Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪,

প্রেস ক্লাবে রাতের আঁধারে হঠাৎ শিক্ষক-শ্রমিকদের লাঠিপেটা!

ডিসেম্বর ৭, ২০২০, ০৮:১০ এএম


প্রেস ক্লাবে রাতের আঁধারে হঠাৎ শিক্ষক-শ্রমিকদের লাঠিপেটা!

বিভিন্ন দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষক ও পোশাক শ্রমিকদের রাতের আঁধারে লাঠিপেটা করে সরিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

সোমবার (৭ ডিসেম্বর) ভোররাত সাড়ে তিনটা থেকে চারটার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।

আন্দোলনকারীরা জানান, পুলিশের লাঠিচার্জে বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও পোশাক শ্রমিক আহত হয়েছেন। কারও ভেঙেছে হাত, কেউবা চোট পেয়েছেন মাথা, কপাল, হাঁটু কিংবা পিঠে।

আরো পড়ুন: করোনা আক্রান্ত শিক্ষামন্ত্রী

কয়েকজন শিক্ষক কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে আসছিলাম। আমাদের অবস্থান সরকারবিরোধী না। গত ২০-২২ বছর ধরে চাকরি করেও বেতন-ভাতা পাইনি। সরকারের কাছে দু’বেলা খাওয়ার মতো বেতনের দাবিতে এসেছিলাম। কিন্তু আমাদেরকে লাঠিপেটা করে তাড়িয়ে দেয়া হলো।

নীলফামারীর একটি স্বতন্ত্র এবতেদিয়া মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হাফিজুল ইসলাম জানান, ভোরের দিকে হঠাৎ বাঁশির শব্দ ও চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুলিশের লাঠির আঘাত লাগে কপাল ও পায়ে।

তিনি বলেন, ২২ বছরের চাকরিজীবনে বিনাবেতনে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে পড়াশোনা করিয়েছি। এই তার প্রতিদান। বাড়িতে গিয়ে পুলিশের এই অত্যাচারের কথা বলতেও পারব না। এ বড় লজ্জা।

আরো পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর সব ম্যুরালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হাইকোর্টের নির্দেশ

প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ২০১৮ প্যানেল প্রত্যাশী শামীম আহসান জানান, তারা গত ৫৮ দিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন। তাদের কোনো সহিংস কর্মসূচি ছিল না। ভোরবেলার মারধরে বেশ কয়েকজন শিক্ষক নেতা মারাত্মক চোট পেয়েছেন।

প্যানেল প্রত্যাশী আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু হাসান বলেন, ভোররাতে আমাদের প্রেসক্লাবের সামনে অতর্কিত হামলা করে পুলিশ। দুপাশ থেকে তারা পানি মেরে লাঠিপেটা করতে থাকে। কোন কথা না বলেই তারা আঘাত করে। এরপর আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ি। আমাদের প্রায় ১০ জন আহত হয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, আমরা এর প্রতিবাদে আজ বিকালে সংবাদ সম্মেলনের পরিকল্পনা করছি।

বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার আন্দোলনকারী শিক্ষক কাজী মোখলেছুর রহমান জানান, রাতে হঠাৎ সেখানে পুলিশ এসে তাদের গায়ে পানি মারে। এরপর লাঠিপেটা করতে থাকে।

তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডের আহত শ্রমিক কামাল মৃধা জানান, পুলিশ ঘুমন্ত শ্রমিকদের কাউকে কাউকে লাথিও মারে।

আরো পড়ুন: বাবুনগরী, ফয়জুল ও মামুনুলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আবেদন

এওয়ান গার্মেন্টসের একজন কর্মী বলেন, সারারাত গাড়ির শব্দে এমনিতেই ঘুম আসে না। গভীর রাত পেরিয়ে ভোরের দিকে যখন একটু ঘুম আসছিল তখনই পুলিশ অতর্কিত লাঠিচার্জ করে। বাছ-বিচার ছাড়াই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে করা হয় মারধর। শত শত শিক্ষক ও শ্রমিকের আহাজারিতে আশেপাশের এলাকায় রাতের নিস্তব্ধতা ভাঙে। সরকারের কাছে দু’বেলা খাওয়ার মতো বেতনের দাবিতে এসেছিলাম। কিন্তু আমাদেরকে লাঠিপেটা করে তাড়িয়ে দেয়া হলো।

তবে পুলিশ লাঠিপেটার অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, আন্দোলনকারীদের উঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

এদিকে এদিন ভোর সোয়া ৬টার দিকে সচিবালয় সড়ক থেকে এগিয়ে প্রেসক্লাব মোড়ে যেতেই দেখা মেলে শতাধিক পুলিশ সদস্যের। সংশ্লিষ্ট এলাকার রাস্তা ও ফুটপাতে অবস্থান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তারা। সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে আন্দোলনকারীদের পোস্টার, ব্যানার এবং বিভিন্ন কাগজপত্র।

[media type="image" fid="100248" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

শাহবাগ থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) কামাল উদ্দীন মুন্সী জানান, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে আন্দোলনরত ব্যক্তিদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার নেই।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই স্ব স্ব দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করে আসছিলেন স্বতন্ত্র এতবেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ২০১৮ প্যানেল প্রত্যাশী, তাজরিন গার্মেন্টস ও এওয়ান গার্মেন্টসে কর্মরত শত শত মানুষ।

আমারসংবাদ/জেআই