Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

নানা সমস্যা ম্লান করছে আ.লীগের শত অর্জন

নূরে আলম জীবন॥প্রিন্ট সংস্করণ

সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৭, ০৯:৩৫ এএম


নানা সমস্যা ম্লান করছে আ.লীগের শত অর্জন

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় যাওয়ার পথ ধীরে ধীরে জটিল হয়ে যাচ্ছে। একের পর এক সমস্যা ম্লান করছে আওয়ামী লীগের শত অর্জন। পদ্মাসেতু, রেকর্ড পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন, বড় বড় উড়াল সেতু নির্মাণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলেও দেশি এবং আন্তর্জাতিক চাপ ও ষড়যন্ত্র, ষোড়শ সংশোধনীর রায়, ভয়াবহ বন্যা, রোহিঙ্গা ইস্যু দলকে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করা আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আগামী একাদশ নির্বাচনের দিকে যেতে হচ্ছে দেশের প্রাচীন এই রাজনৈতিক দলটিকে। স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া এই দলটির সামনের পথ ধীরে ধীরে যেন গভীর অন্ধকারে রূপ নিচ্ছে। চ্যালেঞ্জগুলো কঠিন হলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় এ সমস্যা থেকে উত্তোলন সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামী নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিলেও চাপ বাড়ছে। কারণ আগামী নির্বাচনে প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি যেকোনো মূল্যে অংশ নেবে।

এদিকে সরকারের কয়েকজন এমপি-মন্ত্রীর বেফাস কথা-বার্তায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে দলটিকে। আগামী নির্বাচন আর ‘৫ জানুয়ারির মতো হবে না উল্লেখকরে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাদের হুঁশিয়ার করেছেন’। প্রধান বিচারপতির সাথে দলের সিনিয়র নেতাদের আলোচনায় কোনও সমাধানে না আসতে পারা তৃণমূলে হতাশা সৃষ্টি করলেও ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানবিচারপতির সাক্ষাৎ আবার দলটিকে চাঙ্গা করেছে।

অন্যদিকে, এ ইস্যু নিয়ে বিএনপি ও তাদের নেতাকর্মীরা ফুরফুরে মেজাজে রাজনীতির স্লোগান দিলেও এখন পিছু হটছে। তবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিএনপিনেতারা প্রতিদিন গণমাধ্যমে নানা ধরনের কথা বললেও একাদশ নির্বাচন ইস্যুতে জোরালো ভূমিকা রাখছে না। সরকার ও দলের বিভিন্ন বিষয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখতে হয় বলে জানা গেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর ত্বরিৎ সিদ্ধান্ত ও মানবিকতা আজ বিশ্বে প্রশংসা কুড়িয়েছে। মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাইব্রিড ও অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করে তাদের বিষয়ে কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তৃণমূল আওয়ামী লীগে নিজের অবস্থান নড়বড়ে তবুও বিতর্কিত এমপি-মন্ত্রী এবং তাদের আত্মীয় স্বজনদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের কারণে বিপাকে পড়তে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। বিশেষ করে কোনও কোনও এমপি-মন্ত্রীর বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।

নরসিংদী সদর আসনের সংসদ সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হীরু (বীর প্রতীক) বর্তমান সরকারের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর নরসিংদী সদর থেকে মন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই তিনি আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের কোণঠাসা করার মিশনে নামেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে জামায়াত ও বিএনপিনেতাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার। এমনকি প্রতিমন্ত্রীর এপিএস মনিরুজ্জামান ছাত্রদলের ঢাকা মহানগরের সম্পাদকীয় পদে ছিলেন। শেরপুর ১ আসনের এমপি আতিউর রহমান আতিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তিনি নিজের পছন্দের লোকদের দলের বিভিন্ন পদে আসীন করছেন। ঢাকা-১৯ আসনের এমপি ডা. এনামুর রহমানের বিরুদ্ধে লাশ ফেলার স্বীকারোক্তিসহ অভিযোগ রয়েছে।

তিনি দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করছেন, বিভেদ তৈরি করছেন, উপদল তৈরি করছেন, আত্মীয়করণ করছেন। তিনি সম্প্রতি নিজ এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় সন্ত্রাসীদের ক্রসফায়ারে দিয়েছেন এবং বাকিদের দেয়ার জন্য তালিকা করেছেন- তার এমন বক্তব্য গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তাকে নিয়ে দল বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। ইয়াবা সম্রাট খ্যাত কক্সবাজারের আব্দুর রহমান বদিকে নিয়ে আওয়ামী লীগ এর আগেও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিল। বর্তমানে দুদকের মামলায় জামিনে থাকা এই এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই।

এ ধরনের বেশকিছু এমপিকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভাবতে হচ্ছে। আগামী নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ সফর ও কূটনৈতিক মিশন ঘিরে ক্ষমতাসীন দলটির গভীর দৃষ্টি রয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ততই চাপ বাড়ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। সকল দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন কিভাবে অনুষ্ঠিত হবে এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পুনরায় ক্ষমতায় আসা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর ভরসা দলটির নেতাদের।