তেঁতুলিয়ায় দায়সারা প্রাণিসম্পদ মেলা, দুর্ভোগে খামারিরা

তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২৪, ০২:২৬ পিএম

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় দায়সারাভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী।

উপজেলা পরিষদ চত্বরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেনারি হাসপাতালের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় দিনব্যাপী প্রাণি প্রদর্শনী মেলার। এ মেলায় বিভিন্ন এলাকা থেকে অংশ নেয়া খামিরা তাদের প্রাণি নিয়ে এসে পড়েন চরম বিপাকে।

খামারিরা বলছেন, দায়সারাভাবে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ তাদের ডেকে এনে প্রাণিদের মাত্র ১০ টাকা মূল্যের ঘাস আর এক কেজি ভূসি স্টলপ্রতি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ৫ ঘণ্টার অধিক সময় থেকে এই খাবার খেয়েই পশুদের থাকতে হয়। অনেকে আবার বাধ্য হয়ে স্টল থেকে পশু নিয়ে চলে যায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্টলগুলোতে কোনো ফ্যানের ব্যবস্থা করা হয়নি, রাখা হয়নি পানির ব্যবস্থা, খাদ্যের অভাবে প্রাণিরা ক্ষুধার্ত হয়ে ছটফট করতে থাকে। অনেকেই প্রাণির আকুতি সহ্য করতে না পেরে রাগের মাথায় তাদের গরু বাড়িতে নিয়ে যান, আবার অনেক খামারি বাধ্য হয়ে বাজার থেকে ঘাস কিনে আনতে বাধ্য হন।

মেলায় ৫০টি স্টলের কথা বলা হলেও থাকার ছিল মাত্র ৪৮টি। এছাড়া একটি স্টলে একাধিক প্রাণি থাকলেও দেয়া হয় এক আঁটি ঘাস ও এক কেজি ভূসি৷ খাবার পানি সরবরাহ না করা হলেও দেয়া হয়েছে নিম্নমানের বালতি ও গামলা। ফলে কয়েক ঘণ্টা ধরে নামমাত্র ঘাস ও ভূসি দিয়ে খামারিরা গরু ও মহিষদের স্টলে রাখে। ফলে বিভিন্ন স্টলে থাকা গরু ও মহিষসহ বিভিন্ন প্রাণি ক্ষুধায় ছটফট ও হাঁকডাক করতে দেখা যায়৷

এছাড়াও যারা প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে তারা অধিকাংশ খামারি শুধু একটি ইউনিয়নের বাকি ৬টি ইউনিয়নের খামারিদের তেমন দেখা মিলেনি। তেমন মানুষের উপস্থিতিও ছিল না।

অন্যদিকে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা খামারিরা সকাল সকাল মেলায় অংশ নিলেও তাদের দেয়া হয়নি সকালের নাস্তা৷ দুপুরের খাবারের টোকেন দিলেও দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে রাখার পর ভাতের প্যাকেট দেয়া হয় তাদের। তবে ভাতের সাথে দেয়া হয়নি পানি। ফলে পানির অভাবে ক্ষুধার্ত পেটে অনেকেই ভাত খেতে পারেননি।

এ বিষয়ে মেলায় অংশ নেয়া খামারি আব্দুর রউফ বলেন, আমও সকালে মেলায় আমার গরু নিয়ে আসলে মাত্র এক আঁটি ঘাস আর এক কেজি ভূসি ও একটি বালতি দেয়। এতো বড় একটা গরুর এই খাবারে কিছুই হয় না। নেই পানির ব্যবস্থা। ক্ষুধার্ত পেটে গরুগুলো ছটফট করায় আমি বাধ্য হয়ে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।

একই অভিযোগ করেন উপজেলা সদরের বাগানপাড়া এলাকা থেকে মহিষ নিয়ে আসা খামারি মোমিন। বলেন, আমাদের মহিষের জন্য যে খাবার দিয়েছে তা দেয়া মাত্রই শেষ হয়েছে৷ না খেয়ে মহিষগুলো ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। কেউ এসে খবরও নেয়নি৷

একই অভিযোগ করেন তেঁতুলিয়ার তেলিপাড়া এলাকার খামারি শহিদুল্লাহ। তিনি বলেন, মেলায় আসে আমাদের গরুর অবস্থা খারাপ। এভাবে অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকায় গরু যেমন ক্লান্ত, আমরাও ক্লান্ত৷

মেলায় ছাগল নিয়ে আসা তরুণ আহসান হাবিব বলেন, যারা গরু ও মহিষ মেলায় নিয়ে আসেন তাদের স্টল প্রতি ৩শ ৫০ টাকা এবং যারা ছাগল, কবুতর নিয়ে গিয়েছিল তাদের স্টল প্রতি ২শ টাকা করে বরাদ্দ ও একটা ভাতের প্যাকেট দেয়া হয়েছে৷

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ইউনুস আলীর কাছে মেলার অব্যবস্থাপনা, খামারিদের দুর্ভোগের কথা ও মেলায় অংশ নেয়া খামারিদের জন্য বরাদ্দের কথা জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্ন ক্যামেরা থেকে সরিয়ে গিয়ে মঞ্চে উঠে বসে থাকেন।

তবে আয়োজনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছেন মেলার যাবতীয় বিষয়ে তদারকি করেন এই কর্মকর্তা৷

এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি জানান, মেলার মূল উদ্দেশ্য হলো গরু, মহিষসহ বিভিন্ন প্রাণি লালনপালনে আগ্রহী হওয়া। সরকারের যে বিভিন্ন প্রণোদনা আসে এগুলো যেন তাদের অনুপ্রাণিত করতে পারি তার জন্য এই মেলা। আমরা খামারিদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনেছি, আমরা চেষ্টা করব এগুলো সমাধান করার।

ইএইচ