তুমব্রুতে আশ্রিত ২৮৮৯ রোহিঙ্গাকে অন্যত্রে সরানোর উদ্যোগ

কক্সবাজার প্রতিনিধি প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২৩, ০৬:২৯ পিএম

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্টি ‍‍`আরসা ও আরএসও‍‍`র মধ্যে সংঘাতের জেরে শূণ্যরেখার ক্যাম্প থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের ভূ-খন্ডে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ২ হাজার ৮৮৯ জন। যেখানে আশ্রয় নিয়েছে ৫৩৭ টি পরিবার। এদের ওখান থেকে অন্যত্রে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুজ্জামান চৌধুরী বলেন, শূণ্যরেখার ক্যাম্প থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের গণণার কাজ শেষ হয়েছে। ওখানে ২ হাজার ৮৮৯ জন রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকেই উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে নিবন্ধন রয়েছে। ওদের স্ব-স্ব ক্যাম্পে সরানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

দ্রুত সময়ের মধ্যে এ কাজ শেষ করা হবে। এর জন্য জাতীয় ভাবে একটি কমিটিও হয়েছে। ওই কমিটি এ কাজ করছে। এছাড়া যারা কোন ক্যাম্পে নিবন্ধিত নন, তাদের কুতুপালং রেহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হবে। গণনা করা রোহিঙ্গাদের মধ্যে চিহ্নিত কোন অপরাধি বা মামলা রয়েছে তাদের ব্যাপারে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।

আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি (আইসিআরসি) ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশ ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালিত এক পরিসংখ্যায় এই সংখ্যা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন, ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির আজিজ।

তিনি জানান, সংঘাতের পর তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশে-পাশে তাবুতে টাঙিয়ে এসব রোহিঙ্গা অবস্থান নিয়েছেন। ৮ গণনাকারীকে দিয়ে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের গণনার কাজ শুরু হয় রোববার। যা শেষ হয়েছে সোমবার। যার সমন্বয়কের দায়িত্ব ছিলেন একজন মেম্বার। তারা প্রথম ও দ্বিতীয় দিন মিলে মোট রোহিঙ্গা পরিবার পেয়েছেন ৫৩৭ টি। আর অবস্থানরত রোহিঙ্গার সংখ্যা পান
২৮৮৯ জন। যা পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোমেন শর্মা জানিয়েছেন, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের গণনা শেষ হয়েছে সবে মাত্র। এরপর তাদেরকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হবে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যখন থেকে সিদ্ধান্ত নেবেন, ঠিক তখনই তা বাস্তবায়ন হবে। এর আগে নয়। তবে সময় ক্ষেপণ করা হবে না। কেননা পরিবেশ রক্ষা এবং তাদের নিরাপত্তা এখন মূখ্য বিষয়।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বাস্তচ্যুত হয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এর আগে বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে আসা সহ প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া হয় কক্সবাজার জেলার উখিয়াও টেকনাফের ৩৩ টি অস্থায়ী আশ্রয় ক্যাম্পে। ওইসব ক্যাম্পের সার্বিক দেখভাল ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছে আরআরআরসি (শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার)।

অপরদিকে তুমব্রু কোনারপাড়া শূণ্যরেখায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পটির দায়িত্ব পালন করছে আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্ট কমিটি (আইসিআরসি)। ক্যাম্পটিতে ৬৩০ টি পরিবারে সাড়ে চার হাজারের বেশী রোহিঙ্গা বসবাস করে আসছিল।

গত ১৮ জানুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোলাগুলি-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় রোহিঙ্গ হামিদ উল্লাহ নিহত এবং দুজন আহত হয়েছেন। এ সময় শূন্যরেখার বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের বসতঘর পুড়ে যায়। এরপর তুমব্রু বাজারে তাবু টাঙিয়ে আশ্রয় নেয় তারা। কিন্তু বর্তমানে ওখানে ২৮৮৯ জন রোহিঙ্গা পাওয়া গেলেও বাকীরা কোথায় তা বলতে পারছেন না কেউ।

আরএস