Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই কৃষিজমিতে পুকুর খনন

প্রিন্ট সংস্করণ॥মো. রফিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ থেকে ফিরে

ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৯, ০৬:২০ পিএম


প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই কৃষিজমিতে পুকুর খনন

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার কৃষিজমি খনন করে পুকুর তৈরি করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও প্রাশাসনকে ম্যানেজ করে ফসলি জমিতে পুকুর তৈরি করছেন তারা। এতে হুমকির মধ্যে পড়েছেন ওই অঞ্চলের অনেক কৃষক। তবে বিষয়টি মানতে নারাজ উপজেলা প্রশাসন। তারা বলছে, সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা না থাকার কারণে বন্ধ করা যাচ্ছে না পুকুর খনন। জানা যায়, তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে খাল-বিল, নয়নজুলি ও জলধারগুলো এখন সমাজের প্রভাবশালীদের দখলে। এসব দখল ও ভরাটের কারণে যেমন পরিবেশের ভারসাম্যতা নষ্ট হচ্ছে, তেমনি ওই অঞ্চলে বর্ষার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার। বিশেষ করে গণহারে ব্রিজের মুখে মাটি ফেলে মাছ চাষ ও বসতভিটা তৈরি করা হচ্ছে। খাল ভরাট করে সড়কের ধারে যেসব পুকুর খনন করছেন, তার পাড় হিসেবে সড়কগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে উপজেলার ২৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ৫-৬ বছরে উপজেলার আটটি ইউনিয়নে ৫১৫টি পুকরি খনন হয়েছে। যার কারণে ২০১৬ সালে জলাবদ্ধতায় দুই হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে রবিশস্য আবাদ করা সম্ভব হয়নি। ২০১৭ সালে জলাবদ্ধতার কারণে আরো তিন হাজার হেক্টর জমিতে রবিশস্য আবাদ কম হয়েছে। এ ছাড়া জলাবদ্ধতার কারণে একই বছর ২৯ হাজার বিঘা জমির রোপা আমন ধান পানিতে তলিয়ে একেবারে পচে যায়। ২০১৮ সালে বড় কোনো বর্ষা না হলেও জলাবদ্ধতার ক্ষেত্রে একই দৃশ্য দাঁড়ায় উপজেলাটিতে। অথচ প্রতিবারের মতো এবার খনন হচ্ছের পুকুর। চলতি মৌসুমে ২০ থেকে ২৫টি পুকুর খননের কাজ চলছে প্রকাশ্য। এই সকল কৃষিজমি খনন করে পুকুর তৈরির জন্য সরকার কর্তৃক কোনো ধরনের অনুমতিপত্র নেই তাদের কাছে। সরেজমিন উপজেলার বারুহাস এলাকাতে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দুই ধারে ক্ষীরা চাষ করেনে স্থানীয় কৃষক। তারা দাবি করছেন, এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু একপাশে দেখা যায় ফসলি জমির মধ্যে ড্রেজার দিয়ে পুকুর খনন করা হচ্ছে। শুধু বারুহাস এলাকাতেই নয়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় একই অবস্থা। দেদার খনন হচ্ছে পুকুর। তবে এভাবে পুকুর খনন হলেও ঠেকাতে পারছে না স্থানীয় প্রশাসন। অথচ উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছেন না। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলাকার প্রভাবশালীরা ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও স্থানীয় প্রাশাসনকে ম্যানেজ করে তারা পুকুর খনন করছেন। তাই তারা কোনো নিয়ম-নীতির তেয়াক্কা করছেন না। এসব পুকুরের মাটি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরিয়ে নেয়ার জন্য ব্যবহার করছে পাকা রাস্তাগুলোকে। যার কারণে পাকা রাস্তার কার্পেট উঠে গিয়ে যান চলাচল অনুপযোগী হয়ে গেছে। যা নিয়ে স্থানীয় সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। নাম প্রকাশ না সর্তে আমার সংবাদকে এক কৃষক বলেন, ক্ষমতা থাকলে সব হয়। নিয়ম-নীতি লাগে না। বিশেষ করে টাকা দিয়ে সব কাজ করা যায়। আবার মাঝে মধ্যে উপজেলা প্রাশাসন এসে কাজ বন্ধ করে দেন। অথচ রাত না যেতেই সকাল বেলা আবার কাজের অনুমতি পেয়ে যায়। ইউপি বা উপজেলা চেয়ারম্যানদের এ নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই। তিনি বলেন, ‘আপনিরা (সাংবাদিক) যারাই এখানে আশে সবাই টাকা খেয়ে চলে যায়। শুধু ক্ষতি হয় সাধারণ কৃষকের। বিশেষ করে আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষের। কথা বলে লাভ কী। টাকায় সব হয়।’ বারুহাস ইউনিয়ন পরষদের চেয়ারম্যান মোক্তার হোসেন মুক্তা আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমি বারবার মাসিক মিটিংয়ে বলেছি, কিন্তু পুকুর খনন বন্ধ হচ্ছে না। এটা খুবই দুঃখজনক।’ তিনি বলেন, ‘এভাবে পুকুর খনন হলে আমার অঞ্চলে একদিন কৃষিজমি থাকবে না।’ তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, প্রতি বছর যেভাবে পুকুর খনন হচ্ছে, এভাবে হতে থাকলে একদিন কৃষিজমি পাওয়া জাবে না। তিনি বলেন, খালবিল ভরাট করার কারণে প্রতিবার ফসলের ক্ষতি হয়। এতে কৃষক হতাশ হচ্ছেন। তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইফ্ফাত জাহান আমার সংবাদকে বলেন, পুকুর খননের মূল কারণ হচ্ছে সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতার অভাব। তবে পুকুর খনন রোধে আমরা খুব শক্ত অবস্থানে আছি। প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ করা হচ্ছে। এক তিনি বলেন, যারা পুকুর খননের জন্য ড্রেজার মেশিন নিয়ে আসে তাদের কাছে একটা লিখিত নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু কিছু মানুষ দিনের বেলায় খননকাজ বন্ধ রাখলেও রাতের বেলায় খননকাজ করছে বলে জানান তিনি।