Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

রাজধানীর উড়াল সড়ক উপরে অন্ধকার নিচে দখল!

প্রিন্ট সংস্করণ॥এনায়েত উল্লাহ

ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৯, ০৬:৩৭ পিএম


রাজধানীর উড়াল সড়ক উপরে অন্ধকার নিচে দখল!

রাজধানীবাসীর যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার বা উড়াল সড়ক নির্মাণ করেছে সরকার। সেই উড়াল সেতুর নৈসর্গিক সৌন্দর্য সাধারণ মানুষকে মুগ্ধ করার কথা ছিল। রাতের বেলায় যদি উড়াল সড়কের উপরের বাতিগুলো সঠিকভাবে জ্বলত তাহলে একটি নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারত রাজধানীবাসী। সাথে সাথে নিরসন হতো দুর্ঘটনা। কিন্তু রাজধানীর বিভিন্ন উড়াল সেতুতে রাতের বেলায় বাতিগুলো জ্বলছে না। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। শুধু এখানেই শেষ নয়, উড়াল সড়কের নিচের জায়গাগুলোও দখলে রেখেছে বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের লোকজন। যে কারণে উড়াল সড়কের নিচের সৌন্দর্যও নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে সে সব জায়গা ভাড়া দেয়ার মাধ্যমে আয় করছেন অর্থ। তবে এসব দখলদারদের অতি দ্রুত সময়ে উচ্ছেদ করবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন উড়াল সড়ক ঘুরে ও গাড়ির চালকদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। মগবাজার-মৌচাক উড়াল সড়কে গিয়ে দেখা গেছে, সড়কে স্থাপিত বাতিগুলো জ্বলছে না। উড়াল সড়কের বৈদ্যুতিক তার (কেবল) ও বাক্স চুরি হয়ে যাওয়ায় এরকম হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ফলে সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত অন্ধকার থাকছে ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই উড়ালসড়কটি। এ কারণে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। গতকাল সন্ধ্যার পর উড়াল সড়কের হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল-সাতরাস্তা, রাজারবাগ-মৌচাক, ওয়ারলেস-বাংলামোটর, হাতিরঝিল-সোনারগাঁও অংশ ঘুরে দেখা যায়, বিদ্যুতের খুঁটিগুলোয় বাতি জ্বলছে না। পুরো উড়াল সড়ক অন্ধকারাচ্ছন্ন। এ কারণে যানবাহন চলাচলেও সমস্যা হচ্ছে। উড়াল সড়ক দিয়ে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল প্রান্ত থেকে সোনারগাঁও প্রান্তে আসা চারটি গাড়ির চালকের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, গাড়ির হেডলাইট ছাড়া কিছু দেখা যায় না। হলি ফ্যামিলি-সাতরাস্তা উড়াল সড়কের মাঝখানে বিভাজক থাকলেও আলো না থাকায় তা দেখা যায় না। এতে বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়িগুলো দেখে মনে হয়েছে যেন মুখোমুখি সংঘর্ষ হবে। এতে চালকরা স্নায়ুর চাপেও পড়েন বলে জানান। টঙ্গী ডাইভারশন রোড এলাকার মোটরসাইকেল বিক্রয়কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা ও কয়েকজন দোকানি মন্তব্য করেন, রাত বাড়লে যখন চলাচলকারী যানবাহনের সংখ্যা কমে আসে, তখন উড়াল সড়কের উপরে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে। উড়াল সড়ক বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র মতে, এ পর্যন্ত চারবার বৈদ্যুতিক তার চুরি হয়েছে। বৈদ্যুতিক বাক্সগুলোও চুরি হয়েছে দফায় দফায়। প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়াল সড়কের তারগুলো একবার চুরি হলে প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়। সে হিসাবে চারবারে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় চার কোটি টাকা। এর সঙ্গে রয়েছে বৈদ্যুতিক বাক্স খোয়ানোর ক্ষতিও। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় উড়াল সড়কের বৈদ্যুতিক তার বারবার চুরি হয়ে যায় বলে মন্তব্য করেন মগবাজার এলাকায় বসবাসকারী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা সিদ্দিক। তিনি বলেন, শুনেছি এই উড়াল সড়ক নির্মাণে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। অথচ এর বৈদ্যুতিক তার চুরি ঠেকানোর জন্য সরকার পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করছে না। এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশলী মু. বজলুর রহমান বলেন, আমরা বুঝে নেয়ার সময় এ সমস্যা ছিল। আমরা বুঝে নেয়ার সময় বাতি নষ্ট পেয়েছি। বাতিগুলো ঠিক করার জন্য আমরা প্রজেক্ট তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পেলে তা পুনরায় ঠিক হয়ে যাবে বলে আশা ব্যক্ত করেন এই প্রকৌশলী। অন্যদিকে কুড়িল বহুমুখী ফ্লাইওভারেও দেখা গেছে একই অবস্থা। সেখানে প্রায় অধিকাংশ বাতিই জ্বলছে না। কিছু বাতি জ্বললেও সে আলো চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত না। আর এই অন্ধকারের সুযোগে ছিনতাই-রাহাজানিসহ ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। আর নিচের জায়গা দখল করে আছে অবৈধ দখলদাররা। কুড়িল থেকে পূর্বাচল যাওয়ার পথে চোখে পড়ে লক্কর-ঝক্কর গাড়ি। যা দখল করে রেখেছে উড়াল সড়কের নিচের জায়গা। এছাড়াও সন্ধ্যা হলেই আড্ডা জমায় নেশাখোররা। এতে একটু রাত হলেই এ পথে হাঁটতে ভয় পান সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে এ ফ্লাইওভারের নিচে ফার্নিচারের দোকানও চোখে পড়ে। যারা দীর্ঘদিন যাবত এখানে ব্যবসা করে আসছেন। তাদের এই দখলের কারণে গড়ে তোলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও নষ্ট হচ্ছে। ফুটপাত এখন এসব দখলদারদের দখলে। তাদের উৎপাতে সাধারণ মানুষ এখন দিশেহারা। সাধারণ মানুষ জানতে চায় কবে এসব এলাকা দখলমুক্ত হবে আর সাধারণ মানুষ হাফ ছেড়ে বাঁচবে। তবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র জামাল মোস্তফা আমার সংবাদকে বলেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই উচ্ছেদ করা হবে এসব অবৈধ দখলদারদের। সে যত প্রভাবশালীই হোক না কেন তা দেখা হবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে সঠিকভাবে উচ্ছেদ অভিযান চালানো যায়নি। সে কারণে তারা এখনো রয়ে গেছে। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, জাতীয় নির্বাচন, সিটি নির্বাচনসহ প্রায় সময় কিছু জটিলতা সামনে এসে যায়। যে কারণে তারা বহাল তবিয়তে থেকে যায়। তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন আগামী ৬ মাসের মধ্যে কুড়িল বহুমুখী ফ্লাইওভারকে দখলমুক্ত করা হবে এবং সকল সমস্যা সমাধান করা হবে। মূলত ২০০১ সালে উড়াল সড়কের কাজ শুরু হলেও এর বিপ্লব শুরু হয়েছে গত নয় বছর যাবত। ২০১০ সালের দিকে বিজয় সরণি উড়ালসেতু, ২০১৩ সালে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার ও কুড়িল বহুমুখী উড়ালসেতু চালু হওয়ার পর থেকেই মানুষ এর সুবিধা ভোগ করতে থাকে। তবে চালুকৃত উড়াল সড়কের প্রায় সবগুলোতে দখলের ঝামেলা রয়েছে। নিচের সৌন্দর্য নষ্ট করছে এসব দখলদাররা। বিশেষ করে যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান উড়াল সড়কে যাত্রাবাড়ী অংশে নিচের জায়গা দখল করে মাছ ও সবজির ব্যবসা করছে দেদার। এছাড়াও সে অংশে রয়েছে একটি মসজিদ। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনই বলেছে, খুব দ্রুতই এসব জায়গা দখলমুক্ত করে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হবে।