Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

ডিএসসিসিতে নকশাবহির্ভূত দোকান

প্রিন্ট সংস্করণ॥ফারুক আলম

মার্চ ৯, ২০১৯, ০৬:৫৮ পিএম


ডিএসসিসিতে নকশাবহির্ভূত দোকান

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মালিকানাধীন ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেটে নকশাবহির্ভূত দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে নকশাবহির্ভূত দোকান নির্মাণ করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। এসব দোকান নির্মাণ বন্ধে বৈধ দোকান মালিকরা কয়েকদফা ডিএসসিসিকে অবহিত করলেও কোনো প্রতিকার পাননি, উল্টো হেয় ও লাঞ্ছনার শিকার হন অভিযোগকারীরা। বিষয়টি নিয়ে দোকান মালিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, গুলিস্তান-ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২-এর ব্লক-এ, ব্লক-বি এবং ব্লক সির ৮ তলা পর্যন্ত নির্মাণ শেষ। প্রত্যেক তলায় ওঠার জন্য যে কয়টি সিঁড়ি রয়েছে প্রত্যেকটি সিঁড়ির মুখে অবৈধভাবে দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক তলার করিডরেও নকশাবহির্ভূত দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের খাতা-কলমে ‘ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২’ নাম হলেও মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কাছে এটি সিটি প্লাজা, নগরপ্লাজা এবং জাকের প্লাজা হিসেবে পরিচিত। এই তিন মার্কেটের গলি, সিঁড়ির স্থান, লিফটের জায়গা, পার্কিং স্পেস, মার্কেটের পেছনের অংশ, এমনকী বাথরুমের জায়গা ভেঙেও দোকান বসানো হয়েছে। এতে মার্কেটের ভেতরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস নেই। সংশ্লিষ্টরা জানান, ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেটের প্রত্যেক তলায় নকশাবহির্ভূত দোকান নির্মাণ করে সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও মার্কেট সমিতির নেতারা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এতে বরাদ্দ পাওয়া বৈধ দোকান মালিকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। হেনস্তার ভয়ে এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে কথা বলার সাহস পান না তারা। ক্রেতাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে সিটি কর্পোরেশন নতুন মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নিলে কিছু অসাধু কর্মকর্তার এটি অবৈধ আয়ের উৎসহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার প্রকৃত দৃশ্য ডিএসসিসির ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২। এই মার্কেটে অবৈধ দোকান নির্মাণ এবং বেশকিছু দোকানের কাজ সম্পন্ন হলেও বরাদ্দকৃত ব্যক্তিদের বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে না। অথচ এসব দোকান থেকে প্রতিমাসে ভাড়া তোলা হচ্ছে। এছাড়াও ফুলবাড়িয়া মার্কেটের দোকানিরা মালিক সমিতির কাছে জিম্মি। মার্কেটে বরাদ্দ প্রাপ্তদের কোনো দোকান বিক্রি থেকে শুরু করে নামজারি কিংবা বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে গেলে লাগে মার্কেট সমিতির প্রত্যয়নপত্র।মার্কেট কমিটির হাতে ব্যবসায়ীরা জিম্মি- যার অসহায়ত্ব ফুটে ওঠে ফুলবাড়িয়া সিটি প্লাজার ব্যবসায়ী মো. মনির হোসেনের কথায়। তিনি আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমি ছোট ব্যবসায়ী, টুকটাক ব্যবসা করি, এই আর কি!’ কমিটির সদস্যরা যদি আজকে বলেন- কাল থেকে মার্কেটে আসতে পারবেন না, তাহলে তাই। এখানে একজন ছোট ব্যবসায়ী হিসেবে কিছুই করার নেই। মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ী লুৎফুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, ডিএসসিসির ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেটে অবৈধ দোকান নির্মাণ করে ভাগাভাগি করে টাকা নিচ্ছেন। মার্কেটের ভেতরের করিডর সংকুচিত করে দোকানের স্পেস বাড়ানো এমন অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে ডিএসসিসির কর্মকর্তা এবং মার্কেট সমিতির নেতারা জড়িত।সিটি প্লাজার এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রভাবশালীরা জোর করে সিঁড়ির মুখে অবৈধ দোকান নির্মাণ করে প্রত্যেকটি থেকে ৮-১০ লাখ টাকা নিয়েছেন। ভাড়া বাবদ প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা নেয়া হয়। এসব ছোট দোকানে ব্যবসা ভালো হওয়ায় দ্রুতই ভাড়া হয়ে যায়। এই অবৈধ আয়ের বড় একটি অংশ ডিএসসিসির অসাধু কর্মকর্তাদের পকেটে চলে যাচ্ছে। সাধারণ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ডিএসসিসির পেছনেই ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২। মার্কেটটিতে নকশাবহির্ভূত দোকান নির্মাণ হচ্ছে- সিটি কর্পোরেশন জানে না, এটি অসম্ভব। এসব দোকান নির্মাণে ডিএসসিসির ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টর জড়িত আছে। এমনকী যে নির্বাহী প্রকৌশলী মার্কেট নির্মাণের দায়িত্বে আছেন তাকে ঘুষের বিনিময়ে ম্যানেজ করে মার্কেট সমিতি। ফলে ডিএসসিসির ওই নির্বাহী প্রকৌশলী নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সিঁড়ির মুখে দোকান নির্মাণ করে দিচ্ছেন।সিঁড়ির ফাঁকে অবৈধ দোকান নির্মাণের ব্যাপারে ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট কমিটির অর্থ সম্পাদক রাজু আহম্মেদ আমার সংবাদকে বলেন, এটি কমিটির সভাপতি ও সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্টরা বলতে পারবেন। এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না। তবে মার্কেট কমিটির একজন সদস্য হিসেবে যতটুকু বলতে পারি সেটি হচ্ছে, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করতে মার্কেট কমিটি এসব ছোট্ট দোকান বসানোর অনুমতি দেয়।ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট কমিটির সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আমার সংবাদকে বলেন, ডিএসসিসির অনুমোদন ছাড়া কোনোভাবেই সিটি কর্পোরেশনের পেছনে অবৈধ দোকান নির্মাণ সম্ভব নয়। প্রতিমাসে দোকানের জন্য নির্ধারিত ভাড়া নেয়া হয়।
নকশাবহির্ভূত দোকান নির্মাণের ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার আমার সংবাদকে বলেন, ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২-এর ৮ তলা পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের মার্কেটে অবৈধ দোকান নির্মাণ, এটি ভালো দৃষ্টান্ত নয়। এ ব্যাপারে ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২-এর দোকান নির্মাণের দায়িত্বে আছেন ডিএসসিসির অঞ্চল ৪-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম। তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারবেন। পরে সাইফুল ইসলামের সঙ্গে দুদিন যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি।নগর বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারি টাকায় তৈরি করা মার্কেট সমিতির নামে এভাবে অবৈধ দোকান নির্মাণ আইনগত কোনো সুযোগ নেই। এসব নামসর্বস্ব সমিতির বেশিরভাগ নেতাকর্মী অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে অবৈধ দোকান নির্মাণের সুযোগ দেয়।প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালে ফুলবাড়িয়া মিউনিসিপ্যাল সুপার মার্কেটের ‘এ’ ব্লকে বেইজমেন্টে ব্যবসায়ী সমিতির ক্ষতিগ্রস্ত সদস্যদের মাঝে ১৭৬ জনকে টোলের বিনিময়ে অস্থায়ীভাবে ব্যবসা করার অনুমতি দেয়া হয়। একই বছরে বেইজমেন্টের ‘বি’ ব্লকে ১৭৬ ও ‘সি’ ব্লকে ১৭৬ জনকে অস্থায়ী ব্যবসা করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। মার্কেটের ‘এ’ ব্লকের নিচতলায় ১৯৯৪ ও ২০০৬ সালে মোট ৯৮ জনকে, মার্কেটের ‘বি’ ব্লকে ১১৭ জনকে ও ‘সি’ ব্লকে ১৭২টি দোকান সালামির মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়া হয়।এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র সাঈদ খোকন ও ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট সমিতির সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন দিলুর ব্যক্তিগত মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা ফোন ধরেননি।