখন পর্যন্ত চালের সরকারি মজুতের পরিমাণ মাত্র ৩ লাখ ২১ হাজার টন। সরকারি মজুতের এই দীনতাই প্রকৃতপক্ষে চালের বাজারকে অস্থির করে রেখেছে বলে তারা মনে করেন।