Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ০৭ জুন, ২০২৫,

মধুমাসের ফলে বিষ আতঙ্ক

প্রিন্ট সংস্করণ॥হাসান-উজ-জামান

মে ১৫, ২০১৮, ০৬:১৬ পিএম


মধুমাসের ফলে বিষ আতঙ্ক

সবে শুরু মধুমাস। আর কদিনের মধ্যেই আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম ও আনারসসহ নানা ফলে ছেয়ে যাবে বাংলার প্রতিটি বাজার। কিন্তু এখনই রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা যাচ্ছে আগাম মৌসুমী ফল। ঘ্রাণ না থাকলেও টকটকে লাল। দেখতে নজরকাড়া। চোখ জুড়িয়ে যায়। দেখে বোঝার উপায় নেই এর বেশিরভাগই অপরিপক্ব। বিভিন্ন এলাকায় এসব ফল আগাম উৎপাদন হয় বলে ক্রেতার সঙ্গে দোকানির প্রতারণা। বেশি দামে কিনে বাড়িতে নিয়ে দেখা যায় এগুলো কাঁচা। অথবা নেই প্রকৃত স্বাদ। বেশি মুনাফার লোভে অনেক ব্যবসায়ী অপরিপক্ক অবস্থায় এসব ফল নিয়ে আসে বাজারে। পরে ফরমালিন কিংবা বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশিয়ে এগুলো বিক্রি করা হচ্ছে। গত ১ যুগ ধরে এর প্রবণতা বেশি দেখা যায়। তবে ভেজালবিরোধী অভিযানে ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি এবং জনসচেতনাতার কারণে এ ধরনের ঘটনায় গত ২ বছর ধরে অনেকটাই হ্রাস পেয়েছিলো। কিন্তু মৌসুম শুরুর আগেই অসাধু ব্যবসায়ীরা ফলে কেমিক্যাল মেশানো শুরু করেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দিতে পারেনি। ইতোমধ্যে কাঁচা আম পাকানোর জন্য কেমিক্যাল দিয়ে ম্প্রে-কালে ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধ্বংস করা হয় ৪শ মণের বেশি বিষাক্ত আম। বাজারগুলো এখন তরমুজে ভরপুর। রসালো এ ফলের এখন ভরা মৌসুম। বিভিন্ন ফলেই মাত্রাতিরিক্ত ক্যালসিয়াম কার্বাইড মিশিয়ে দ্রুত পাকানো হচ্ছে। এ ছাড়াও ইথাইলিন জাতীয় গ্যাস ও ইথারেল (এক ধরনের হরমোন) এবং নিষিদ্ধ ইথোফেন ব্যবহার করেও ফল পাকানো হচ্ছে। দ্রুত পচন ঠেকাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা তাতে মাত্রাতিরিক্ত ফরমালিন ব্যবহার করছেন। সবমিলিয়ে মৌসুমি লোভনীয় ফল এখন মারণঘাতী হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর বিষ মেশানো এসব ফল খাচ্ছে দেশের মানুষ।
ফল ব্যবসায়ীরা জানান, এখন রাসায়নিক পদার্থ মেশানো শুরু হয় ফল গাছে থাকতেই। গাছের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে প্রথমে দেওয়া হয় ‘প্ল্যান্ট গ্রোথ রেগুলেটর হরমোন’। অপরিপক্ব ফল সংরক্ষণ করে রাখা হয় বদ্ধঘরে। তারপর চলে দুই পর্যায়ে রাসায়নিক ব্যবহার। এর একটি সোডিয়াম কার্বাইড, অপরটি ফরমালিন। সোডিয়াম কার্বাইড মূলত ব্যবহার করা হয় কাঁচা আম পাকা করতে। আর ফরমালিন মেশানো হয় পচন রোধে। সিরিঞ্জ দিয়ে তরমুজের ভেতরে দেওয়া হয় তরল পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট। এর ফলে তরমুজের ভেতর থাকে লাল টকটকে। ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে পাকানো হয় কলা। অনেকেই এ বছর তরমুজ খেয়ে পেটে বিভিন্ন সমস্যায় ভুগেছেন। তরমুজ দেখতে লাল হলেও বিচি দেখে বোঝা যায় এটি অপরিপক্ক এবং কেমিক্যাল দিয়ে রং করা। বেশ কয়েক বছর ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্টরা ফলের আড়ৎ, ঢাকায় প্রবেশের আগেই ফলবাহী গাড়িতে এমনকী ফুটপাতের ছোটখাটো দোকানেও অভিযান চালায়। এতে করে অনেকাংশেই কমে গিয়েছিলো ফলে বিষ মেশানো। গত দুই বছরে নিরাপদে ফল খেতে পেরেছেন সবাই। কিন্তু চলতি মৌসুমের শুরুতেই প্রতারণায় মেতেছে অসৎ ব্যবসায়ীরা। তবে জানতে পেরে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সোচ্চার হয়ে ওঠে। গতকাল ভোর থেকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ফলের আড়ৎ থেকে ৪০০ মণের বেশি আম ধ্বংস করেছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ইথোফেন নামের বিষাক্ত হরমোন দিয়ে হলুদ (পাকা আমের মতো) করা এসব আম মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। বিষাক্ত এ রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করলে আমকে তরতাজা পাকা আমের মতো দেখায়, যা ফরমালিনের চেয়ে ভয়ানক। র‌্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে আদালত পরিচালনা করা হয়। সারওয়ার আলম বলেন, আড়তের অধিকাংশ আম হলুদ হলেও সেগুলোর ভেতরে আঁটি কাঁচা আমের মতোই। সরকার নির্ধারিত তারিখ না মেনে অধিক মুনাফার আশায় অপরিপক্ক আম ওষুধ দিয়ে পাকিয়ে বিক্রি করা হচ্ছিল। বিভিন্ন দোকানের আম পরীক্ষা করে দেখা গেছে, আমে বিষাক্ত ইথোফেন হরমোন স্প্রের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। সাধারণত কৃষিজমিতে ব্যবহার হলেও রমজানকে সামনে রেখে কাঁচা আম পাকাতে এই স্প্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি ফরমালিনের চেয়েও ভয়ানক। সরকারের আদেশ না মেনে ব্যবসায়ীরা গোপনে অপরিপক্ক আম সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠাচ্ছেন। এসব আমে স্প্রে দেওয়ায় ৮ জনকে সর্বনিম্ন ১ মাস ও সর্বোচ্চ ৩ মাসের কারাদ- দেওয়া হয়েছে।ভেজালবিরোধী আন্দোলনের রূপকার এক সময়ের সাড়া জাগানো ম্যাজিস্ট্রেট রোকন উদ-দৌলা বলেন, দেশ, জনগণ ও জাতির স্বার্থে ভেজালবিরোধী অভিযানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। পাশাপাশি সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। তিনি সবার আগে জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, আজ মানুষ ভেজাল সম্পর্কে সচেতন হয়েছে। গ্রামের একটি সাধারণ মানুষও আজ ফরমালিন, কার্বাইড এসব শব্দের সাথে পরিচিত। দুধে-মাছে এমনকী সবজিতেও যে ক্যামিকেল মেশানো হচ্ছে তা তারা জানতে পেরেছে। মানুষের এই জনসচেতনতা মূলত সৃষ্টি করেছে দেশের গণমাধ্যম। মিডিয়ার কারণেই মানুষ সচেতন হয়েছে। এর পেছনে মিডিয়ার অবদানের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। তাহলে মানুষ আরও সচেতন হবে। পাশাপাশি জনগণকে সরকারি কর্মকর্তাদের কাজে সহযোগিতা করতে হবে।