পরিবারের অভাব অনটন মেটাতে যে হাটে বিক্রি হয় শ্রম

আব্দুল্লাহ আল-আমিন, নকলা, (শেরপুর) প্রকাশিত: মে ১৬, ২০২৩, ০৮:৪৮ পিএম
পরিবারের অভাব অনটন মেটাতে যে হাটে বিক্রি হয় শ্রম

ফজরের নামাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জড়ো হতে থাকে নানা বয়সী মানুষ। শুরু হয় সারা দিনের জন্য নিজেদের শ্রম বিক্রির অপেক্ষা। কাজ পেলে পরিবারের মুখে খাবার জোটে, না হলে অনাহার-অর্ধাহার।

প্রতিবছর সাধারণত এপ্রিলের শেষ ভাগ থেকে শেরপুরের নকলায় বোরো ধান কাটা শুরু হয় যা চলে একটানা মে মাস পর্যন্ত। এরই ধারাবাহিকতায় নকলা উপজেলায় ইতিমধ্যে বোরো ধান কাটা বেশ কিছু দিন আগে শুরু হয়েছে। ধান কাটা শুরু হওয়ায় স্থানীয় শ্রমিকের আকাল দেখা দিয়েছে। তাই বরাবরের মতো চলতি মৌসুমেও দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার শ্রমিকরা নকলায় এসেছেন।

তাদের মধ্যে কথা হয় ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ, বকশিগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, রৌমারী, রাজিবপুর, কাউনের চরসহ বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে আগত বেশ কয়েকজন শ্রমিকদের সাথে। তারা জানান, নিজেদের এলাকায় এখনও বোরো ধান কাটা শুরু হয়নি। তাই রুজি রোজগারের প্রয়োজনে কাজের সন্ধানে জেলার নকলা উপজেলায় এসেছেন তারা।

যথারীতি তারা নকলা হলমোড় এলাকায় অবস্থান নেন শ্রম বিক্রি করার জন্য। দূর-দুরান্ত থেকে অটোরিকশা, ইজিবাইক, লেগুনা, ভ্যান গাড়ি করে ফজরের আজানের পরপর শ্রমিকরা এখানে এসে জমায়েত হয়। সেই সঙ্গে নকলাসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে গৃহস্থ, খামারি ও ঠিকাদাররা আসেন এখানে। এরপর চলে দরদাম, প্রত্যেকেই তাদের চাহিদামত শ্রমিক নিয়ে চলে যায় নিজ নিজ গন্তব্যে। সকাল ৫টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে সমাপ্তি ঘটে এ শ্রম বাজারের।

সরেজমিনে দেখা যায়, শ্রমিকরা কেউ বসে আছেন, কেউবা দাঁড়িয়ে। কারো হাতে ধান বহনের জন্য বাঁশের তৈরি বাইক, আবার কারো হাতে ব্যাগ, এদের প্রায় সবাই এসেছেন উত্তরবঙ্গ থেকে। এখানে এক মন ধান বিক্রি করেও যেনো একজন শ্রমিকের দাম হচ্ছে না। তবে শ্রমিকের দাম আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে।

জানা গেছে, কাজ করানোর জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি প্রয়োজন অনুসারে তাদের সঙ্গে চুক্তি করেন। সারা দিন কাজ শেষে নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক নিয়ে তাদের ফিরতে হয়। তবে অনেকেই আছেন, যারা সারা দিনেও কোনো কাজ পান না। বিশেষ করে যাদের বয়স একটু বেশি, তাদের সহজে কেউ কাজে নিতে চায় না। 

গিয়াস উদ্দিন নামে এক গৃহকর্তা জানান, প্রথমদিকে তাকে ১২’শ টাকা দৈনিক মজুরিতে টানা কয়েকদিন ধান মাড়াইয়ের জন্য একজন শ্রমিক কিনতে হয়েছে।  পরবর্তীতে ১ হাজার টাকা এখন ৮-৯’শ টাকায় শ্রমিক নিতে পারছেন তিনি।

আরএস