প্রিন্ট সংস্করণ॥ আফছার আহমদ রূপক
জানুয়ারি ২০, ২০১৮, ০৬:৩৪ পিএম
একসময় হরতাল ছিল রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রধান হাতিয়ার। যেকোনও রাজনৈতিক বা অন্য ইস্যুতে হরতাল ডাকলে সারাদেশ অচল হয়ে যেতো। রাজপথে কিংবা দেশের কোথাও যানবাহন নামানো হতো না। রাস্তাঘাট থাকতো ফাঁকা। যানবাহনের অভাবে চরম দুর্ভোগ হতো মানুষের। গ্রাম থেকে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য আসা বন্ধ হয়ে যেতো রাজধানীতে। অর্থনীতির বাজতো বারোটা। এমনকী হরতালে সরকার পর্যন্ত পড়ে যেতো। পিকেটারদের ভয়ে ঘর থেকে বের হতো না মানুষ। হরতালের সমর্থনে রাজনৈতিক দলগুলোর মিছিল-মিটিং, পুলিশের ধরপাকড়, মামলা, গেপ্তারে রাজপথ থাকতো উত্তপ্ত। পিকেটারদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ এবং তাতে উভয় পক্ষের নিহত-আহতদের খবর ছিল নিত্যদিনের। পত্রিকায় বা টেলিভিশনেও এসব খবর ও দৃশ্য ফলাও করে প্রচার করা হতো। জনগণের জানমাল থাকতো চরম ঝুঁকিতে। আর এখন হরতাল ডাকলে রাস্তায় গাড়ি চলাচল করে স্বাভাবিকভাবেই। হরতালে থাকে যানজট। দুর্ভোগ নেই। বাজারে পণ্যের সরবরাহ থাকে স্বাভাবিক। নেই মিছিল-মিটিং, পিকেটিং, পুলিশের ধরপাকড়, মামলা, লাঠিচার্জ বা টিয়ারগ্যাস ছোড়ার চিরচেনা দৃশ্য। হরতালের এই শনিরদশা লেগেছে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের একবছর পূর্তিতে বিরোধী দল বিএনপির ডাকা টানা হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচির পর থেকে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন চেয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ডাকা টানা তিন মাসের অবরোধ হয়ে যায় প্রাণহীন। তিন মাসের অবরোধের সঙ্গে মাঝেমধ্যে হরতাল যুক্ত করেও সুবিধা করতে পারলো না দলটি। অবরোধ-হরতালে জনগণ বাধ্য হয়ে ঘর থেকে বেরুতে থাকে এবং হরতাল পরিণত হয় ‘নেই তালে’। সেই যে ‘নেই তালে’ পড়লো হরতাল তার ধারাবাহিকতা আজও আছে। গতবছরের শেষদিকে বামদল ও জামায়াতের হরতাল ছিল একেবারেই প্রাণহীন। রাস্তাঘাটে যানজট ও যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল দেখে কারো মনে হয়নি দেশে হরতাল চলছে। হরতালের এ ভঙুরদশায়ই বিএনপি বারবার আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু হরতাল ছাড়া বা অবরোধ দিলে তো যেই লাউ, সেই কদু। অর্থাৎ ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারির আন্দোলনের মতোই ভেস্তে যাবে বিএনপির ভবিষ্যৎ আন্দোলনও। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমি মনে করি না হরতাল প্রতিবাদের ভাষা। এটি অতীতেও আমাদের দেশে পালিত হয়েছে জোর করে। বর্তমানে দমন-পীড়নের কারণে হরতাল সফল হচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একাধিক নেতা আমার সংবাদকে বলেন, গত অবরোধ ও হরতালের ব্যর্থতার কথা মনে এলেই আর আন্দোলনের দিকে মন এগোতে চায় না। তাই বারবার ঘোষণা দেওয়ার পরও আন্দোলনে না নামার এটি একটি অন্যতম কারণও বলা যায়। তবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেনের দাবি অন্যরকম। আমার সংবাদকে তিনি বলেন, ২০১৫ সালের অবস্থায় আর এখন নেই বিএনপি। দলটির সাংগঠনিক শক্তি অনেক বেড়েছে। জনগণের কাছে বিএনপির জনপ্রিয়তাও বেশি। বিপরীতে দেশে হত্যা, গুম. মামলা-হামলা ও চাল-পেঁয়াজসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা কমেছে। তাছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কিনাÑ সেই শঙ্কাও করছে। তাই সহায়ক সরকারের দাবি আদায়ে হরতাল ডাকলে তাতে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি জনগণের সমর্থন পাওয়া যাবে এবং হরতালও সফল হবে।