Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৬ মে, ২০২৫,

গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি : ৮ হাজার কোটির সুবিধা নিয়ে ব্যয় ১৫৩ কোটি

প্রিন্ট সংস্করণ॥মো. হাসান আরিফ

জানুয়ারি ২১, ২০১৯, ০৫:১৬ এএম


গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি : ৮ হাজার কোটির সুবিধা নিয়ে ব্যয় ১৫৩ কোটি

গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির জন্য সরকার থেকে বিজিএমইএ যে আর্থিক সুবিধা নিয়েছে তার সিকি ভাগও শ্রমিকদের দেয়া হয়নি। এই সুবিধার পুরোটাই যাবে মালিকদের পকেটে। আন্দোলনের মুখে গার্মেন্ট শ্রমিকদের গড়ে বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে ৩২০ টাকা। এই বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট মালিকদের বছরে ৪০ লাখ শ্রমিকের জন্য মজুরি বাবদ অতিরিক্ত ব্যয় হবে ১৫৩ কোটি টাকা। অন্যদিকে গার্মেন্ট মালিকরা সরকারের কাছ থেকে কর মওকুফ নিয়েছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।এ বিষয়ে এনবিআর সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের উৎসে কর কমানো হয়েছিল। তাদের দাবি ছিল শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য উৎসে কর কমানোর প্রয়োজন। তাই সরকার বিজিএমইকে উৎসে কর কমিয়ে দেয়।বিজিএমইএ গত বছরের (২০১৮) ডিসেম্বর মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) উৎসে কর কমানোর জন্য আবেদন করেছিল। তাদের দাবি ছিল, শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধিতে কারখানা সমস্যায় পড়বে। এ দাবিটি বিবেচনায় নিয়ে এনবিআর ১ জানুয়ারি একটি এসআরও জারির মাধ্যমে গার্মেন্টের আয়ের ওপর থেকে উৎসে কর ৩৫ পয়সা কমিয়ে দেয়। আগে ১০০ টাকা আয়ে উৎসে কর ছিল ৬০ পয়সা। এনবিআর কর কমিয়ে ২৫ পয়সায় নিয়ে আসে। এসআরওতে আরও বলা হয়, এই আদেশ কার্যকর হবে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে।উল্লেখ্য, গার্মেন্ট মালিকরা মোট আয়ের ওপর উৎসে কর দিয়ে থাকেন। এটিই তাদের চূড়ান্ত কর হিসাবে বিবেচনা করা হয়। যা ২০১৪-১৫ সালেও ছিল ১০০ টাকায় ৩০ পয়সা। কিন্তু চলতি বছর তার চেয়েও ৫ পয়সা কমে ২৫ পয়সা করা হয়েছে। এছাড়া রপ্তানির ওপর ৫ শতাংশ প্রণোদনাও পেয়ে থাকেন। রয়েছে বন্ড সুবিধা।বিজিএমইএ’র তথ্য অনুযায়ী, গতবছর বিজিএমইএ গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানি করে লাভ হয়েছে প্রায় ৩১ বিলিয়ন ডলার। এটিকে টাকায় রূপান্তর করলে গার্মেন্ট মালিকদের আয় প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এই টাকায় উৎসে কর ৩৫ পয়সা কমিয়ে দিলে গার্মেন্ট মালিকরা বছরে কর ছাড় পেয়েছেন প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে গার্মেন্ট শ্রমিকদের ৬টি গ্রেডে বেতন বৃদ্ধি করেছে সরকার। এরমধ্যে সর্বোচ্চ বেতন বৃদ্ধি হয়েছে ৭৪৭ টাকা আর সর্বনিম্ন ১৫ টাকা। এই বৃদ্ধির গড়ে শ্রমিকদের মোট বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে ৩২০ টাকা। বিজিএমইএ’র হিসাবে এই খাতে ৪০ লাখ শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। তাদের সবার বেতন বৃদ্ধির ফলে গড় হিসেবে মালিকদের মাসে শ্রমিকদের বর্ধিত বেতন দিতে হবে ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। বছরে যার পরিমাণ হয় প্রায় ১৫৩ কোটি টাকা। এ বিষয়ে সাবেক এনবিআর সদস্য ও অর্থনীতিবিদ আমিনুর রহমান বলেন, গার্মেন্ট মালিকদের শুধু কর ছাড়ই নয়, সরকার রপ্তানির ওপর প্রণোদনাও দিয়ে থাকে। তার উপরে রয়েছে বন্ড সুবিধা। তারা বিনা শুল্কে পণ্য আমদানি করে। এই ধরনের প্রণোদনা বছরের পর বছর দেয়া কোনো শিল্পের জন্যই ভালো না। কারণ তাতে শিল্পের ভিত তৈরি হয় না। গার্মেন্টশিল্প আমাদের এখানে প্রায় ৩০ বছর অতিক্রম করেছে। এখনো যদি তাদের সরকারি প্রণোদনায় টিকতে হয় তবে বলতে হয় এটি কোনো শিল্প হিসেবেই গড়ে উঠেনি।বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সালাম মোর্শেদী বলেন, আপনারা ভুল হিসাব করেন বলেই ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি হচ্ছে। আমরা উৎসে কর কতটুকু পেয়েছি। আর আমি বিদ্যুৎ বিল দেই কত? আর অন্যান্য খরচ করি কত? তা কি হিসাব করেছেন। তাই এভাবে একপেশে হিসাব করবেন না। এভাবে একপেশে হিসাব করলে ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি হয়।সরকারি মজুরি কাঠামো বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে সংশ্লিষ্টদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে ১৩ জানুয়ারি শ্রমিকদের স্বার্থে ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেড মজুরি সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এ মজুরি ঘোষণা করেন। এতে প্রথম গ্রেড ড ১৮ হাজার ২৫৭, দ্বিতীয় গ্রেড ১৫ হাজার ৪১৬, তৃতীয় গ্রেড ৯ হাজার ৮৪৫, চতুর্থ গ্রেড ৯ হাজার ৩৪৭ ও পঞ্চম গ্রেড ৮ হাজার ৮৭৫ ঘোষণা করা হয়।এর আগে গেল বছর সেপ্টেম্বরে মালিক-শ্রমিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে পোশাক খাতে সর্বনিম্ন ৮ হাজার টাকা মজুরি চূড়ান্তের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে এ মজুরি কার্যকর হবে বলে জানানো হয়। ওই সময় শ্রম প্রতিমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, পোশাক শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি হবে ৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে বেসিক ৪ হাজার ১০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ২ হাজার ৫০ টাকা এবং অন্যান্য ১ হাজার ৮৫০।এর আগে ওই বছরের ১৪ জানুয়ারিতে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিক-কর্মচারীদের নতুন মজুরি কাঠামো নির্ধারণে ন্যূনতম মজুরি কমিশন গঠন করে সরকার।প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ২০১৩ সালের নভেম্বরে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়। ঘোষণার এক মাস পর ডিসেম্বর থেকে তা কার্যকর হয়। সে অনুযায়ী এন্ট্রি লেভেলে একজন শ্রমিক নিম্নতম ৫ হাজার ৩০০ টাকা মজুরি পাচ্ছেন। এর অতিরিক্ত বছরে ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন শ্রমিকরা। কিন্তু পোশাক শ্রমিকরা ন্যূনতম বেতনেেচয়ে প্রস্তাব দিয়েছিল ১৬ হাজার টাকা।