পাটের দাম কম, লোকসানে চাষি

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২৩, ০১:৩০ পিএম

যশোরের চৌগাছায় পাটের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় লোকসান গুণছেন চাষীরা। চলতি মৌসুমে পাটের আঁশ ভালো হলেও হঠাৎ পাটের দাম কমে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। পাট চাষে উৎপাদন খরচ বাড়লেও বাজার দর নিন্মমুখী হওয়ায় ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না কৃষক। দাম কমে যাওয়ায় হতাশাজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন কৃষকরা। ফলে কৃষকের সেই স্বপ্নের সোনালি আঁশে গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী মৌসুম থেকে অনেকে পাট চাষ ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবছেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর উপজেলায় জিআর ও ৫২৪ জাতের ১৮৬০ হেক্টর ও তুষা ৮ রবি জাতের ১৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়।

উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের পাট চাষি জহির উদ্দীন বলেন, এবার চাষের শুরুতে চাষিদের বৈরি আবহাওয়া মোকাবিলা করতে হয়। বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ দিয়ে পাট বীজ বুনতে হয়েছে। খরার সময়ে মাঝেমধ্যে সেচ দিতে হয়। এতে পাট চাষের খরচ বেড়ে গেছে। পাট চাষের সময়  এবার নানা বিড়াম্বনার শিকার হয়েছিলাম, ভালো জো পাইনি। তারপর বড় সমস্যা পাট জাগ দেওয়ার জায়গা পাওয়া যায় না খানাখন্দের অভাবে, বেশির ভাগ জায়গা ভরাট হয়েছে সব খানেতেই। পাটের আবাদের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ কিছুটা কমে এসেছে। কারণ পাট পচানোর সমস্যা। এখন পুকুর-জলাশয় মাছ চাষের আওতায় এসেছে। ফলে মাছ চাষ করা পুকুর-জলাশয়ে পাট পচানো সম্ভব হচ্ছে না। বীজ বপণের সময় খরা হওয়ায় ঠিকমতো চারা গজায়নি। এতে ব্যাহত হয়েছে পাটের ফলন।

এদিকে উপজেলার নারায়নপুর, পাশাপোল, ধুলিয়ানী, স্বরুপদাহ, ফুলসারা, চৌগাছা সদর ও সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নে বিভিন্ন এলাকায় পাট ধোয়া শুরু করেছেন। নতুন পাট বাজারে উঠতে শুরু করেছে। প্রতি মণ পাট ১৯০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হচ্ছে।

ফলে পাটচাষীদের উপজেলার রাজাপুর গ্রামের চাষী আতিয়ার রহমান জানান, প্রতি বিঘা জমিতে হালচাষ ও বীজ বপণ থেকে শুরু করে সার-কীটনাশকের খরচ, পানি সেচ শ্রমিক খরচ, জাগ দেয়া, (ধুয়া) আঁশ ছড়ানোসহ ঘরে তোলা পর্যন্ত  খরচ পড়েছে ১৫-১৬ হাজার টাকা। অথচ মৌসুমের শুরুতে বাজারে পাট ২৫০০-২৬০০ টাকা বিক্রি হলেও, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৯০০-২০০০ টাকা মণ। অথচ গত বছরে এই পাট ৩০০০-৩৫০০ টাকা বিক্রি হয়।

তিনি বলেন, পাটের দাম কম হলেও পাটকাঠির প্রচুর চাহিদা ও দাম বেশি হওয়ায় পাট চাষীরা খরচ বাঁচানোর চেষ্টা করছে। ছোট ছোট আটি হিসাবে ৩৫-৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

তিনি বলেন, পাটের দাম কম হলেও পাটকাঠির প্রচুর চাহিদা ও দাম বেশি হওয়ায় পাট চাষীরা খরচ বাঁচানোর চেষ্টা করছে। ছোট ছোট আটি হিসাবে ৩৫-৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাটকাটি পটল, শশা, শিম, করোলাসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেতের মাচা তৈরীতে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জ্বালানি হিসাবে গৃহবধুদের কাছে পাটকাঠির চাহিদা খুব বেশি। পাটকাঠি দিয়ে সহজে চুলা জ্বালানো যায় ও সহজে রান্না করা যায়, এইজন্য গৃহবধুদের কাছে পাটকাঠির চাহিদা বেশি,তাছাড়া বেড়াও দেওয়াযায়।

নারায়ণপুর ইউনিয়নের বুন্দলিতলা গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে কৃষক আবদার  আলী   বলেন, গত দুই বছরে পাটের দাম ভালো থাকায় এ বছরে জমি লিজ নিয়ে  ২৫ কাঠা জমিতে পাট চাষ করি। বীজ রোপণ থেকে শুরু করে প্রতিমণ পাট ঘরে তুলতে প্রায় ২৫-২৭ শ টাকা খরচ হয়েছে। সে পাট এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ১ হাজার ৬০০ টাকা। লোকসান দিয়েই পাট বিক্রি করতে হচ্ছে।

একই এলাকার মাসুদর রহমান ও তবিবর রহমান, সাকুপুকুরিয়া ইউনিয়নের জাকির হোসেন, লাভলুর রহমান ও মুক্তার আহমেদ জানান, দাম কম থাকায় এ বছর পাট বাড়ীআনতে ইচ্ছে করছে না। তারা জানান, শ্রমিক সংকটের কারনে অতিরিক্ত মজুরি দিয়ে পাটের কাজ করতে হচ্ছে। খেতের আশপাশে পানি না থাকায় দূরে নিয়ে জাগ দিতে হয়েছে। এতে পরিবহন ব্যয় বাবদ আঁটি প্রতি ৭-৮টাকা খরচ হয়। অনেকে পুকুর ভাড়া করে পাট জাগ দিয়েছেন। সব মিলিয়ে এ বছর পাট চাষে কৃষকদের বিঘা প্রতি প্রায় ৫/৬ হাজার টাকা লোকসান হবে।

কৃষকদের দাবী সকল কষ্ট সুখে পরিণত হতো, যদি পাটের ভালো দাম পাওয়া যেত। এখন তো কৃষকের সেই স্বপ্ননের সোনালী আঁশ গলার ফাঁস হয়ে দাড়িয়েছে। পাটের দাম বৃদ্ধি করা না হলে অনেক কৃষককে পথে বসতে হবে।

উপজেলা কৃষিকর্তকর্তা মুসাব্বির হুসাইন বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পাটের আবাদ ভালো হয়েছে। সরকার পাটচাষিদেরও প্রণোদনা দিচ্ছে যাতে নতুন জাতের পাটের চাষাবাদ বাড়ে। রবি-১ পাটের নতুন জাত, এরজন্য প্রণোদনা রয়েছে। পাটের দাম আপাতত কিছুটা কম হলেও খুব দ্রুত সময়ে দাম বেড়ে যাবে বলে আশা  করেন তিনি। দাম বাড়লে কৃষক লাভবান হবে এবং ভবিষ্যতে উপজেলায় পাট চাষির সংখ্যা বাড়বে।

উপজেলা পাট উন্নয় কর্মকর্তা নিপা বিশ্বাস বলেন, উপজেলায় এ বছর ২৫৭৫ জন কৃষক পাট চাষ করেছেন। এ অঞ্চলে এবার পাট ভালো হয়েছে। তবে পানি ও জায়গার অভাবে পাট জাগে সমস্যায় পড়েন চাষীরা।

এআরএস