এবি আরিফ
সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২১, ০৭:০৫ এএম
প্রাকৃতিক অপরুপ সৌন্দর্যে ভরপুর প্রিয় বাংলাদেশ। বাংলার রুপের প্রেমে পড়েছেন অসংখ্য কবি, সাহিত্যিক ও দার্শনিক। কেননা রুপসী বাংলার রুপ অসীম। যার শুরু আছে শেষ নাই। তাই ভ্রমণ পিপাসু ব্যক্তিরা একটু সময় পেলেই বাংলার রুপের স্পর্শ পেতে ছুটে চলেন বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে। তেমনি বান্দরবান জেলা পাহাড়ে ঘেরা অপরুপ সৌন্দর্যে ভরপুর। প্রতিদিন হাজারও মানুষ বেড়াতে আসেন এই জেলাতে।
এবার জেনে নিন অল্প খরচে কীভাবে বান্দরবানের দর্শনীয় স্থানে যাওয়া যায়:-
প্রথমেই বলে রাখি যেহেতু অল্প খরচের কথা বলেছি সেহেতু আপনাকে একটু মিতব্যয়ী হতে হবে। প্রথমে ঢাকা থেকে মেইল ট্রেনে চট্টগ্রাম যেতে হবে। জনপ্রতি ভাড়া ১২০ টাকা। এক্ষেত্রে কমলাপুর স্টেশন থেকে উঠলে বসার আসন পেতে পারেন। কারণ মেইল ট্রেনে আসন সংখ্যা কম এবং অনেক সময়ে দাঁড়িয়ে যেতে হতে পারে। চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ট্রেন ছেড়ে যাবে রাত সাড়ে দশটায় এবং সকাল ৮ টার দিকে আপনাকে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে পৌঁছে দিবে। স্টেশন থেকে বের হয়ে বাসে করে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল যেতে হবে এবং জনপ্রতি ভাড়া ১০ টাকা করে। বহদ্দারহাট থেকে সরাসরি চকোরিয়ার বাস পাওয়া যায়। তবে সেখানে মাঝেমধ্যে বাস সার্ভিস বন্ধ থাকে এবং ভাড়াও বেশি লাগতে পারে তাই ঝামেলা এড়ানোর জন্য সরাসরি কোতোয়ালি থানার সামনে বাসে, সিনএনজি বা অটোতে যেতে পারবেন। সিএনজি বা অটোতে জনপ্রতি ২০ টাকা করে ভাড়া লাগতে পারে।
কোতোয়ালি থানার সামনে সব সময় চকোরিয়াগামী বাস পাওয়া যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা। তবে সংখ্যায় বেশি হলে একটু দরাদরি করলে ৮০/৯০ টাকায় চলে আসতে পারে। বাসে উঠার আগে সকালের নাস্তা সেরে নিতে পারেন। বাসে করে চকোরিয়া পৌঁছাতে সময় লাগবে ৩ ঘণ্টার মত। চকোরিয়া থেকে আলীকদম সরাসরি লোকাল বাস পাওয়া যায়। জনপ্রতি ভাড়া ৬০ টাকা করে। এছাড়াও লোকাল চান্দের গাড়িতে করে জনপ্রতি ৭৫ টাকা অথবা চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করে আলীকদম আবাসিক যেতে পারবেন। এক গাড়িতে ১৪ জন বসা যায় এবং রিজার্ভ ভাড়া নিবে ১০০০ টাকা। সময় লাগবে দেড় ঘণ্টার মত।
এবার জেনে নিন আলীকদম উপজেলার পরিচিতি এবং দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে:-
বান্দরবান জেলা সদর থেকে আলীকদম উপজেলা প্রায় ১১১ কি.মি দূরত্ব। যার পূর্বে ও উত্তর-পূর্বে থানচি উপজেলা, উত্তর-পশ্চিমে লামা উপজেলা, পশ্চিমে ও দক্ষিণ-পশ্চিমে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে ও দক্ষিণে মায়ানামারের রাখাইন প্রদেশ। আলীকদম নামের উপৎপত্তি হয় 'আলোক্যাডং' থেকে।
আলীকদম উপজেলায় মারায়ংতং পাহাড়, আলীর সুড়ঙ্গ, দামতুয়া ঝর্ণা, ডিম পাহাড়, শিলবুনিয়া ঝর্ণা, ক্রিসতং পাহাড় বেশ পরিচিত দর্শনীয় স্থান। এছাড়াও চাইম্প্রা ঝর্ণা, তামাংঝিরি জলপ্রপাত, তিনাম ঝর্ণা, থাঙ্কুয়াইন ঝর্ণা, পালংখিয়াং ঝর্ণা, পোয়ামুহুরী ঝর্ণা, মারাইংতং পাহাড়, রুপমুহুরী ঝর্ণা, লাদ মেরাগ ঝর্ণা ইত্যাদি।
আমি এখানে মারায়ংতং পাহাড়, ডিম পাহাড়, আলীর সড়ঙ্গ ও শিলবুনিয়া ঝর্ণার বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করব।
[media type="image" fid="143861" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]
মারায়ংতং পাহাড়:
আলীকদম আবাসিকে পৌঁছাতে মোটামুটি বিকেল বা সন্ধ্যা হয়ে যেতে পারে। তবে সন্ধ্যার পরে পাহাড়ে উঠা বেশ কষ্টসাধ্য ও বিপদজনক। কেননা পাহাড়ের পথে বাঁধা হতে পারে ছোট ছোট সাপ। তাই যতটা সম্ভব বিকালের মধ্যেই আলীকদম পৌঁছে পাহাড়ে উঠার চেষ্টা করবেন। তাহলে বিপদজনক পরিস্থিতি এড়িয়ে যেতে পারবেন এবং পাহাড়ের চূড়ায় সন্ধ্যার চমৎকার দৃৃশ্য দেখতে পারবেন। আলীকদম পৌঁছানের পরে ১ হাজার টাকা দিয়ে গাইড ঠিক করে নিতে হবে। তারা রাতের খাবার ও তাবু প্রস্তুত করে দিবে। তাবু ভাড়া জনপ্রতি ২০০ টাকা করে লাগবে। এক তাবুতে ২ জন বা তারও বেশি থাকা যাবে। প্রয়োজনীয় শুকনা খাবার, পানি, ঔষধ সাথে করে নিয়ে যাবেন। কারণ পাহাড়ের দূর্গম এলাকায় এসবের কিছুই পাওয়া যাবে না।
মারায়ংতং পাহাড়ের উচ্চতা ১হাজার ৬৪০ ফুট। পাহাড়ের চূড়ায় উঠা আর এভারেস্ট জয় করা প্রায় একই কথা। বাঁকা এবং উঁচু পথ বেয়ে আপনাকে পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে প্রায় ২ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে। দূর্গম পথ পাড়ি দেওয়ার মানসিকতার পাশাপাশি আপনাকে সুস্থ ও সবল যুবক হতে হবে এবং রাতে থাকার চিন্তা করে পাহাড়ে উঠতে হবে। অন্যথায় এ ভয়ংকর সাহস না দেখানোই উত্তম।
সকালে রাশিরাশি মেঘ খণ্ড ও সূর্যোদয়ের দৃশ্য দেখলে আপনার সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। অপরুপ দৃশ্য চোখে না দেখলে কল্পনাই করতে পারবেন না!
শিলবুনিয়া ঝর্ণা:
মারায়ংতংয়ের সকালের দৃশ্য উপভোগ করে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচে নেমে দামাদামি করে ৩০০/৪০০ টাকা দিয়ে গাইড ভাড়া নিতে পারেন। ঠিক করা গাইড আপনাকে শিলবুনিয়া ঝর্ণা ও আলীর সুড়ঙ্গ দেখতে সাহায্য করবে। পাহাড়ের নিচ থেকে ২ কি.মি. দূরত্ব শিলবুনিয়া ঝর্ণা। ঝর্ণার পথটা খুব কঠিন না হলেও ঝর্ণায় নামা বেশ কঠিন।
[media type="image" fid="143858" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]
আলীর সুড়ঙ্গ:
ঝর্ণা দেখা শেষ করে আলীকদম আবাসিকে পৌঁছাতে হবে। ওখান থেকে অটো অথবা চান্দের গাড়িতে প্রথমে মংচুপ্রু এলাকায় পৌঁছাতে হবে। ভাড়া জনপ্রতি ১৫/২০ টাকা করে। এলাকা দিয়ে বয়ে গেছে টোয়াইন খাল। টোয়াইন খাল পার হয়ে পাহাড় ও ঝিরি পথ বেয়ে আলীর সুড়ঙ্গ পৌঁছাতে সময় লাগবে ৩০ মিনিটের মত। এ পথ বেশ পিচ্ছিল ও সরু। তাই একটু সতর্ক থাকতে হবে। সবগুলো সুড়ঙ্গ দেখে আলীকদম ফিরে আসতে ৩ ঘণ্টার মত সময় লাগবে। সুড়ঙ্গের পথে টর্চ লাইট ব্যবহার করতে হবে এবং প্রবেশ করতে হলে আপনাকে সাহসী হতে হবে। অন্যায় ভিতরে না যাওয়া উত্তম।
ডিম পাহাড়:
ডিম পাহাড় আলীকদম এবং থানচি উপজেলার ঠিক মাঝখানে অবস্থিত। এই পাহাড় দিয়েই দুই থানার সীমানা নির্ধারিত হয়েছে। এই পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে সমুদ্র সমতল থেকে আড়াই হাজার ফুট উঁচুতে নির্মাণ করা হয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু সড়কপথ। আড়াই হাজার ফুট উঁচু এ পাহাড়ের চূড়ার আকৃতি দেখতে ডিমের মতো হওয়ায় স্থানীয়রা একে ডিম পাহাড় নামেই চেনে।
ডিম পাহাড় ছিলো দুর্গম। সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ টানা এক যুগ অক্লান্ত পরিশ্রম করে সড়কটি নির্মাণ করেছে। প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ১২০ কোটি টাকা। প্রথমে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু করলেও পরে এটি সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ ১৬ ইসিবি ও ১৭ ইসিবি কাজ সম্পন্ন করে। আলিকদম-থানচি আঞ্চলিক সড়ক বাংলাদেশের সবথেকে উঁচু রাস্তা। আলীকদম থেকে এই রাস্তার উপরের দিকে উঠতে শুরু করে ডিম পাহাড়ে রাস্তার উচ্চতা ২৫০০ ফুট।
আলীকদম থেকে বাইকে জনপ্রতি ২৫০ টাকা করে লাগবে। এক বাইকে ২ জন উঠা যাবে। প্রাকৃতিক অপরুপ দৃশ্য ছড়িয়ে আছে এই ডিম পাহাড়ে।
খাওয়া ও থাকা:
মারায়ংতংয়ে রাতে ক্যাম্পিং করে পরেরদিনে আপনি ডিম পাহাড়, আলীর সুড়ঙ্গ ও শিলবুনিয়া ঝর্ণা দেখতে পারবেন। তবুও যদি থাকার প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে দ্যা দামতুয়া ইন অথবা জেলা পরিষদের ডাক বাংলাতে থাকতে পারবেন। এখানকার খাবারের মান খুব বেশি ভালো না হলেও প্যাকেজ আকারে জনপ্রতি ৮০-১০০ টাকার মধ্যে স্থানীয় খাবার পাবেন। যার মধ্যে মধ্যে শাক- সবজি, মাছ, মুরগি ইত্যাদি থাকবে।
[media type="image" fid="143856" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]
কক্সবাজার ভ্রমণ:
আপনি আলীর সুড়ঙ্গ ঘুরে গাইডের সাহায্যে অটো অথবা চান্দের গাড়ি পাবেন। যা আপনাকে বাস টার্মিনাল নিয়ে আসবে; যেখান থেকে আবার চকোরিয়াগামী বাস পাবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে আর আলীকদম যেতে হবে না। আপনি সরাসরি চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করে চকোরিয়া আসতে পারবেন। তবে ডিম পাহাড় থেকে আপনাকে পুনরায় আলীকদম আসতে হবে। সেখান থেকে গাড়ি রিজার্ভ নিতে হবে। ভাড়া আগের মতই। চকোরিয়া থেকে কক্সবাজারের সরাসরি বাস পাওয়া যায়। ভাড়া জনপ্রতি ৫০ টাকা। সময় লাগবে ১ ঘণ্টার মত। কক্সবাজার নেমে অটোতে জনপ্রতি ২০ টাকা করে কলাতলী যেতে হবে। সেখানে আপনার চাহিদামত থাকার হোটেল পাবেন। এক্ষেত্রে ৮০০ থেকে শুরু করে বেশি দামেরও হোটেল পাবেন। হোটেল ভাড়া করে ফ্রেশ হয়ে রাতের সমুদ্র দেখতে বের হতে পারেন।
আমারসংবাদ/এমএস