বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ দেশের স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে আবারও মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
সোমবার সকাল ১১টার দিকে টানা ১৫তম দিনের মতো বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেয় ছাত্র-জনতা।
এর আগে সকাল ১০টায় শেবাচিম হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের অপর একটি পক্ষ আমরণ অনশন শুরু করে।
এই পরিস্থিতিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নেওয়া পদক্ষেপ জানাতে বেলা ১১টায় তৃতীয় তলার সেমিনার কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর।
এদিকে সোমবার সড়ক অবরোধে যাত্রীদের ভোগান্তি আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কম ছিল। কুয়াকাটা থেকে আসা গাড়িগুলো সিএন্ডবি রোডের চৌমাথা থেকে নবগ্রাম রোড ঘুরে কাশিপুর চৌমাথা হয়ে হাইওয়েতে যুক্ত হচ্ছে। একইভাবে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা গামী বাসও এই বিকল্প পথে চলছে।
প্রায় ১০ কিলোমিটার বেশি পথ পাড়ি দিতে হলেও যাত্রীদের বসে থাকতে হচ্ছে না।
আন্দোলনকারীরা জানায়, তারা স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বরিশালে এসে সমস্যার সমাধানের দাবি জানিয়েছিলেন। আন্দোলনের মুখপাত্র নাভিদ নাসিফ বলেন— “২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরিশালে এসে তদন্ত করে সমস্যার সমাধান করবেন—এমন আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। কিন্তু নির্ধারিত সময় শেষ হলেও তিনি আসেননি। তাই আবারও সংবাদ সম্মেলন করে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব। দেশের প্রতিটি বিভাগ, জেলা ও উপজেলায় আন্দোলনের দুর্গ গড়ে তোলা হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মশিউল মুনীর বলেন— “আমার মূল লক্ষ্য হলো হাসপাতালের সেবার মান বৃদ্ধি ও রোগীকে সন্তুষ্ট করা। ইতোমধ্যে সেবার মান উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে হাসপাতালের সার্বিক উন্নয়নে অন্তত ৩ মাস সময় চাই।”
তিনি জানান, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, সচিব ও মহাপরিচালকের সঙ্গে একাধিকবার কথা হয়েছে, তারা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। খুব দ্রুত হাসপাতালের জন্য একটি এমআরআই মেশিন, ক্যাথ ল্যাব ও সি-আর্ম মেশিন সরবরাহ করা হবে।
শেবাচিম ১৯৬৮ সালে ৫০০ শয্যার অবকাঠামো নিয়ে চালু হলেও ৫৮ বছরেও তেমন অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৭০০ নতুন রোগী ভর্তি হন।
গত অর্থবছরে অন্তঃবিভাগে ১ লাখ ৯২ হাজার ৯৯৪ জন এবং বহিঃবিভাগে ৬ লাখ ১১ হাজার ৫৮৪ জন রোগী সেবা নিয়েছেন। তবে এক বেডে ৩ জন রোগী পর্যন্ত চিকিৎসা নিচ্ছেন, যা পরিবেশ ও সেবার মানের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
পরিচালক জানান, টাকা নেওয়ার অভিযোগে সব স্বেচ্ছাসেবী ট্রলি ম্যানকে বহিষ্কার করে সরকারি স্টাফদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গঠন করা হয়েছে ৭টি মনিটরিং টিম। টয়লেট পরিষ্কার রাখতে ৯০ জন অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ, ৮টি অটোমেটিক মেশিন, ২০টি স্প্রে মেশিন চালু এবং দরজা-জানালা মেরামতের কাজ চলছে।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আনোয়ার হোসেন বাবলু জানান— “মেডিসিন বিভাগ নতুন ভবনে স্থানান্তরের পর রোগীদের কষ্ট হচ্ছে। তাই চলতি সপ্তাহেই বিভাগটি পূর্বের স্থানে ফিরিয়ে আনা হবে। বহিঃবিভাগ নতুন ভবনে স্থানান্তরের কাজ চলছে।”
এয়ারপোর্ট থানার ওসি জাকির শিকদার জানান— “ছাত্র-জনতার ব্যানারে বাস টার্মিনালের সামনে অবস্থান নেওয়া হয়েছে। এতে ঢাকা থেকে পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলা রুটের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিকল্প পথে যাত্রীবাহী বাস শহর ঘুরে চলাচল করছে।”
ইএইচ