ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম: বৃষ্টিতে আমনের ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা

হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০২৩, ০২:৪৩ পিএম

ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টিতে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে জমিতে পুঁতিয়ে রাখা আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকেরা। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, যা শুক্রবার সকাল পর্যন্তও থামেনি। স্থানীয় আবহবিদদের ভাষ্যমতে- চলমান ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

তবে কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বৃষ্টির জোর তেমনভাবে না থাকলেও জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে একনাগাড়ে বৃষ্টি হওয়ার ফলে আমন ধানের জমিগুলোতে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, সব স্থানে অপরিকল্পিত আবাসন, খাল, বিল ও নদী নালায় বাঁধের কারণে কৃষিজমি থেকে দ্রুত পানি নামতে পারছেনা। ফলে ক্ষেতে পুঁতিয়ে রাখা আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, মূলত: কিছুটা দেরিতে কৃষকেরা যেসব জমিতে এবার আমন ধান লাগিয়েছেন তা মাঠ থেকে ঘরে তোলার সময় হঠাৎ বৃষ্টিতে এগুলোর ক্ষতি বেশি হয়েছে। কেননা এ সময়ে অপেক্ষাকৃত নিচু জমির অবশিষ্ট ধান কেটে বেশিরভাগ কৃষক মাঠেই পুঁতিয়ে রেখে দিয়েছিলেন তারা। ফলে গত বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ার কারণে প্রান্তিক কৃষকের শত শত বিঘা জমির আমন ধান ভিজে নষ্ট হয়েছে । ফলে এসব ভিজা ধান কিভাবে শুকানো যায় তা নিয়ে মহাদুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা।

তাছাড়া ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে সৃষ্ট নিম্নচাপের বৃষ্টিতে ধান চাষের সঙ্গে সবজি চাষেও ক্ষতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ মুহূর্তে বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি টমেটোর মত বিভিন্ন সবজি অকাল বর্ষণে ক্ষতির আশঙ্কায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।

সরেজমিনে উপজেলার গোবিন্দপুরের কৃষক মো. খোকন মিয়া, উপজেলার পুমদী এলাকার কৃষক মো. জামাল উদ্দিনসহ অনেকেই জানান, গত কয়েকদিন আগে এলাকার অনেকেই পাকা আমন ধান কেটে জমিতে বিছিয়ে রেখেছিলেন শোকানোর জন্য। এ গুলোর চরম ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া যেসব জমির ধান পেকে ছিলো, বৃষ্টি আর বাতাসে এসব ধানগাছও জমিতে বিছিয়ে পড়ে গিয়ে ফলন হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে অগ্রহায়ণ মাসের শেষ দিকে আমন ধান ঘরে তোলা নিয়ে কৃষকেরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

উপজেলার জামাইল গ্রামের কৃষক নবী হোসেনসহ অনেকেই জানান, এবারের ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে পানি জমে থাকায় কেটে রাখা আমন ধানের ক্ষতি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া জমিতে বিছিয়ে পড়ে থাকা ধান কাটতে যেমন সমস্যা হবে, তেমনি খরচও বেড়ে যাবে দ্বিগুণ। অন্যদিকে যেসব জমিতে আলু রোপন করা হয়েছে এবং মরিচের বীজ বপন করা হয়েছে, সেগুলো পচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে অনেক বেশি। তাই এ অসময়ের বৃষ্টির কারণে প্রান্তিক কৃষকেরা আমন ধান ও অন্যান্য ফসলের ক্ষতি পোষাতে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ একেএম শাহজাহান কবির জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৮ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে অনেক বেশি। আবাদকৃত ধানের মধ্যে রয়েছে ব্রিধান-৪৯, ব্রিধান-৭১, ব্রিধান-৭৫, বিনা-৭, বিনা-১৭ প্রভৃতি ও বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের ধান। এ বছর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আগাম জাতের পাশাপাশি স্থানীয় জাতের আমন ধানের যে পরিমাণ বাম্পার ফলন হয়েছে, সে তুলনায় ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে নিম্নচাপের দরুন আমন ধানের ক্ষতির পরিমাণ খুব বেশি হয়নি। তবুও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সব সময় প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এআরএস