ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ডোবরা আকিজ জুটমিল এলাকায় চোর সন্দেহে ঘরের আড়ার সাথে ঝুলিয়ে পিটিয়েছে এলাকাবাসী।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঝুলিয়ে পিটানোর ভিডিও পাওয়ার পর বিষয়টি জানাজানি হয়। ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। এর আগে মঙ্গলবার রাতে মারপিটের এ ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের ডোবরা গ্রামের সালাম সিকদারের ছেলে আহাদ সিকদার (২৯) এলাকার চিহ্নিত চোর ও মাদক সেবনকারী। গত শনিবার মিল গেট এলাকায় মাহাবুবের মুদি দোকানে চুরি হয়। একজনের পাট চুরি হয়। একইসাথে মিলের তার চুরি হয়। এসব চুরির অভিযোগের সন্দেহে ডোবরা গ্রামের কালাম শেখ ও রবিউল শেখের সাথে আরও লোকজন মিলে মঙ্গলবার রাতে আহাদকে ধরে একটি দোকান ঘরে নিয়ে আড়ার সাথে হাত-পা ঝুলিয়ে অমানবিকভাবে পিটানো হয়। স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর আহাদকে বোয়ালমারী থানায় সোপর্দ করে রবিউল শেখ।
পরে আহাদের অভিভাবকদের অনুরোধে ভালো হওয়ার শর্তে মুচলেকা নিয়ে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ছাড়া পেয়ে আহাদ বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেয়।
এ বিষয়ে উপজেলা যুবদলের সদস্য কালাম শেখ বলেন, আহাদ এলাকার চিহ্নিত চোর এবং মাদক সেবনকারী। বিভিন্ন এলাকায় সে চুরি করে। এর আগে পাশের চিতার বাজারে একবার মোবাইলের দোকানে চুরি করে ধরা পড়ে। পরে চিতার বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাকিল মোল্যা বেদম মার দেয় তাকে। তারপরও সে চুরি ছাড়ে নাই। এক সপ্তাহে এলাকার তিন জায়গায় চুরি করেছে। তারপর এলাকার লোকজন ধরে পিটায়। আমরা উদ্ধার করে আহাদকে পুলিশে দেই।
জানতে চাইলে উপজেলা যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম বলেন, আহাদ একজন বড় ধরনের পেশাদার চোর। মিলের করা তিনটি মামলার আসামি আহাদ। চুরি করার কারণেই অতিষ্ঠ হয়ে তাকে এলাকার লোকজন ধরে এনে মারধর করে। খবর পেয়ে আমি তাকে উদ্ধার করে মোটরসাইকেলে করে থানায় দিয়ে আসি। আমি উদ্ধার না করলে যে কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। পরে আহাদের অভিভাবকদের অনুরোধে ভালো হওয়ার শর্তে থানা থেকে সে ছাড়া পায়।
আহাদের দাদি সালেহা বেগম বলেন, ওর মা নেই। আমি ওকে ছোট থেকে বড় করেছি। ও চোর না। ইজিবাইক চালায়। চোর সন্দেহে ধরে নিয়ে আড়ার সাথে ঝুলিয়ে পিটায়।
এ বিষয়ে আহাদ সিকদার চুরি করার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি একজন ইজিবাইক চালক। কালাম আর রবিউলের লোকজন আমাকে ধরে নিয়ে আড়ার সাথে দুই হাত-পা বেঁধে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পিটিয়ে চুরির স্বীকারোক্তি আদায় করে। লোহার রড, কাঠ, হাতুড়ি দিয়ে আমাকে অমানবিকভাবে পিটানো হয়। কালামদের সাথে দল না করায় তারা আমাকে ধরে নিয়ে পিটায়। পরে থানায় নিয়ে যায়। আমার অভিভাবক এবং এলাকার বড় ভাই সুমন খন্দকারের চেষ্টায় থানা থেকে ছাড়া পেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি আসি। আমার দুটি মোবাইল এবং মানিব্যাগ তারা রেখে দিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, আহাদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী কোন মামলা না করায় তাকে আদালতে চালান করা হয়। পরে আদালত থেকে সে জামিনে ছাড়া পায়। তাকে মারপিটের বিষয়টি আমাদের কেউ জানাননি।