প্রিন্ট সংস্করণ॥মো. হাসান আরিফ
জানুয়ারি ৫, ২০১৮, ০৫:৪৮ এএম
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান থেকে শিল্পপ্রধান দেশে পরিণত হচ্ছে। এতে ধীরে ধীরে কৃষির অবদান কমে শিল্পের অবদান বাড়ছে। এই দেশকে কৃষিপ্রধান দেশ বলা হলেও বাস্তবে এখন আর তা নেই। সরকারি তথ্য অনুযায়ী মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিতে কৃষির অবদান যে হারে কমছে, একই হারে শিল্পের অবদান বাড়ছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্প্রসারণ শাখা ২-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে (জিডিপি) কৃষির অবদান কমতে কমতে ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশে নেমেছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল ১৬ দশমিক ৩৩ শতাং। আর ২০০৯-১০ অর্থবছরে ছিল ১৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। জানা গেছে, রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ও নদী ভাঙনের কারণে প্রতিবছরই আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। তাছাড়া বিভিন্ন সময় কৃষিপণ্যে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত না হওয়ায় কৃষকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। তাই জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান কমে আসছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের সরকারগুলো অর্থনৈতিক বিষয়ের চেয়ে রাজনৈতিক বিষয়গুলোর প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩০ দশমিক ৭৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩১ দশমিক ২৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২৯ দশমিক ৬১ শতাংশে এবং ২০০৯-১০ অর্থবছরে ২৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ ছিল। এছাড়া সেবা খাতের অবদানও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪৬ দশমিত ৬৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে হয়েছে ৫৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। তবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫৪ দশমিক ০৫ শতাংশ থেকে দশমিক ৬৬ শতাংশ কমেছে। এবং ২০০৯-১০ অর্থবছরে ছিল ৫৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ। অপর দিকে বর্তমানে বিদেশি সহায়তা জাতীয় আয়ের মাত্র এক শতাংশ। ১৯৮৮ সালে এই হার ছিল সাত শতাংশ। জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষির অবদান দিন দিন কমে আসছে। কৃষিপণ্যের যথাযথ বাজারব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারা এবং উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত না হওয়াই এর অন্যতম কারণ। ফলে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধিও কমছে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থ বছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৩৮০ বিলিয়ন টাকা। সেখানে কৃষি খাতের অবদান ১৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৮৭ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে জিডিপিতে এ খাতের অবদান ছিল ১৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। ২০১০-১১ অর্থবছরে এ অবদান ছিল ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং ২০০৯-১০ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১৫ দশমিক ৮১ শতাংশ।
পাশাপাশি বিগত বছরগুলোতে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধিও কমেছে হতাশাজনকভাবে। ডিসিসিআইর ওই গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯-১০ ও ১০-১১ অর্থবছরে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং ৫ দশমিক ০৯ শতাংশ। আর ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা নেমে আসে যথাক্রমে ১ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং ১ দশমিক ১৮ শতাংশে।২০০৭-০৮ অর্থবছরে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ছিল ১৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। সেখান থেকে ধারবাহিকভাবেই জিডিপিতে বাড়তে থাকে শিল্প খাতের অবদান। ২০১২-১৩ অর্থবছরে জিডিপিতে এর অবদান দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ।পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৭৭ শতাংশ। পরে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এ প্রবৃদ্ধি কমতে শুরু করে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে এটা দাঁড়ায় ৭ দশমিক ২১ শতাংশে ও ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছিল ৬ দশমিক ৬৮ এবং তার পরবর্তী অর্থবছরে তা ছিল ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।