Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

ভেতরে-বাইরে ফুটবল ইশ্বর

নভেম্বর ২৭, ২০২০, ১০:১৫ এএম


ভেতরে-বাইরে ফুটবল ইশ্বর

ফুটবল মাঠে তার দক্ষতা আর প্রতিভা দেখে ফুটবল দুনিয়া তার নামের পাশে খেতাব দিয়েছিলো ফুটবলের ইশ্বর। অসম্ভব ফুটবলের কারুকাজে তিনি মুগ্ধ করেছিলেন ফুটবল বিশ্বকে। আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে ম্যারাডোনা টানা চারটি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে ১৯৮৬ বিশ্বকাপে জোড়া গোল করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপ জয় করার পাশাপাশি ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে রানার-আপ হয় আর্জেন্টিনা। কোটি ভক্তকে কাদিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২৫ নভেম্বর ২০২০ তারিখে নিজ বাসায় মারা যান তিনি। ম্যারাডোনার পুরো নাম দিয়েগো আরমান্দো মারাদোনা। ১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর আর্জেন্টিনার বুয়েনোস আইরেসে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তিন কন্যা সন্তানের পর চতুর্থ সন্তান হিসেবে ম্যারাডোনার জন্ম। বাবা দিয়োগো ম্যারাডোনা সিনিয়র এবং মা দালমা সালভাদর ফ্রাঙ্কো। স্ত্রী ফিয়ান্সি ক্লদিয়া ভিয়াফানিয়ে। দালমা নেরেয়া ও হিয়ানিয়া দিনোরাহ নামের দুই মেয়ে এবং দিয়েগো ফেরন্যান্দো নামের এক ছেলে রয়েছে তার। এই ফুটবল জাদুকরকে নিয়ে লিখেছেন ক্রীড়া প্রতিবেদক রাজিবুল ইসলাম

বল বয় থেকে ফুটবল ইশ্বর

[media type="image" fid="99021" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

ছোট বেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি ম্যারাডোনার আকর্ষণ ছিল। ম্যারাডোনার বয়স তখন ১০ বছর। ১৯৭১ সালের সে সময় তিনি এস্ত্রেয়া রোজার হয়ে খেলতেন। এসময় এক স্কাউটের নজড়ে পড়েন ম্যারাডোনা। এই স্কাউট এর সহায়তায় ম্যারাডোনা ‘দ্য লিটল অনিঅন’ যার অপর নাম ‘আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স’ এর সাথে যুক্ত হন। প্রথম দিকে খেলোয়াড় হিসেবে নয়, একজন বল বয় হিসেবে কাজ করতেন ম্যারাডোনা। ম্যারাডোনার বয়স যখন ১২ বছর সে সময় আর্জেন্টিনার প্রথম বিভাগের খেলার অর্ধ-বিরতির সময় বল নিয়ে জাদুকরী সব কারুকার্য দেখিয়ে তিনি সবার নজড়ে চলে আসেন। পরবর্তীতে ১৯৭৬ সালের ২০ অক্টোবর ‘আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স’ এর একজন নিয়মিত খেলোয়াড় হিসেবে ম্যারাডোনার অভিষেক ঘটে। এরপর মাত্র ১৬ বছর ১২০ দিন বয়সে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হয় তার। আর্জেন্টিনা দলের অন্য খেলোয়াড়দের তুলনায় তিনি ছিলেন খর্বকায়, মাত্র ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি লম্বা। তার শরীরের গঠনও একজন এ্যাথলেটের মতো ছিল না। কিন্তু তার বল কন্ট্রোল, ড্রিবলিং, দক্ষতা এত মসৃণ ছিল, পাস দেবার ক্ষমতা আর দ্রুততা এত বিস্ময়কর ছিল যে তার সেসব অসম্পূর্ণতা তাতে চাপা পড়ে যেত। ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপে তিনি মন্ত্রমুগ্ধ করে দিয়েছিলেন গোটা ফুটবলবিশ্বকে। আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সেবার তার নেতৃত্বে এবং একক নৈপুণ্যে।

ম্যারাডোনার ‘হ্যান্ড অব গড’

[media type="image" fid="99020" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

১৯৮৬ বিশ্বকাপটা ছিল ম্যারাডোনার বিশ্বকাপ। আর ওই বিশ্বকাপ আলোচিত-সমালোচিত হয়ে আছে ডিয়াগো ম্যারাডোনার ‘হ্যান্ড অব গড’ এর কল্যাণে। সেই বিশ্বকাপেই বিশ্ববাসী ম্যারাডোনার কাছ থেকে দেখেছিল ইতিহাস কাঁপানো দুই গোল। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ডের। ম্যাচে দুই পক্ষের আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্যভাবে। কিন্তু ম্যাচের ৫১ মিনিটে লাফিয়ে উঠে গোল করেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক ম্যারাডোনা। গোল করার পরপরই ম্যারাডোনা তার সতীর্থদের সঙ্গে গোল উদযাপনে মেতে ওঠেন। অবশ্য ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক পিটার শিলটনসহ চার-পাঁচজন ইংলিশ ফুটবলার গোল বাতিলের দাবি জানিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন রেফারির দিকে। কিন্তু ব্যাপারটি রেফারি সত্যিই বুঝে উঠতে পারেননি। পরে টেলিভিশন রিপ্লেতে দেখা যায়, গোলটি করার সময় ম্যারাডোনা হাত ব্যবহার করেন। ম্যারাডোনা পরে, এটি স্বীকার করে নিয়ে ‘হ্যান্ড অব গড’ বলে অভিহিত করেন। এই বিতর্কিত গোলের পর আরেক অবিশ্বাস্য গোলের সাক্ষী হয় দর্শকরা।

ম্যারাডোনা ও ফিদেল কাস্ত্রো

[media type="image" fid="99023" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

আর্জেন্টাইন ফুটবল ইশ্বর ম্যারাডোনার দুঃসময়ের বন্ধু ছিলেন কিউবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফিদেল কাস্ত্রো। ফুটবলবিশ্বে এমনটিই মানা হয়। ১৯৮৬ সালে প্রথমবার কিউবা সফরে গিয়ে বিপ্লবী কাস্ত্রোর রাজকীয় সংবর্ধনা পান ম্যারাডোনা। তখন থেকেই বন্ধুত্ব তাদের। বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে কাস্ট্রোকে ১০ নম্বর জার্সি উপহারও দিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। একবার মাদকাসক্ত ম্যারাডোনার জীবন সংকটে পড়ে। তখন কাউকে পাশে না পেলেও বন্ধু কাস্ত্রোই এগিয়ে আসেন। সেই সময় ম্যারাডোনাকে নিজ দেশে আশ্রয় দেন কাস্ত্রো। লা পেড্রেরা ক্লিনিকে ব্যবস্থা করে দেন ম্যারাডোনার রিহ্যাবের। সেই সময় কাস্ত্রো এগিয়ে না এলে ম্যারাডোনাকে প্রাণে বাঁচানো যেত না বলে মন্তব্য করেছেন বহু ফুটবলবোদ্ধা ও ম্যারাডোনার ঘনিষ্ঠজন। আর ফিদেল কাস্ত্রো ও ম্যারাডোনার এই বন্ধুত্বকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে এক কাকতালীয় ঘটনা। তা হলো- এই দুই কিংবদন্তির একই দিনে মৃত্যু। ফারাক শুধু ৪ বছরের। ২০১৬ সালের ২৫ নভেম্বর মারা যান কিউবার প্রধানমন্ত্রী ফিদেল কাস্ত্রো। আর ঠিক চার বছর পর ২৫ নভেম্বর ২০২০ মারা যান ম্যারাডোনা।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার

[media type="image" fid="99024" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

১৯৭৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৬ বছর বয়সে হাঙ্গেরির বিপক্ষে মারাদোনার অভিষেক হয় ম্যারাডোনার। ১৯৭৯ সালে ১৮ বছর বয়সে তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে ফিফা বিশ্ব যুব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিযোগিতার ফাইনালে সোভিয়েত ইউনিয়নকে ৩১ গোলে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। ১৯৭৯ সালের ২ জুন, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে সিনিয়র দলের হয়ে প্রথম গোল করেন মারাদোনা। তিনিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি ১৯৭৯ সালের ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ ও ফিফা ১৯৮৬ বিশ্বকাপ উভয় প্রতিযোগিতায় গোল্ডেন বল জিতেছেন। মারাডোনার ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা ছিল ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপ। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মারাডোনা। প্রতিযোগিতার ফাইনালে পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। ১৯৯০ বিশ্বকাপে পুনরায় আর্জেন্টিনার অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন মারাডোনা। কিন্তু গোড়ালির ইনজুরির কারণে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের মত নৈপূন্য তিনি দেখাতে পারেননি। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে মারাদোনা শুধুমাত্র দুইটি খেলায় মাঠে নামেন। এর মধ্যে গ্রীসের বিপক্ষে তিনি একটি গোল করেন। ১৯৯৪ বিশ্বকাপের পর মারাদোনার ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি ঘটে। পুরো ক্যারিয়ারে তিনি ৯১ খেলায় ৩৪টি গোল করেন।

অবসর এবং সম্মাননা

[media type="image" fid="99025" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

১৯৯৪ বিশ্বকাপের পর মারাদোনার ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি ঘটে। পুরো ক্যারিয়ারে তিনি ৯১টি খেলায় ৩৪টি গোল করেন। ১৯৯৯ সালে আর্জেন্টিনার কনেক্স ফাউন্ডেশন তাকে হীরক কনেক্স পুরস্কার প্রদান করে যা আর্জেন্টিনার অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ সাংস্কৃতিক পুরস্কার। ২০০০ সালে, ফিফা মারাডোনাকে শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত করে। ২০০২ সালে সমর্থকদের ভোটে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মারাডোনার করা দ্বিতীয় গোলটি ফিফা বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেরা গোল নির্বাচিত হয়। ২০১০ সালের ২২ মার্চ লন্ডনভিত্তিক সংবাদপত্র দ্য টাইমস তাকে বিশ্বকাপের সেরা দশ জন খেলোয়াড়ের তালিকায় প্রথম স্থান প্রদান করে। ২০০৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স মারাডোনার প্রতি সম্মান জানিয়ে তার নামে তাদের স্টেডিয়ামের নামকরণ করে।

কোচিং ক্যারিয়ার

[media type="image" fid="99026" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

মারাডোনা তার প্রাক্তন আর্জেন্টাইন মিডফিল্ড সতীর্থ কার্লোস ফ্রেনের সাথে কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেন। তেক্সতিল মান্দিইউ ১৯৯৪ এবং রেসিং ক্লাবের ১৯৯৫ হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালে দুবাইয়ের ক্লাব আল ওয়াসলের কোচ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ২০০৮ সালে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচ আল্ফিও বাসিল পদত্যাগ করলে আর্জেন্টিনার কোচ হিসেবে যোগ দেন মারাদোনা। তার অধীনে ২০১০ সালে বিশ্বকাপ খেলে আলবিসেলেস্তেরা। তবে সেবার আর্জেন্টিনা ঘরে ফেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে, জার্মানির বিপক্ষে হেরে। আল-ওলাসল ক্লাবের হয়ে ২০১১-১২, দেপোর্তিবো রিয়েস্ত্রায় সহকারী কোচ হিসেবে ২০১৩-২০১৭, ফুজাইরাহর হয়ে ২০১৭-১৮, দোরাদোস সিনালোয়া হয়ে ২০১৮-১৯ এবং লা প্লাতার হয়ে ২০১৯-২০ পর্যন্ত কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বক্সিং খেলোয়াড় ম্যারাডোনা

[media type="image" fid="99027" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

ফুটবলের পাশাপাশি বক্সিংয়েও হাতেখড়ি রয়েছে ম্যারাডোনার। খেলোয়াড়ি জীবনে মাঝেমধ্যেই বক্সিং রিংয়ে দেখা যেত আর্জেন্টাইন এই কিংবদন্তিকে। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ প্রস্তুতির সময় নিয়মিতই খেলতেন বুয়েনস এইরেসের সাবেক বক্সারদের বিপক্ষে। স্পেনের করডোবায় একটি চ্যারিটি ম্যাচে আর্জেন্টিনার সাবেক চ্যাম্পিয়নস ফালুচো লুসিয়ারের বিপক্ষে লড়ছিলেন ম্যারাডোনা। সে সময় চলে এসেছিলেন সাফল্যম-িত ফুটবল ক্যারিয়ারটার প্রায় শেষভাগে।

নারী বিতর্কে ম্যারাডোনা

[media type="image" fid="99028" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

নতুন নতুন সব গার্লফ্রেন্ড নিয়ে কয়েক দিন পর পরই নতুন নতুন শিরোনাম হতেন ম্যারাডোনা। তবে জীবনে একবারই বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন তিনি। ১৯৮৪ সালে ক্লদিয়ার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ম্যারাডোনা। দীর্ঘ ২০ বছর পর ২০০৪ সালে ক্লদিয়ার সাথে ম্যারাডোনার বৈবাহিক সম্পর্কের ইতি ঘটে। কাগজে কলমে তাদের সম্পর্ক বিচ্ছেদ হলেও ম্যারাডোনা ও ক্লদিয়াকে এরপরও একসাথে দেখা গেছে। ম্যারাডোনা ও ক্লদিয়ার সংসারে রয়েছে দালমা ও জিয়ান্নিনা নামে দুই মেয়ে। ম্যারাডোনা তার বিয়ের অল্প কয়েকদিন পরই ইতালিয় ক্লাব নাপোলিতে খেলার সময় ক্রিস্টিনা সিনাগ্রা নামে এক ইতালীয় তরুণীর প্রেমে পড়েন। ১৯৮৬ সালে ক্রিস্টিনা সিনাগ্রার গর্ভে ডিয়েগো সিনাগ্রা নামে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। তবে ডিয়োগো সিনাগ্রাকে ম্যারাডোনা প্রথমে স্বীকার করেনি। পরে নানা ঘটনার মধ্যে দিয়ে গিয়ে ম্যারাডোনাকে ডিয়োগো সিনাগ্রাকে স্বীকৃতি দেন। ২০১০ সালে ম্যারাডোনার জীবনে আসে ভেরোনিকা ওজেদা নামে এক আর্জেন্টাইন মডেল। ম্যারাডোনা ও ওজেদার প্রথম সন্তান দুর্ঘটনাজনিত কারণে নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে ডিয়োগো ফার্নান্দো নামে ম্যারাডোনা-ওজেদার সংসারে আসে দ্বিতীয় সন্তান। এই সন্তান নিয়েও ম্যারাডোনা যথেষ্ট বিতর্ক সৃষ্টি করে। প্রথম প্রথম মেনে না নিলেও পরবর্তীতে ছেলেকে প্রথম এক বছর জনসম্মুখে না আনার শর্তে মেনে নেন। কিন্তু ভেরেনিকা ওজেদা শর্ত ভঙ্গ করে টুইটারে ছেলের ছবি পোস্ট করেন। যার ফলশ্রুতিতে ম্যারাডোনা উকিল নোটিশ পাঠায় ভেরেনিকা ওজেদার কাছে। ভেরোনিকার সাথে সম্পর্ক পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই রোসিও ওলিভা নামে নতুন এক নারী আসে ম্যারাডোনার জীবনে। ম্যারাডোনার অর্ধেক বয়সেরও কম বয়সী ওলিভার সাথে ম্যারাডোনার পরিচয় হয় ২০১০ সালে। তবে সেসময় তাদের মধ্যে সম্পর্কটা তেমন ডালপালা মেলেনি। 

ডোপ টেস্ট ও মাদক কেলেঙ্কারি

[media type="image" fid="99029" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

ফুটবল ক্যারিয়ারে বরাবরই দাপট দেখানো ম্যারাডোনা অবশ্য বিতর্ককে স্থায়ী সঙ্গী হিসেবে নিয়েছিলেন। বিশেষ করে মাদক এক সময়ে তার সবচেয়ে কাছের বস্তু হিসেবে পরিণত হয়েছিল। ম্যারাডোনা ১৯৮০‘র দশকের মাঝামাঝি থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত কোকেনের প্রতি আসক্ত ছিলেন। তিনি ১৯৮৩ সালে বার্সেলোনায় খেলার সময় থেকেই মাদক নিতে শুরু করেন। পরে নাপোলিতে খেলার সময়ও তিনি নিয়মিত মাদক ব্যবহার করতে। যা তার ফুটবল ক্যারিয়ারে আঘাত হানতে শুরু করে। দিনের পর দিন তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। ২০০৪ সালে চিকিৎসকরা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন যে অতিরিক্ত কোকেন সেবনের কারণে ম্যারাডোনা মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশনের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। ২০০৫ সালের ৬ মার্চ কলম্বিয়ায় তার অস্ত্রোপচার করা হয়। ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ ম্যারাডোনাকে পুনরায় বুয়েনস আইরেসে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পরবর্তী কিছু দিনে তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে কিছু গুজব ছড়িয়ে পড়ে, এমনকি একই মাসে তিনবার তার মৃত্যুর গুজব ছড়ায়। ১৯৯১ সালে ইতালিতে ড্রাগ টেস্টে কোকেনের জন্য ধরা পড়ায় ১৫ মাসের জন্য ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ হন তিনি। আর ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ইফিড্রিন টেস্টে পজিটিভ ফলাফলের জন্য তাকে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেওয়া হয়। 

রাজনৈতিক দর্শন

[media type="image" fid="99030" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

২০০৭ সালে মারাডোনা আর্জেন্টিনার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নেস্তর কির্শনারকে একটি স্বাক্ষরকৃত শার্ট উপস্থাপন করেন। এর আগে তিনি আর্জেন্টিনার নব্যউদারনীতিবাদী প্রেসিডেন্ট কার্লোস মেনেম-এর সমর্থন করতেন। কিউবায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকাকালে সেখানকার নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সাথে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মারাদোনার বাম পায়ে কাস্ত্রোর প্রতিকৃতি ট্যাটু আছে এবং ডান হাতে আছে স্বদেশি চে গুয়েভারা ট্যাটুকৃত প্রতিকৃতি। মারাডোনা ভেনিজুয়েলার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজেরও সমর্থক ছিলেন। ২০০৫ সালে চাভেজের সাথে সাক্ষাৎ করার নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে তিনি ভেনিজুয়েলা ভ্রমণ করেন। ২০০৫ সালে আর্জেন্টিনার মার দেল প্লাটায় সামিট অফ দ্য আমেরিকাস-এ তিনি আর্জেন্টিনায় জর্জ ডব্লিউ বুশের উপস্থিতির বিরোধিতা করেন।

মা-বাবার পাশেই চিরনিদ্রায় ম্যারাডোনা

[media type="image" fid="99031" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৬০ বছর বয়সে মারা যাওয়া আর্জেন্টাইন এই ফুটবল গ্রেটকে তার বাবা-মার কবরের পাশে চিরশায়ীত করা হয়েছে। গত ২৬ নভেম্বর ২০২০ তারিখে আর্জেন্টিনায় স্থানীয় সময় সন্ধ্যার পর সমাহিত করা হয় ম্যারাডোনার মরদেহ। ম্যারাডোনা বলেছিলেন, ‘যদি মরে যাই, আমি চাইব পুনর্জন্ম নিতে। চাইব আবারও ফুটবলার হতে। আবারও হতে দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা। আমি এমন একজন খেলোয়াড়, যে মানুষকে আনন্দ দিয়েছে। আমার কাছে এটিই ঢের।’ কফিন নেওয়ার সময় কেউ অঝোরে কেঁদেছে, কেউ বা দূর থেকে চুমু দিয়েছে এবং প্রার্থনা করেছে।

কফিন ঢাকা ছিল আর্জেন্টিনার জাতীয় পতাকা ও জার্সিতে, যার পেছনে ছিল তার ট্রেডমার্ক ১০ নম্বর। 

আমারসংবাদ/আরআই/জেআই