আমার সংবাদ ডেস্ক
জুন ৩০, ২০২৫, ১২:৪৮ পিএম
কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলা তুলে নিতে চাচ্ছেন নির্যাতনের শিকার এক নারী। তিনি জানিয়েছেন, পরিবারের সঙ্গে পরামর্শ না করেই মামলা করেছিলেন এবং হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে যেন কোনো সংঘাত না হয়, সে কারণেই তিনি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সোমবার নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ভুক্তভোগী এই নারী বলেন, “হের (ফজর আলী) তো অবস্থা খারাপ। বাঁচে না মরে, বলা যায় না। সে যদি এলাকায় হাঁটা-চলা করতো, তাহলে মামলা করে কাজ হতো। এখন ওর মরার অবস্থা। আমরা মামলাটা উঠাতে চাই, দেশে শান্তি রাখতে চাই। হিন্দু-মুসলমান শান্তিতে থাকুক।”
তিনি আরও বলেন, “আমার মান-সম্মান সব গেছে। আমি দুটি শিশুসন্তান নিয়ে বাঁচতে চাই। দশজনের শান্তি চাই, দেশের শান্তি চাই। আমার যা হওয়ার তো হয়ে গেছে। আমি মামলা তুলবো। আমাকে কেউ চাপ দেয়নি, টাকার লোভও দেখায়নি। আমার স্বামী বলেছে— ‘তোর সম্মান যা যাওয়ার গেছে, এখন মামলা করেও সেই সম্মান ফিরে পাবি না।’”
ফজর আলীর সঙ্গে পরিচয় ও ঘটনার পেছনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ওই নারী জানান, তার মা ফজর আলীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন। ওই পাওনা টাকার বিষয়ে ফজর আলী মাঝেমধ্যে ফোন দিতেন, যা নিয়ে তার ছোট ভাই সন্দেহ পোষণ করতেন। একদিন ফজর আলীর ভাই এসে তার মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলেন। পরে গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে সেই ঘটনা নিষ্পত্তি হয়।
ঘটনার দিন সম্পর্কে ওই নারী বলেন, “গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ফজর আলী আমাদের বাড়ির সামনে এসে দরজা খুলতে বলেন। আমি বলি, আমার বাবা-মা পাশের বাড়ির পূজার অনুষ্ঠানে গেছে। আমি আর দুই সন্তান ঘরে ছিলাম। তিনি কৌশলে দরজা খুলে ঘরে ঢুকে আমাকে নির্যাতন করেন। কিছুক্ষণ পর ৭-৮ জন এসে ফজর আলীকে মারধর করেন। এরপর তারাও আমাকে মারধর করে এবং ভিডিও করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়।”
প্রসঙ্গত, গত শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক নারীর ওপর নির্যাতনের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিষয়টি সবার নজরে আসে। ঘটনার সূত্রপাত হয় বৃহস্পতিবার রাতে মুরাদনগরের বাহেরচর পাঁচকিত্তা গ্রামে। পরদিন শুক্রবার ওই নারী ফজর আলীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন।
এ ঘটনায় ভাইরাল ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন— আবদুল হান্নানের ছেলে মো. আলী সুমন, জাফর আলীর ছেলে রমজান, মো. আলমের ছেলে আরিফ এবং তালেম হোসেনের ছেলে অনিক। আদালত তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে অভিযুক্ত ফজর আলী বর্তমানে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান জানান, “পুরো ঘটনাটি তদন্তাধীন। ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ফজর আলীর চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র পেলে তাকেও আদালতে তোলা হবে।”
ইএইচ