Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪,

২০২০: বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন যাদের হারিয়েছে

ডিসেম্বর ৩১, ২০২০, ০৯:৪০ এএম


২০২০: বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন যাদের হারিয়েছে

বাংলাদেশ সহ বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে ২০২০ এ সবচেয়ে বড় শিরোনাম কোভিড-১৯। ২০২০ সালে বিশ্বের প্রতিটি ক্রীড়া বিভাগে সাজানো হয়েছিল বিশেষ আয়োজন দিয়ে। কিন্তু করোনায় স্তব্ধ করে দিয়েছে ক্রীড়াঙ্গনকে। কোনো খেলাই রেহাই পায়নি কোভিড-১৯-এর কারণে। ফলে উৎসবের পরিবর্তে আঁধারেই কেটেছে ২০২০ সালের ক্রীড়াঙ্গন। একের পর এক ইভেন্ট, ম্যাচ, টুর্নামেন্ট, বছরজুড়ে ব্যস্ততা, বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন অনেক রোমাঞ্চের ডালি সাজানো ছিলো এই বছর।

কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রকোপে মিলিয়ে গেছে সব। ঠাসা সূচির বছরেই ছিলো টানা স্থবিরতা। সম্ভাব্য তুমুল ব্যস্ততার বছরে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন পেয়েছে লম্বা বিরতি। বছরের শুরু আর শেষে খেলা যেটুকু হয়েছে, তাতে ছিলো সাফল্য-ব্যর্থতার মিশেল। তবে অতিমারীর বছরে মৃত্যুমিছিল হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই বলে এত মৃত্যু। বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন শোকে পাথর হয়ে গেছে, তবু মৃত্যু থামেনি। জানুয়ারিতে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন ‘ব্ল্যাকমাম্বা’খ্যাত কোবি ব্রায়ান্ট। এরপর বছর শেষে চলে গেলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনাও। বিদায়ী বছরে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন যাদের হারিয়েছে তাদের নিয়ে আমার সংবাদের এই আয়োজন...

[media type="image" fid="103529" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

কোবি ব্রায়ান্ট: নতুন বছর শুরুর ২৭ দিন পর কুয়াশার মধ্যে লস অ্যাঞ্জেলেস শহরতলির পাহাড়ি এলাকা কালাবাসাস অঞ্চলে ভেঙে পড়েছিল একটি হেলিকাপ্টার। তাতে ছিলেন বাস্কেটবল কিংবদন্তি কোবি ব্রায়ান্ট এবং তার ১৩ বছরের কন্যা জিয়ান্না। সেই খবর আছড়ে পড়ে সারা দুনিয়ায়। ব্ল্যাকমাম্বা আর নেই। ২০০৮ ও ২০১২ অলিম্পিকে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে সোনাও জিতেছিলেন তিনি। ১৯৯৬-২০১৬ পর্যন্ত লস অ্যাঞ্জেলেস লেকার্সের হয়ে ১৩৪৬টি এনবিএ ম্যাচে তার অর্জিত পয়েন্টের সংখ্যা ৩৩৬৪৩।

[media type="image" fid="103530" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

এভারটন উইকস: থ্রি ডব্লিউর শেষ প্রহরী এভারটন উইকস জুনে প্রয়াত হয়েছেন। ১৯৪৮ সালে তিন সপ্তাহের ব্যবধানে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল ‘থ্রি ডব্লিউ’র। তিনজনই উঠে এসেছিলেন বার্বাডোজ থেকে। তবে ব্যাটিংয়ে সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন উইকস। তিনিই ছিলেন থ্রি ডব্লিউর সেরা ব্যাটসম্যান। ৪৮ টেস্টে ১৫ সেঞ্চুরি ও ১৯ হাফসেঞ্চুরিতে ৫৮.৬১ গড়ে করেছেন ৪৪৫৫ রান। ক্রিকেটে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে নাইটহুড দেওয়া হয়।

[media type="image" fid="103531" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

ডিন জোন্স: জৈব সুরক্ষা বলয়ে থেকেই স্টার স্পোর্টস ইন্ডিয়ার হয়ে আইপিএলে ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার ডিন জোন্স। ২৪ সেপ্টেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ১৯৮৪ সালে অভিষিক্ত প্রফেসর ডিনো ৫২ টেস্টে ৩৬৩১ রান করেন। আছে ১১টি সেঞ্চুরি। ১৬৪টি ওয়ানডে খেলে করেছেন ৬০৬৮ রান। সেঞ্চুরি ৭টি। ১৯৮৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম বিশ্বকাপ জয়ী দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য পেস ও স্পিন খেলতেন সমান দক্ষতায়।

[media type="image" fid="103528" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

ডিয়েগো ম্যারাডোনা: ৩০ অক্টোবর ৬০তম জন্মদিনের পর থেকেই শরীরটা খারাপ হতে থাকে। মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের ৮ দিন পর বুয়েনস আয়ার্সের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। বাড়িতেই আচমকা হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। এরপরই শতাব্দীর বড় শোক সংবাদটি শোনে পৃথিবী আর্জেন্টিনার ফুটবল ঈশ্বর ডিয়েগো ম্যারাডোনা আর নেই। ১৯৮৬’র মেক্সিকো বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন আর্জেন্টিনাকে। ১৯৯০’র বিশ্বকাপেও আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তোলেন। সেই আর্জেন্টিনাকে কোচিং করিয়েছেন ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত। বিতর্ক আজীবন তার সঙ্গী ছিল। ১৯৯৪ সালে আমেরিকা বিশ্বকাপে ডোপ পরীক্ষায় পজিটিভ হওয়ার পর ম্যারাডোনাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ‘হ্যান্ড অব গড’ গোলের মাধ্যমেও বিতর্কিত হন। তবে সেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই শতাব্দী সেরা গোল করে হয়ে যান ইতিহাস।

[media type="image" fid="103532" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

পাওলো রসি: ডিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যুশোক মুছতে না মুছতেই ২৩ ডিসেম্বর প্রয়াত হন আরেক কিংবদন্তি ফুটবলার পাওলো রসি। ইতালির হয়ে ১৯৮২ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। জুভেন্তাস এবং এসি মিলানের সাবেক স্ট্রাইকার ১৯৮২ সালে স্পেন বিশ্বকাপে প্রায় একাই দলকে চ্যাম্পিয়ন করেন। বিশ্বকাপ, সোনার বল, সোনার বুট তিনটি পুরস্কার একই বছরে জেতার নজির প্রথম তৈরি করেন পাওলো রসি। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত ইতালির হয়ে ৪৮ ম্যাচে ২০ গোল করেছেন তিনি।

এ ছাড়া করোনা মহামারীর বছরে মারা গেছেন ভারতীয় ক্রিকেটার চেতন চৌহান, ফুটবলার চুনি গোস্বামীর মতো তারকারা।

দেশের ক্রীড়াঙ্গনে যাদেরকে হারিয়েছি
গোলাম রব্বানী হেলাল: ৩০ মে মৃত্যুবরণ করেন ফুটবলার গোলাম রব্বানী হেলাল। বেশ কয়েক বছর ধরেই নানা রোগের সঙ্গে লড়ছিলেন তিনি। সর্বশেষ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে ৬৩ বছর বয়সে মারা যান হেলাল। ঘরোয়া ফুটবলে অনেক কীর্তি আক্রমণভাগের এই খেলোয়াড়ের। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত খেলেছেন আবাহনীর হয়ে। সংগঠক হিসেবে আবাহনীর বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন।

[media type="image" fid="103533" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

নওশেরুজ্জামান: ২১ সেপ্টেম্বর করোনার কাছে হেরে যান স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্য, তুখোড় স্ট্রাইকার নওশেরুজ্জামান। করোনায় আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছুদিন হাসপাতালের আইসিউতে ছিলেন তিনি। ৭২ বছর বয়সী নওশেরুজ্জামান কেবল ফুটবলার হিসেবেই পরিচিত ছিলেন না। জাতীয় পর্যায়ে দীর্ঘদিন ক্রিকেটও খেলেছেন।

[media type="image" fid="103534" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

বাদল রায়: ২২ নভেম্বর মাত্র ৬৩ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন কিংবদন্তি ফুটবলার বাদল রায়। ঢাকার মাঠের অন্যতম তারকা, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, সফল ক্রীড়া সংগঠক বাদল রায় ২০১৭ সালে মস্তিষ্কের জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। অস্ত্রোপচার করা হয়। মৃত্যুর কিছুদিন আগে তার লিভার ক্যানসার চতুর্থ পর্যায় ধরা পড়ে। ১৯৭৭-এ মোহামেডানের জার্সিতে ঢাকার ফুটবলে অভিষেক বাদল রায়ের। দীর্ঘ ১২ বছর সাদা-কালো জার্সিতে খেলেন। জাতীয় দলের হয়েও খেলেছেন টানা ৫ বছর। খেলা ছাড়ার পর ফুটবল ফেডারেশনের সহ-সভাপতিসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যায় তাকে।

[media type="image" fid="103535" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

রাম চাঁদ গোয়ালা: কিংবদন্তি ক্রিকেটার, দেশের প্রথম বাঁহাতি স্পিনার রাম চাঁদ গোয়ালা ১৯ জুন ময়মনসিংহের নিজ বাসভবনে পরলোকগমন করেন। ময়মনসিংহ থেকে উঠে আসা সাবেক এই বাঁহাতি স্পিনার এবং বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ঢাকার ক্রিকেটে ২০ বছর দাপটের সঙ্গে খেলেছেন। এর মধ্যে ১৯৮১ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত খেলেছেন আবাহনীর হয়ে। সফরকারী ভারতের হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে জাতীয় দলে খেলেছেন তিনি।

[media type="image" fid="103536" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

এ এস এম ফারুক: ১৮ সেপ্টেম্বর সাবেক ক্রিকেটার এ এস এম ফারুক ৭৫ বছর বয়সে মারা যান। ১৯৭৭ সালের জানুয়ারিতে ঢাকায় এমসিসির বিপক্ষে যে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখে বাংলাদেশ, সেই দলের সদস্য ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ঢাকার ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান ক্লাবের সংগঠক ছিলেন। ২০০৩ বিশ্বকাপে জাতীয় দলের এবং ২০১৬-তে দেশের মাটিতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে যুব দলের ম্যানেজার ছিলেন তিনি।

[media type="image" fid="103537" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

এহতেশাম সুলতান: ১৭ আগস্ট মারা যান হকির কিংবদন্তি এহতেশাম সুলতান। ১৯৬৮ থেকে ৭০ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান দলের সদস্য ছিলেন। ১৯৭৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হকি টেস্ট সিরিজে খেলেছেন। অবসরের পর দীর্ঘদিন জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত এহতেশাম সুলতান হকি ফেডারেশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেন।

২০২০ সালে এ ছাড়া আমরা হারিয়েছি অ্যাথলিট কাজী জাহেদা আলী, ফুটবলার এস এম সালাউদ্দিন, নূরুল হক মানিক, লুৎফর রহমান, কারাতেকার হুমায়ুন কবীর জুয়েল, ভলিবল খেলোয়াড় গোলাম রসুল মেহেদী, সংগঠক এ এইচ এম সামসুল ইসলাম, রেফারি আবদুল আজিজকে।

আমারসংবাদ/এমআর