Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

ম্যারাডোনার সম্পদ পেতে পারেন যারা

স্পোর্টস ডেস্ক

ডিসেম্বর ২, ২০২০, ১১:০০ এএম


ম্যারাডোনার সম্পদ পেতে পারেন যারা

ফুটবল মাঠে তার দক্ষতা আর প্রতিভা দেখে ফুটবল দুনিয়া তার নামের পাশে খেতাব দিয়েছিলো ফুটবলের ইশ্বর। অসম্ভব ফুটবলের কারুকাজে তিনি মুগ্ধ করেছিলেন ফুটবল বিশ্বকে। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২৫ নভেম্বর ২০২০ তারিখে পুরো বিশ্বকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন আর্জেন্টাইন এই ফুটবল কিংবদন্তি। আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তির শেষ যাত্রায় করোনাভীতি উপেক্ষা করেই নেমেছিল মানুষের ঢল।

এই ম্যারাডোনা কত সম্পদ রেখে গেছেন? কোন কোন দেশে ছড়িয়ে আছে তার সম্পদ? এসবের উত্তরাধিকারীই বা কারা? কোনো উইল করেছেন কি? এক সঙ্গে এতগুলো প্রশ্ন শুনে যে কেউ বিভ্রান্ত হবে। বাস্তবতা হলো ডিয়েগো ম্যারাডোনার রেখে যাওয়া সম্পদের উত্তরাধিকার নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরির সুযোগ আছে। ভবিষ্যতে তার সম্পদের ভাগাভাগি নিয়ে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম নিশ্চিত করেছে, মৃত্যুর আগে কোনো উইল করে যাননি ফুটবল ঈশ্বর। যেহেতু উইল নেই তাই  ডিয়েগোর সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে তার সন্তানদের মধ্যে বিবাদ অবশ্যম্ভাবী। আর্জেন্টাইনার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ মৃত্যুকালে প্রায় ৮শ কোটি টাকার সম্পত্তি রেখে গেছেন ডিয়েগো। তবে কোনো উইল করে যাননি। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে সম্পত্তি কীভাবে ভাগ হবে।

কয়েক বছর আগে ছোট মেয়ে জিয়ান্নিনার সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়েছিল ম্যারাডোনার। তখন সংবাদমাধ্যমে নিজের সব সম্পত্তি, গাড়ি-বাড়ি দান করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন কিংবদন্তি। তবে মজার ব্যাপার ম্যারাডোনা চাইলেও তা করতে পারতেন না। সেক্ষেত্রে আর্জেন্টিনার আইন বাধা হয়ে দাঁড়াত। আর্জেন্টিনার প্রচলিত আইনে কোনো ব্যক্তি তার সম্পত্তির এক-পঞ্চমাংশের বেশি দান করতে পারেন না। যা হোক এখন তিনি নেই তাই দানের প্রশ্ন উঠছে না। বৈধ উত্তরাধিকারীরাই তার সম্পদের ভাগ পাবেন। সেক্ষেত্রে কারা হবে ম্যারাডোনার সম্পদের বৈধ উত্তরাধিকারী?

ম্যারাডোনার স্ত্রী (একমাত্র আইনত বৈধ) ক্লদিয়ার সন্তান হিসেবে দুই কন্যা ডালমা ও জিয়ান্নিনা সম্পদের ভাগ পাবেন। নেপলসে থাকার সময় ক্রিশ্চিয়ানা সিনোগ্রার সঙ্গে সম্পর্ক হয়েছিল ম্যারাডোনার। যার ফসল ডিয়েগো জুনিয়র, অনেকদিন যাকে নিজের সন্তান বলে স্বীকার করেননি ম্যারাডোনা। পরে আদালতের রায়ে সন্তান হিসেবে তাকে মেনে নিতে বাধ্য হন। ২০০৮ সালে জানা নামে আরেক সন্তানের কথা স্বীকার করেন ম্যারাডোনা। ১৯৯৬ সালে ভ্যালেরিয়া সাবালাইনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার ফসল এই জানা। ২০১৩ সালে জন্ম নেন আরেক সন্তান ডিয়েগো ওজেদা। 

সম্প্রতি আর্জেন্টিনার সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে- কিউবাতেও ম্যারাডোনার চার সন্তান আছে। যদিও এসব সন্তানসহ পরিবারের কারও সঙ্গেই ম্যারাডোনার সম্পর্ক ভালো ছিল না। ৬০তম জন্মদিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাবাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মেয়ে জিয়ান্নিনা লিখেছিলেন, ‘আমার জীবনে বড় অনুপ্রেরণা তিনি। আমাকে ক্ষমা করতে শিখিয়েছিলেন তিনি।’ অথচ নিষ্ঠুর বাস্তবতা হলো, ম্যারাডোনার মৃত্যুর সময় তার কন্যা, ডালমা ও জিয়ান্নিনার কেউ কাছে ছিলেন না। আর্জেন্টাইন সংবাদপত্র ‘ক্ল্যারিন’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে শেষ জীবনে খুব হতাশায় ভুগতেন ম্যারাডোনা। মানসিক অবস্থা এতটাই খারাপ পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে, তাকে কিউবায় পাঠানোর চিন্তাভাবনা করছিলেন মনোবিদরা। জন্মদিনে ম্যারাডোনা চেয়েছিলেন, তার সব সন্তান একত্রিত হোক। নাতি-নাতনিসহ। কিন্তু তা হয়নি। 

শেষ জন্মদিনে ম্যারাডোনা নাকি কান্না করতে করতে বলেন, ‘আজ, আমি আমার পরিবারকে খুব মিস করছি। মা, তুমি নিশ্চয়ই ওপর থেকে সব দেখছ। তুমি নিশ্চয়ই আমাকে নিয়ে গর্বিত।’ জীবনের শেষ দিকে নিজের আইনজীবীর শ্যালকের সঙ্গে থাকতেন ডিয়েগো। মৃত্যুর সময় তার কাছে ছিল অতি বিশ্বাসী রাঁধুনি মোনোয়া। এরা অবশ্য ম্যারাডোনার সম্পদের উত্তরাধিকার হবেন না। যারা উত্তরাধিকারী তাদের পারস্পরিক সম্পর্কও ভালো ছিল না। থাকলে ম্যারাডোনার ৬০তম জন্মদিনে তার কথা মতো একত্রিত হতেন। আর্জেন্টিনায় ম্যারাডোনা সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ সাংবাদিক জুলিয়ো চিয়াপেত্তা বলেছেন, ‘পরের নাটকটা জমে উঠবে ম্যারাডোনার সম্পদের ভাগা-বাটোয়ারা নিয়ে এ ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই।’

বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে ম্যারাডোনার সন্তানের সংখ্যা ১১। এছাড়া ডিএনএ পরীক্ষা হয়নি অথচ ডিয়েগোর সন্তান বলে দাবি করা এক কিউবান শিশু আছে। এমন শিশুর সংখ্যাটা বাড়লে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। মোদ্দাকথা হলো, ম্যারাডোনার সম্পদ অঢেল। তার উত্তরাধিকারীরও লেখাজোখা নেই। তাই ভাগাভাগি নিয়ে ঝামেলা অনিবার্য।

আমারসংবাদ/এমআর