গ্রীষ্মের উপহার ‘খৈয়া’, স্বাদে-রোজগারে-ঔষধে সেরা

শালিখা (মাগুরা) প্রতিনিধি: প্রকাশিত: এপ্রিল ৩০, ২০২৫, ১১:৩০ এএম
গ্রীষ্মের উপহার ‘খৈয়া’, স্বাদে-রোজগারে-ঔষধে সেরা

মাগুরার শালিখা উপজেলার যশোর-মাগুরা মহাসড়কের রামকান্তপুর থেকে শতখালী পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে সারি সারি খৈয়া গাছ। গ্রীষ্মকালে ভোর না হতেই গাছগুলোর নিচে ভিড় করেন আশপাশের এলাকার শিশুরা। কাঁধে ব্যাগ, হাতে লম্বা কুটা (লাঠির আগায় বাঁধা খৈয়া পাড়ার যন্ত্র) আর চোখে স্বপ্ন—এই খৈয়া থেকেই আসছে তাদের হাত খরচ, এমনকি কখনো কখনো পরিবারের জন্যও কিছু টাকা।

সকালের নরম রোদে শিশুরা কেউ গাছের নিচে দাঁড়িয়ে, কেউবা গাছ বেয়ে উঠে পড়েছে মগডালে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই খৈয়া পাড়ে তারা। সংগ্রহ করা ফলগুলো বিক্রি হয় স্থানীয় বাজার বা পথচারীদের কাছে। পলিথিনে বেঁধে প্রতি পটলা বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। দিনে আয় হয় দুই থেকে তিন শ টাকা পর্যন্ত।

স্থানীয় কিশোর আহাদ মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে এখানে এসে খৈয়া পাড়ি। দেড়-দুই কেজি হয়। বিক্রি করে নিজের খরচ চালাই, মাঝে মাঝে বাবার হাতেও ২০০ টাকা তুলে দিই।’

আরেকজন কিশোর তামিম হাসান বলেন, ‘পাশের একটা ইটভাটায় কাজ করতাম, কিন্তু ভালো টাকা মেলে না। তাই এখন খৈয়া পেড়ে রোজগার করি।’

রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে খৈয়া খাচ্ছিলেন স্কুলশিক্ষক আবদুল ওহাব বিশ্বাস। তিনি বললেন, ‘প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় এই পথ দিয়ে যাই। শিশুদের কাছ থেকে কখনো কখনো খৈয়া নিই। ফলটা যেমন মিষ্টি, তেমনি ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়।’

স্থানীয়দের ভাষায়, খৈয়া শুধু সুস্বাদুই নয়, ঔষধি গুণেও অনন্য। বৈজ্ঞানিক নাম Pithecellobium dulce, এটি Fabaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। গাছের ছাল আমাশয়, ডায়রিয়া ও যক্ষারোগে উপকারী। বীজ আরাম দেয় আলসারে, পাতা ব্যবহৃত হয় কফ নিরসন ও পিত্তাশয়ের রোগে।

খৈয়া গাছের পাতাগুলো অনেকটা কাঞ্চনের মতো, ফল পেঁচানো জিলাপির মতো দেখতে। পাকা ফল ফেটে বের হয় হলুদাভ সাদা মিষ্টি অংশ। মাটিতে পড়ে থাকা ফলেও শিশুরা পায় আনন্দ।

তবে বাণিজ্যিকভাবে ফলটি চাষ কিংবা বাজারজাত করার উদ্যোগ নেই। অথচ এটি যেমন পরিবেশবান্ধব, তেমনি গ্রামীণ শিশুদের কাছে একধরনের মৌসুমি কর্মসংস্থানের নাম। শুক্রবার বা ছুটির দিনে খৈয়া গাছের নিচে বাড়ে জনসমাগম, দেখা যায় পরিবারের বড়রাও শিশুদের সঙ্গে খৈয়া সংগ্রহে ব্যস্ত।

রাস্তার ধারে জন্ম নেওয়া এই ফলগাছগুলো প্রকৃতিকে যেমন রক্ষা করছে, তেমনি দিচ্ছে শিশুদের মুখে হাসি, পরিবারের ব্যয় মেটানোর সুযোগ।

বিআরইউ