কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মবিরতি

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ৫, ২০২৪, ০৬:০৬ পিএম
কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মবিরতি

চাকুরি বৈষম্য দুর করণ ও নানা অনিয়মের অবসান চেয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করছে কুষ্টিয়া পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

রবিবার (৫ মে) সকাল ৯টা থেকে কুষ্টিয়া পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজারের কার্যালয়ে এ কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। তবে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল রেখেছেন তারা।

কর্মবিরতিতে অংশ  গ্রহণকারীদের ভাষ্যমতে, সারাদেশের ৮০টি পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৪০ হাজার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপরে বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড এর চাকুরি বৈষম্য ও নানা নির্যাতনের প্রতিবাদ স্বরূপ চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়। যার কারণে বেশ কয়েকজনকে বদলি ও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আমাদের পেশাগত সমস্যা সমাধানের জন্য রবিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে ৭৯টি পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

কুষ্টিয়া পল্লীবিদ্যুৎ সমিতিতে রবিবার দেখা যায়, সকাল থেকেই সমিতি কার্যালয়ে জেলার ৭টি এলাকার জোনাল অফিস, সাব-জোনাল অফিস, এরিয়া অফিস ও অভিযোগ কেন্দ্রের প্রায় ৭ শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কুষ্টিয়া প্রধান কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। শুধুমাত্র বিদ্যুৎ সরবরাহবাদে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন তারা। যার ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের।

কুষ্টিয়া পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা যায়, জেলার মোট গ্রাহকের সংখ্যা ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৪শ ১২জন। ১৭টি উপকেন্দ্রের মাধ্যমে জেলার প্রান্তিক এলাকায় বিদ্যুৎ সেবা দিলেও রবিবার থেকে বন্ধ করেছে দিয়েছে কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

রবিবার সকাল ৯টায় কুষ্টিয়া পল্লীবিদ্যুৎ সমিতিতে ভুতুড়ে বিল সংশোধনের জন্য আসেন কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়া এলাকার রিকশা চালক কালু মন্ডল। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমি ঢাকায় রিকশা চালায়। গত মাসে আমার ১৫ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু অফিসের লোকজন ভুল করে আমার বিলে লিখেছে ২১৫ ইউনিট। এটা ঠিক করার জন্য এই অফিসে আমি ঢাকা থেকে ৪দিন এসেছি। কিন্তু কোন সমাধান পায়নি।

রবিবার (৫ মে) সকাল ৯টায় এসেছি এখন বেলা ২টা বাজে কোন সমাধান পায়নি। কোন অফিসারই কাজ করছেন না।

রিকশা চালক কালুর মতো এমন বেশ কয়েকজন গ্রাহক সকাল থেকে নানা অভিযোগ নিয়ে এসে ঘুরে যেতে দেখা গেছে।

কুষ্টিয়া পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির এজিএম (প্রশাসন) হাসানুজ্জামান জানান, আমাদের উপরে বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড নীরবে নির্যাতন করে আসছে। আমাদের অধিকার থেকে আমাদের বঞ্চিত করছে। তাই আমরা আমাদের অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মবিরতি অব্যাহত রাখবো। আমরা ১৬ দফা দাবি নিয়ে এ কর্মবিরতি পালন করছি।

কুষ্টিয়া পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির এক কর্মচারী জানান, দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের অফিসের অব্যবস্থাপনায় চলছে। আমরা কোন বৈষম্য চাই না। আমরা একটা সমাধান চাই। এজন্য আমরা সকল কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করছি। মাঠ পর্যায়ে শুধু বিদ্যুৎ ছাড়া সকল গ্রাহক সেবা বন্ধ রয়েছে, আগামীতে সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

গ্রাহকরা বলছেন, নানা অনিয়ম যে পল্লীবিদ্যুতের নিয়ম সেখানে এসব কর্মবিরতি একটা বানোয়াট ইস্যু। গ্রাহকরা প্রতিদিনই সেবা নিতে এসে হয়রানির স্বীকার হয়, এগুলো দেখার কেউ নাই। তবে আজ থেকে নতুন একটা ইস্যু শুরু হয়েছে। এগুলো ফাঁকিবাজির একটা ধান্দা ছাড়া কিছু না। ভাগ বাটোয়ারায় কম হওয়ার কারণে এমনটা হচ্ছে বলছেন সাধারণ গ্রাহকরা।

কুষ্টিয়া পল্লিবিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার ইসমাত কামালকে একাধিক প্রশ্ন করেও কোন কথা বলেননি। সার্বক্ষণিক মোবাইল নিয়ে ফেসবুকে ব্যস্ত ছিলেন তিনি।

গ্রাহক সেবা ভোগান্তিতে কেনো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এত গ্রাহক তো ভোগান্তি স্বাভাবিক বিষয় এ নিয়ে কথা বলার কিছু নাই।

কুষ্টিয়া পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির সভাপতি শাকিলুর রহমান জানান, কর্মবিরতির ফলে গ্রাহকরা ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন। বিষয়টি দুঃখজনক হলেও সত্য। গ্রাহকদের হয়রানি কিছুটা কমেছে বলেও দাবি করেন এই সভাপতি।

আরএস