ইসলামে পরকীয়ার ভয়াবহ শাস্তি

আবু তালহা রায়হান প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২, ০৫:৫৬ পিএম

পরকীয়া একটি অমানবিক ক্রিয়া। বিকৃত মানসিকতার কাজ। সুস্থ মস্তিষ্কের কোনো নারী-পুরুষ পরকীয়ায় লিপ্ত হতে পারে না। আজকাল খবরের কাগজ হাতে নিলেই চোখে পড়ে শীর্ষ শিরোনামে গৃহবধূ ধর্ষণের খবর। গবেষণায় দেখা গেছে, গৃহবধূ ধর্ষণের পেছনে পরকীয়া সম্পর্কের যোগসূত্র অনেক। পরকীয়া সম্পর্ক থেকেই বেশিভাগ গৃহবধূ ধর্ষিতা হচ্ছে। পরকীয়া সম্পর্কে যেমন সামাজিক শৃঙ্খলা নষ্ট হয়, তেমনি পারিবারিক সম্পর্কে ফাটল ধরে। ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অমিল দেখা দেয়। একসময় তাদের বৈবাহিক জীবনে ভাঙন সৃষ্টি হয়। পরকীয়ার বিষফল মানবজাতি দীর্ঘকাল থেকে ভোগ করে আসছে। পরকীয়ার মতো জঘন্যতম অপরাধের অসারতা নিজের বিবেককেও ধিক্কার জানায়। নিজের স্ত্রী অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কে লিপ্ত হোক, কিংবা নিজের স্বামী অন্য কোনো মহিলার সঙ্গে মেলামেশা করুক এটা কোনো সুস্থ বিবেকবানই মেনে নিবেন না। ইসলাম পরকীয়া-ব্যভিচারকে সমর্থন করে না। ইসলাম মানবিক ধর্ম। ইসলাম নীতি ও আদর্শের ধর্ম। ইসলাম হালাল তরিকায় নারী-পুরুষের মেলামেশার সুযোগ দিয়েছে। বৈধ সম্পর্কের মধ্য দিয়েই ইসলাম পৃথিবীতে মানুষের জৈবিক চাহিদা পূরণকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ইসলামে পরকীয়া-ব্যভিচার অবৈধ সম্পর্কে নারী-পুরুষের মেলামেশাকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। নারী-পুরুষ সবাইকেই চরিত্র সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ’Ñ (সুরা বনি ইসরাইল-৩২)।

ব্যভিচারকারীদের শাস্তি হিসেবে অন্য একটি আয়াতে আল্লাহপাক এরশাদ করেন, ‘ব্যভিচারকারী নারী ও পুুরুষ উভয়কে ১০০টি করে বেত্রাঘাত করো’ (সুরা নুর-২)। এটা অবিবাহিত জিনাকারীর শাস্তি। আর পরকীয়া কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে বিবাহিত নারী-পুরুষ যদি জিনায় লিপ্ত হয়, তাদের জন্য ইসলামে আরও ভয়াবহ শাস্তি রয়েছে। পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে তাদের মৃত্যুদ-ের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরকীয়া-ব্যভিচারের ভয়ানক শাস্তির কথা বর্ণনা করে বলেন, ‘হে মানব জাতি, তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ করো। ব্যভিচারকারীদের জন্য ছয়টি কঠিন শাস্তি রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে ও তিনটি আখেরাতে প্রকাশ পাবে। যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছেÑ তার চেহারার উজ্জ্বলতা বিনষ্ট হবে, তার আয়ূকাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং তার দরিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে। আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছেÑ সে আল্লাহর অসন্তোষ, কঠিন হিসাব ও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে’Ñ (বায়হাকি-৫৬৪)।

হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে তার মুখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের জামিনদার হবে; আমি তার বেহেশতের জামিনদার হবেন (বোখারি-৭৬৫৮)।

আমাদের সমাজে ব্যাপকহারে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠছে। এসব পরকীয়া সম্পর্কে প্রবাসীদের স্ত্রীরা বেশি লিপ্ত হয়। শহর কিংবা গ্রাম সবখানেই এখন চরমভাবে পর্দার বিধান লঙ্ঘন করা হচ্ছে। ফলে কখনও দেবরের সঙ্গে, আবার কখনও পুত্রের (স্বামীর ভাইয়ের ছেলে) সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠছে। ইসলামে দেবর ও পুত্রের কাছে যাওয়ার লাগাম টেনে ধরা হয়েছে।

হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সাবধান! তোমরা নির্জনে নারীদের কাছেও যেও না। এক আনসার সাহাবি বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, দেবর সম্পর্কে আপনার নির্দেশ কী? উত্তরে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘দেবর তো মৃত্যুর সমতুল্য (এখানে ‘মৃত্যু’ বলতে হাদিস গবেষকরা হারামের কথা বলেছেন)’(মুসলিম-২৪৪৫)।

তাই আসুন, পরকীয়া মুক্ত জীবন গড়ি। কোরআন-হাদিস মেনে চলি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়াত দান করুন ,আমিন।

আরইউ