রামপালে মোংলা-ঘোষিয়াখালী চ্যানেলে নাব্যতা সঙ্কটে নদী

রামপাল (বাগেরহাট) প্রতিনিধি প্রকাশিত: এপ্রিল ১৫, ২০২৪, ০২:৪২ পিএম

মোংলা-ঘোষিয়াখালী চ্যানেলের তীরভূমি ও প্লাবনভূমির হাজার একর সরকারি চরভরাটি জমি এখন স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে। দীর্ঘদিন ধরে তারা প্রশাসনের নাকের ডগার উপর এভাবেই করে আসছে মাছ চাষ। এ যেন সরকারি খাস জমি দখলের এক মহোৎসব। দেখার থাকলেও অদৃশ্য শক্তির বলে দেখে না কেউ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এ অভিযোগ করেছেন।

কথিত ভূমিহীন ও ভূমিদস্যুরা এসব জমি দখলে নিয়ে বড় বড় খামার করে মাছ চাষ করাসহ বাড়িঘর নির্মাণ করে স্থায়ী বসবাস শুরু করছে। এতে সরকারের হাজার কোটি টাকা মূল্যের জমি বেহাত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। চ্যানেলের তীরভূমি ও প্লাবনভূমির পানি প্রবাহে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় নতুন করে হুমকিতে পড়েছে খননকৃত ওই চ্যানেলটি। এতে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন এবং মোংলা বন্দর আবারও হুমকিতে পড়ার শতভাগ আশঙ্কা রয়েছে।

বাগেরহাট জেলা কালেক্টর, বাগেরহাটের পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএসহ সংশ্লিষ্টদের উদাসিনতা ও নজরদারির অভাবে এত বিপুল পরিমাণ মূল্যবান জমি বা তীরভূমি বেহাত হতে চলেছে বলে পরিবেশবাদী সংগঠন ও সচেতন মহল এমনটা মনে করেন।

জানা গেছে, মোংলা-ঘোষিয়াখালী চ্যানেলটি ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ। এটি জলবায়ু পরিবর্তন ও মনুষ্যসৃষ্ট প্রতিবন্ধকতার কারণে নাব্যতা হারায়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে প্রায় ৫শত কোটি টাকা ব্যয়ে চ্যানেলটি খনন করে সচল করা হয়।

চ্যানেলটির নাব্যতা রক্ষায় মূল চ্যানেলটির ৫ কিলোমিটার এলাকা বাদ দিয়ে উপজেলার রোমজাইপুর পয়েন্টে লুফ কাট দিয়ে আলাদা করা হয়। পাঁচ কিলোমিটার এলাকা লম্বা ও প্রায় ৩শত মিটার চওড়া নদীর মূল অংশ খনন না করায় এটি এখন শীর্ণকায় খালে পরিণত হয়েছে, যা মুজিবনগর ও রোমজাইপুর পয়েন্টের বড়দিয়া, ছোটদিয়া, কুমারখালী মৌজার কালিগঞ্জ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। চ্যানেলের অংশে ৬০ এর দশক থেকে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণে নদী ভাঙন সৃষ্টি হয়। এতে প্রায় হাজার একর জমি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এটি রক্ষণাবেক্ষণের সরকারের ভূমি ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্টদের নানান অসংগতি রয়েছে বলেও অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

নদী ভাঙনের পর চরভরাটি জমি এক শ্রেণির কথিত ভূমিহীন ও ভূমিদস্যুরা রামপালের সেটেলমেন্ট অফিস ও রামপালের সহকারী কমিশনারের অফিসের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তঞ্চকি কাগজপত্র তৈরি করে রেকর্ড করে নেন। এমনকি তারা কেউ কেউ আদালতে ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে জমি হাতিয়ে নিয়েছেন। ব্যক্তি মালিকানা জমি ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে অপর পাড়ে চর পড়লে সেটিও ভূমিদস্যুরা কাগজপত্র তৈরি করে মালিকানায় দখল করে নেয়। যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে বলে সচেতন মহল মনে করেন।

এ ব্যাপারে মোংলা-ঘোষিয়াখালী চ্যানেল রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব এম.এ. সবুর রানা বলেন, বাগেরহাট জেলা কালেক্টর, সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ এর নজরদারির অভাবে হাজার কোটি টাকা মূল্যের জমি বেহাত হয়েছে। নদীর নাব্যতা হ্রাস পাচ্ছে এবং হুমকির মুখে পড়েছে চ্যানেলটি। দ্রুতই এর পদক্ষেপ নিতে হবে।

এ বিষয়ে রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রহিমা সুলতানা বুশরা বলেন, মোংলা ঘোষিয়াখালী চ্যানেলের নাব্যতা রক্ষায় সব কিছু করা হবে। সরকারি জমি অবৈধভাবে দখলকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে জনবল সংকটে এতোদিন ব্যবস্থা নিতে পারেননি বলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

ইএইচ