শোক ও শ্রদ্ধায় বাকৃবিতে ‘জুলাই শহীদ দিবস’ পালিত

বাকৃবি প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৫, ০৭:১১ পিএম

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটির তত্ত্বাবধানে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালিত হয়েছে ‘জুলাই শহীদ দিবস’।

বুধবার দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত দিনব্যাপী কর্মসূচিতে ছিল শোকর‌্যালি, আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল ও ভিডিওচিত্র প্রদর্শনী।

সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন সংলগ্ন করিডোর থেকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়ার নেতৃত্বে একটি শোকর‌্যালি বের হয়। অংশগ্রহণকারীরা কালো ব্যাজ ধারণ করে র‌্যালিটি টিএসসি, কোষাধ্যক্ষ ভবন ও বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকা প্রদক্ষিণ করে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন মিলনায়তনে এসে শেষ হয়।

সকাল ১০টা ২০ মিনিটে মিলনায়তনে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদার এবং জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ময়মনসিংহ অঞ্চলের তিন শহীদের নিকটাত্মীয়—রেদোয়ান হোসেন সাগরের পিতা মো. আসাদুজ্জামান আসাদ, শহীদ মাওলানা সাদেকুর রহমানের ভাই মো. সাদ্দাম হোসেন এবং শহীদ আছির এম.টি. শারাল হকের পিতা এইচ.এম. এনামুল হক।

অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের স্মরণে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এরপর জনসংযোগ ও প্রকাশনা দফতরের পরিচালক জুলাই আন্দোলনের উপর নির্মিত তিনটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করেন।

আলোচনা পর্বে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সরাসরি অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হেলাল উদ্দীন, অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক ড. মো. আলী রেজা ফারুক এবং ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমানসহ আরও অনেকে।

শহীদ পরিবারের সদস্যরা জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের দাবি জানান এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষিত ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। এ সময় উপাচার্য তাঁদের হাতে স্মারক উপহার তুলে দেন।

প্রধান পৃষ্ঠপোষকের বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, “১৬ জুলাই একটি শোকের দিন, একটি অনুপ্রেরণার দিন; বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি একটি অবিস্মরণীয় দিন।” তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারী ছাত্র-জনতাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং আহতদের প্রতি সমবেদনা জানান। উপাচার্য বলেন, “আমরা তোমাদের ভুলিনি, ভুলব না কোনোদিন।”

তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের ঢেউ বাকৃবিতেও আছড়ে পড়েছিল। তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যাঁরা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন—সেই শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। বক্তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি জানান, বাকৃবিতে গঠিত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন ও সিন্ডিকেটের সুপারিশ অনুযায়ী ফ্যাসিস্টদের দোসরদের বিচার শিগগিরই দৃশ্যমান হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত সব অন্যায়ের বিচার করা হবে।

তিনি বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে অংশ নেওয়া নারী এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভূমিকাও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

উল্লেখ্য, জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থান উপলক্ষে বাকৃবিতে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

ইএইচ