Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

জঙ্গিরাই বলে দিচ্ছে জঙ্গি কোথায়

জাহিদুল ইসলাম শিহাব॥প্রিন্ট সংস্করণ

সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৭, ০৫:৩১ এএম


জঙ্গিরাই বলে দিচ্ছে জঙ্গি কোথায়

জঙ্গি অভিযান যেন বাংলাদেশের চলমান ইস্যু। রাজধানীসহ দেশের সকল শেণির মানুষের মধ্যে জঙ্গি নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা দিন দিন বেড়ে চলছে। কিছুদিন আগেও সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক তছনছ হয়ে গেছে। কিন্তু এখনও টপ লেভেলের কিছু জঙ্গি আত্মগোপনে থাকায় এখনো ভয় কাটেনি রাজধানীসহ দেশের মানুষের।

তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও বসে নেই। তারা বিভিন্ন কলা কৌশলে নিজেদের দক্ষতায় এবং আটককৃত জঙ্গি সদস্যদের মাধ্যমে তাদের আস্তানা খুঁজে বের করছে এবং প্রথম শ্রেণির কিছু জঙ্গিকে জীবিত কিংবা মৃত অবস্থায় আটক করতে সক্ষম হয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে জঙ্গিরাই এখন বলে দিচ্ছে কোথায় কোথায় তাদের আস্তানা রয়েছে। জঙ্গিদের তথ্য ও গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানের ভিত্তিতে অভিযান চালায় আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা।

এছাড়া দেশ ও দেশের বাইরে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অন্তত ১২ জন নব্য জেএমবি সদস্যের তথ্য রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। যারা সবাই নামের আগে পরে ‘আবদুল্লাহ’ নামে জঙ্গি কর্মকা-ে সক্রিয়। সম্প্রতি মিরপুর দারুস সালামে র‌্যাবের অভিযানের মুখে ‘আত্মঘাতী’ হয়ে ওঠা জঙ্গি আবদুল্লাহ নিহত হওয়ার পর নব্য জেএমবির পলাতক ‘আবদুল্লাহ’দের বিষয়ে নতুন করে খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

পুলিশ হেড কোয়ার্টারের এআইজি সহেলী ফেরদৌস আমার সংবাদকে বলেন, আটককৃত জঙ্গিদের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে এবং গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী আমরা অভিযান পরিচালনা করি। তবে বেশিরভাগই আমাদের অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে।

র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারের পরিচালক মুফতি মাহমুদ আমার সংবাদকে বলেন, আটককৃত জঙ্গিদের দেওয়া তথ্য ও আমাদের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। সর্বশেষ রাজধানীর মিরপুর দারুস সালাম বর্ধনবাড়ি এলাকায় গত মঙ্গলবার জঙ্গি আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করেন আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা। রাত থেকে শুরু হওয়া অভিযান শেষ হয় শুক্রবার বিকেলে। উদ্ধার অভিযান শেষে জঙ্গি আস্তানা থেকে বিস্ফোরণের পর সেখানে সাতজনের খুলি ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গসহ উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম।

এর আগে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভার মসিন্দা এলাকায় জঙ্গি আস্তানা থেকে সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটায় দুই জঙ্গিকে আটক করে র‌্যাব। আটককৃত দুই সহোদর হলো-মাসুদ ও খোকন। তবে ওই দুই সহোদর ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাত থেকে মিরপুরের দারুস সালামের ওই বাড়িতে অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানে জঙ্গি আব্দুল্লাহ ও তার পরিবার আত্মসমর্পণের জন্য সময় নিলেও রাত পৌনে ১০টার দিকে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আব্দুল্লাহ, তার দুই স্ত্রী, দুই সন্তান ও দুই সহযোগী আত্মাহুতি দেয়।

এদিকে র‌্যাবের সন্ধানে থাকা ‘ডন ভাই’ ও হোয়াইট কালার জেএমবি’র আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ থাকা ‘জঙ্গি ডন’ একই ব্যক্তি। মিরপুরের দারুস সালাম এলাকায় ‘জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের আগে আত্মসমর্পণ করানোর চেষ্টাকালে ‘ডন ভাই’ নামে এক ব্যক্তির কথা র‌্যাবকে জানিয়েছিল নিহত জঙ্গি আবদুল্লাহ। আর খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ এলাকা থেকে আটক দু’জনের একজন ‘হোয়াইট কালার জেএমবি’ সদস্য আনোয়ার হোসেন। যার সঙ্গে নব্য জেএমবি’র শীর্ষ নেতা ‘জঙ্গি ডন’ নামেরও একজন ছিল বলে জানায় সিটিটিসি। গত ৪ সেপ্টেম্বর রাত থেকে শুরু করে ৮ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টা পর্যন্ত মিরপুরের দারুস সালামে বর্ধনবাড়ি সড়কের ২/৩-বি নম্বর বাড়ি ‘কমল প্রভা’য় অভিযান চালায় র‌্যাব। বাড়িটি ঘিরে রাখার পর আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ চালিয়ে মারা যায় জেএমবি’র সারোয়ার-তামিম গ্রুপের ‘আল-আনসার’ সদস্য আবদুল্লাহসহ সাত জন।

অভিযান চলাকালে র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আব্দুল্লাহ ‘হোয়াইট কালার জেএমবি’। সে সরাসরি নাশকতার সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতো। তার বাসায় সারোয়ার-তামিম গ্রুপের শীর্ষ নেতা সারোয়ার জাহান, তামিম চৌধুরী, সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজসহ অনেক বড় বড় জঙ্গি আশ্রয় পেয়েছিল। আত্মঘাতী বিস্ফোরণে আব্দুল্লাহ মারা যাওয়ার আগে তাকে আত্মসমর্পণের চেষ্টা করে র‌্যাব। তখন তার সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা হয় র‌্যাব সদস্যদের। আর তখনই ‘ডন ভাই’ নামের একজন জঙ্গি নেতার বিষয়ে র‌্যাবকে জানিয়েছিল আবদুল্লাহ।

এদিকে, র‌্যাবের অভিযানে নিহত আবদুল্লাহ ও সিটিটিসি’র গ্রেফতার করা আনোয়ার দু’জনই ‘হোয়াইট কালার জেএমবি’। যারা প্রত্যক্ষভাবে কোনও নাশকতায় অংশ নেয়নি। কিন্তু তারা বিভিন্নভাবে জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়ে সহায়তা করেছে। বিভিন্ন বৈধ ব্যবসার আড়ালে তারা জঙ্গি তৎপরতা চালায়। ফলে তাদের খুব সহজে চিহ্নিত করা যায়নি। তবে তাদের ব্যাপারে খুব সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।