সেহরি ও ইফতারে টক দই কেনো খাবেন?

মানতাসা তাসনিম প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২৪, ০৯:১০ পিএম

টক বা মিষ্টি দই কিন্তু আমাদের সবারই অনেক পছন্দের একটা খাবার। দই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী, তাই এটিকে সুপারফুড বলা হয়ে থাকে।

দইয়ে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, প্রোটিন এবং আরও অনেক ভিটামিন রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। ছোট থেকে বড় সবার জন্য কিন্তু দই অনেক উপকারী একটা খাবার।

এক তো গ্রীষ্মকাল তার উপর রোজা। সারাদিন রোজা রেখে ইলেকট্রোলাইটের যে ঘাটতি হয় তা ১ গ্লাস দইয়ের লাচ্ছি-মাঠা-ঘোল পূরণে সাহায্য করে থাকে।

এছাড়াও দই চিড়া, দই বড়া, দই দিয়ে ওটস, দই ভাত ও দই দিয়ে ফ্রুট সালাদ যা শুধু পেট ঠান্ডেই রাখবে না পাশাপাশি দিবে নানান স্বাস্থ্য উপকারিতা।

সেহরির খাবার তালিকায় দই রাখতে বলা হয় সব সময়। কারণ দই আমাদের অল্প অল্প করে সারাদিন এনার্জি দিতে সাহায্য করে। সারাদিন রোজা রেখে যাদের ঘন ঘন পানির পিপাসা লাগে তারা অবশ্যই সেহরিতে দই রাখবেন।

আসুন জেনে নিয়ে দইয়ের নানান স্বাস্থ্য উপকারিতা-

প্রোবায়োটিকের কথা আমরা মোটামুটি সবাই শুনেছি। প্রোবায়োটিকের প্রাকৃতিক উৎসের মধ্যে সবচেয়ে ভালোটি হলো টকদই। এটি আমাদের গাট ব্যাকটেরিয়া জন্য অনেক ভালো। দইতে উপস্থিত উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলি পরিপাক ক্রিয়াকে উন্নত করে।

দইয়ের সক্রিয় ব্যাকটেরিয়া রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং আপনার অন্ত্রকে সুস্থ রাখে। দই ভিটামিন এবং প্রোটিনসহ ল্যাকটোব্যাসিলাস যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

ইউনিভার্সিটি অব টেনেসির গবেষকদের করা একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, নিয়মিত দই খাওয়া শুরু করলে হজমক্ষমতার উন্নতি ঘটে। সেই সঙ্গে কর্টিজল হরমোনের ক্ষরণও কমে যায়। ফলে ওজন হ্রাসের সম্ভাবনা প্রায় ২২ শতাংশ বেড়ে যায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, দই খাওয়ার পর আমাদের মস্তিষ্কের ভেতরে এমন কিছু পরিবর্তন হয় যে মানসিক চাপ এবং অ্যাংজাইটি কমতে শুরু করে।

নিয়মিত দই খাওয়া শুরু করলে শরীরে পটাশিয়াম, ফসফরাস এবং আয়োডিনের ঘাটতি দূর হতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ভিটামিন বি-৫ এবং বি-১২ এর মাত্রাও বাড়তে থাকে।

রক্তে খারাপ কোলেস্টরল বা এলডি এলের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা আছে। তবে অবশ্যই লোফ্যাট হতে হবে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন (AHA) এর গবেষণা অনুসারে, দই উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

দই আপনার ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে এবং শুষ্ক ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে নিরাময় করে। দইয়ে থাকা জিংক, ভিটামিন ই এবং ফসফরাস ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করে থাকে।

অনেকেই আছেন যারা দুধ খেতে পারেন না ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স কারণে।

প্রসঙ্গত, দুধ থেকে দই হওয়ার সময় ল্যাকটোজ, ল্যাকটিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত হয়। তারা খাদ্য তালিকায় দই রাখতে পারেন।

দইয়েও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস এবং ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি। এই দুটি উপাদান দাঁত এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই অস্টিওআর্থ্রাইটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হতে না চান, তাহলে এখন থেকেই নিয়মিত দই খাওয়া শুরু করুন।

ওজন নিয়ন্ত্রণে ও ডায়াবেটিক রোগীকে অবশ্যই দইয়ে চিনি মিশানো থেকে বিরতি থাকতে হবে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা ১০০-১৫০ গ্রাম দই উপরের পুষ্টি চাহিদা পূরণে সাহায্য করবে।

লেখক: প্রধান পুষ্টিবিদ ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল ও কার্ডিয়াক সেন্টার মিরপুর।

ইএইচ