উপকূলীয় জেলা বরগুনার তিনটি সংসদীয় আসন পুনর্বহালের দাবিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলার প্রায় ১২ লাখ মানুষ। একাধিকবার আবেদন জানানো হলেও নির্বাচন কমিশন আসন পুনর্বিন্যাস না করায় স্থানীয় জনগণের মধ্যে হতাশা ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ জেলা বরগুনা ছয়টি উপজেলা নিয়ে গঠিত—বরগুনা সদর, আমতলী, তালতলী, বেতাগী, পাথরঘাটা ও বামনা। জেলার আয়তন ১,৮৩১.৩১ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ১২ লাখ ১০ হাজার। ভৌগোলিকভাবে পায়রা (বুড়িশ্বর) ও বিষখালী নদী বরগুনাকে পূর্ব ও পশ্চিম ভাগে বিভক্ত করেছে।
স্বাধীনতার পর বরগুনায় তিনটি সংসদীয় আসন ছিল— বরগুনা-১ সদর ও বেতাগী, বরগুনা-২ পাথরঘাটা ও বামনা ও বরগুনা-৩ আমতলী ও তালতলী।
তবে ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই তিনটি আসন কমিয়ে দুটি করা হয়— বরগুনা-১ সদর আমতলী ও তালতলী, বরগুনা-২ পাথরঘাটা বেতাগী ও বামনা।
এর ফলে জেলার উন্নয়ন কার্যক্রমে বিভ্রান্তি ও বৈষম্য তৈরি হয় বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
বর্তমানে বরগুনা-১ আসনে ভোটার সংখ্যা ৫,৫৭,৮৭৪ জন এবং বরগুনা-২ আসনে ৩,৭০,৫৩০ জন।
শুধু আমতলী ও তালতলীতেই ভোটার সংখ্যা ২,৯২,১৩৩ জন। দুই উপজেলার মাঝে প্রবাহিত প্রায় ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ পায়রা নদীর প্রস্থ প্রায় ৪ কিলোমিটার হওয়ায় নির্বাচনের সময় প্রশাসনিক জটিলতা দেখা দেয়। একই সমস্যা রয়েছে বিষখালী নদীঘেঁষা অন্যান্য উপজেলাতেও।
এই প্রেক্ষাপটে বরগুনা জেলায় তিনটি আসন পুনর্বহালের দাবিতে নির্বাচন কমিশনে পাঁচটি আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু খসড়া তফসিলে তা অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় স্থানীয় জনগণের ক্ষোভ আরও বেড়েছে। ইতোমধ্যে বরগুনা প্রেসক্লাব, জেলা টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরাম, মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম, সাংবাদিক ইউনিয়ন ও রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে।
তারা জানান, নির্বাচন কমিশন দাবি মেনে না নিলে লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এ বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ জানান, ২০০৮ সালে রাজনৈতিক সুবিধা দিতে বরগুনা-৩ আসন বিলুপ্ত করা হয়েছিল। এবার কমিশনের প্রতি ছিল আশাবাদ, কিন্তু আবারও বরগুনাবাসীর সঙ্গে অবিচার করা হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, “নির্বাচন কমিশনের উচিত জনগণের কথা বিবেচনায় নিয়ে তিনটি আসন পুনর্বহাল করা। তিনটি আসন ছাড়া জেলার দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূল ধারায় আনা সম্ভব নয়।”
সচেতন নাগরিকদের মতে, নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে থেকে বরগুনাবাসীর ন্যায্য দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে।
বিএনপি’র প্রয়াত মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের সাবেক এপিএস ওমর আব্দুল্লাহ শাহীন বলেন, “বরগুনার সবচেয়ে অবহেলিত অঞ্চল আমতলী-তালতলী। তাই এ অঞ্চলের মানুষের উন্নয়নের জন্য ‘বরগুনা-৩’ আসন পুনর্বহাল করা অত্যন্ত জরুরি। প্রয়োজনে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হব।”
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট গাজী মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “ভৌগোলিক ও প্রশাসনিক বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল তিনটি আসন পুনর্বহাল করা। ২০০৮ সালের ২৯ এপ্রিল প্রকাশিত সরকারি গেজেটে বরগুনা-৩ আসন বিলুপ্তির কোনো যৌক্তিকতা নেই। তারপরও গেজেট উপেক্ষা করে জনগণের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “বরগুনার মানুষ এখনো আশায় আছেন—চূড়ান্ত তফসিলে পূর্বের তিনটি আসন পুনর্বহাল করা হবে।”
ইএইচ