ময়মনসিংহে ন্যায্য মজুরি ও ফসলের দাম থেকে বঞ্চিত কৃষকরা

আব্দুল্লাহ আল আমীন, ময়মনসিংহ প্রকাশিত: মে ২, ২০২৫, ০৭:৫৭ এএম
ময়মনসিংহে ন্যায্য মজুরি ও ফসলের দাম থেকে বঞ্চিত কৃষকরা

আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে যখন বিশ্বজুড়ে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও সম্মান নিয়ে আলোচনা চলছে, তখন ময়মনসিংহের কৃষিজীবীরা বেঁচে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত। মাঠে-ঘাটে দিনভর শ্রম দিয়ে দেশের খাদ্য উৎপাদনে মুখ্য ভূমিকা রাখলেও, এখনও ন্যায্য পারিশ্রমিক ও ফসলের মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক ও কৃষিশ্রমিকরা।

ময়মনসিংহ সদর, ফুলবাড়িয়া, নান্দাইল, তারাকান্দা ও গফরগাঁওসহ জেলার বিভিন্ন কৃষিপ্রধান অঞ্চলে ঘুরে দেখা গেছে, চাষিদের লোকসানের চিত্র প্রকট। এক মণ ধান উৎপাদনে খরচ পড়ছে গড়ে ১২০০ টাকা, অথচ বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৯০০ থেকে ১০০০ টাকায়। এতে উৎপাদন খরচই উঠছে না, উল্টো ঋণের বোঝা বাড়ছে।

পাশাপাশি মৌসুমি কৃষিশ্রমিকরাও ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন না। বর্তমানে একজন শ্রমিক দৈনিক মজুরি পান ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা, যার মধ্যে সার, কীটনাশক, পানি, হালচাষসহ অন্যান্য ব্যয় বাদ দিলে হাতে কিছুই থাকছে না। নারী শ্রমিকদের অবস্থা আরও করুণ। অনেক সময় কাজ করেও তারা সময়মতো মজুরি পান না বা পুরো অর্থ পান না।

ফুলবাড়িয়ার কৃষক রমিজ উদ্দিন বলেন, “সারা বছর খেটে ধান ফলাই, কিন্তু ফসল বিক্রি করে খরচই উঠাতে পারি না। লাভ তো দূরের কথা।”
নারী শ্রমিক রেখা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, “পুরুষের মতোই কাজ করি, কিন্তু মজুরি পাই কম। নারী বলেই যেন বঞ্চনার শিকার হতে হয়।”

কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষি খাতকে টিকিয়ে রাখতে হলে কৃষক ও কৃষিশ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সরকারের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ—ফসলের ন্যায্য দাম নির্ধারণ, সরাসরি সরকারি ক্রয়, শ্রমিকদের মৌসুমি নিরাপত্তা, এবং শ্রম আইন কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন।

শ্রমিক দিবসে প্রতীকী শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা যতই হোক না কেন, বাস্তবে কৃষকের দুঃখ দূর করতে হলে চাই বাস্তবভিত্তিক ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা।

ইএ্ইচ